আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন পুতিন

  18-03-2024 11:12AM



পিএনএস ডেস্ক: বিজয়ের ব্যাপারে কখনোই কোনো সন্দেহ ছিল না, এমন এক নির্বাচনে আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আংশিক ফলাফলে সোমবার দিনের শুরুতেই তার বিজয় নিশ্চিত দেখা যায়। এ নিয়ে খুব সহজেই তিনি পঞ্চম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন। নির্বাচনে তাকে শুধুমাত্র ‘টোকেন’ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ সময়ে কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে বিরোধীদের। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি।

অল্প কিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভ হলেও রোববার দুপুর নাগাদ ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাশিয়ানদের বেশ ভিড় দেখা যায়। এদিন ছিল ভোট গ্রহণের শেষ দিন। এই ভূমিধস বিজয় আরও জোর দিয়ে এটাই বুঝিয়ে দেয় যে, রাশিয়ার এই নেতা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণের চেয়ে কম কিছু গ্রহণ করবেন না। তিনি প্রায় সিকি শতাব্দীর শাসনকে আরও ছয় বছরের জন্য প্রসারিত করছেন। ভোটের প্রাথমিক ফলকে তার প্রতি জনগণের আস্থা এবং প্রত্যাশা হিসেবে বর্ণনা করেছেন পুতিন।

তবে সমালোচকরা একে দেখছেন নির্বাচনের আগেই নির্ধারিত ছবির একটি প্রতিচ্ছবি হিসেবে।

ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে এক মিটিংয়ে পুতিন বলেছেন- অবশ্যই আমাদের সামনে প্রচুর কাজ। আমি সবাইকে এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, যখন আমরা সুসংহত ছিলাম, তখন আমাদেরকে কেউই কখনো ভয় দেখাতে, আমাদের ইচ্ছা ও আমাদের আত্মবিবেককে দমন করতে সক্ষম হয়নি। তারা যেমন অতীতে ব্যর্থ হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে।

অন্যদিকে এক্সে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন লিখেছেন, ইউক্রেন ভূখণ্ডে বেআইনিভাবে নির্বাচন করার পর রাশিয়ায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এতে ভোটারদের কোনো পছন্দ বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল না বললেই চলে। কোনো নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমনটা হয়, এটা তেমন ছিল না।

ভ্লাদিমির পুতিনের বা ইউক্রেনে তার যুদ্ধের প্রকাশ্য কোনো সমালোচনা হলেই তার কণ্ঠ চেপে ধরা হয়েছে। স্বাধীন মিডিয়ার গলা টিপে ধরা হয়েছে। পুতিনের তীব্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অ্যালেক্সি নাভালনি গত মাসে আর্কটিক কারাগারে মারা গেছেন। অন্য সমালোচকদের পাঠানো হয়েছে জেলে অথবা নির্বাসনে। এসব ঘটনার পরও ভোটারদের সামনে প্রার্থী বেছে নেয়ার মতো কার্যত কোনো প্রার্থীই ছিলেন না। নির্বাচনের নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক ছিল চরমভাবে সীমিত।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ভোট গণনা হয়ে গেছে। তাতে পুতিন পেয়েছেন শতকরা প্রায় ৮৭ ভাগ ভোট।

পুতিন বা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যেসব মানুষ অসন্তুষ্ট তাদেরকে কঠোর নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে অ্যালেক্সি নাভালনির সহযোগীরা ভোট কেন্দ্রে রোববার দুপুরের দিকে যাওয়ার আহ্বান জানান। রাশিয়া ও বিশ্বজুড়ে এর দূতাবাসে তাদের এই ভিড় যাতে বিশাল দেখায়। এর মধ্যে ছিলেন নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনাইয়া।। তিনি বার্লিনে লম্বা একটি লাইনে যোগ দেন। এ সময় জনতার ভিড় থেকে হাততালি দিয়ে তার নামে স্লোগান দেয়া হয়। তিনি সেখানে অবস্থান করেন কমপক্ষে ৫ ঘন্টা। ভোট দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যালটে তিনি প্রয়াত স্বামীর নাম লিখে দিয়েছেন। পুতিনের প্রতি তার কোনো বার্তা আছে কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে ইউলিয়া বলেন, পুতিনের জন্য আমার বা অন্য কারো বার্তা জানতে চাইবেন না। এসব বন্ধ করুন। পুতিনের সঙ্গে কোনো সংলাপ বা অন্য কিছুই হবে না। কারণ, সে একজন খুনি। সে একজন গ্যাংস্টার।

এর জবাবে পুতিন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা দুপুরে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এটা তো বিরোধীদের একটি ম্যানিফেস্টেশন বলে মনে হচ্ছে। ভাল কথা। তারা যদি ভোটের জন্য আহ্বান জানায়, তাহলে আমি তার প্রশংসা করি। অস্বাভাবিকভাবে অনেক বছরের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে নাভালনির নাম নিয়েছেন পুতিন।

তিনি বলেছেন, নাভালনি মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার একটি ধারণা সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছিলেন। এই ধারণার সঙ্গে তিনি একমত পোষণ করেছিলেন। তবে শর্ত ছিল একটি। তা হলো, রাশিয়া ছেড়ে যেতে পারবেন না নাভালনি।



পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন