আসলে মানুষ হত্যার উন্মত্ততা পেয়ে বসেছে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে

  29-03-2024 01:55PM


পিএনএস ডেস্ক: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হুঁশিয়ারি। জার্মানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের খবরদারি। সাবধান করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত আইসিজের নির্দেশ। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য বিভিন্ন দেশের কড়া অভিযোগ ও প্রতিবাদ। কোনোকিছুতেই নিবৃত হচ্ছেন না ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। উল্টো গাজার রাফায় তার সেনারা প্রবেশের জন্য প্রস্তুত বলে সদম্ভে জানিয়েছেন।

ওদিকে সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরাইলি সেনারা হামলা চালিয়ে বেসামরিক ও সামরিক মিলিয়ে কমপক্ষে ৩৮ জনকে হত্যা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের মোড়লরা দৃশ্যত শুধু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব, তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তাদের তরফ থেকে ইসরাইলকে নিবৃত হতে বড় কোনো সতর্কতা, সাবধানবাণী এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।

চারদিকে মুসলিম দেশবেষ্টিত ইসরাইল দম্ভ ভরে এত্তটুকুন গাজায় অকাতরে পাখির মতো গুলি করে, ভবন উড়িয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। সেখানে বাতাসে বারুদের গন্ধ। চারদিকে যে ধ্বংসলীলা তা যেকোনো সুস্থ মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। শুধু নড়ে না মধ্যপ্রাচ্য আর ইসরাইলের বিবেক। প্রতিক্ষণ হাসপাতালে যেসব অনাহারী, অপুষ্টিতে ভোগা শিশু, নবজাতকের লাইন- তা মানবাত্মাকে কাঁদায়।
পবিত্র রমজান মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উপলক্ষ। এ সময় এ সম্প্রদায়ের প্রতি বিশ্বের অন্য সব সম্প্রদায়ই সহানুভূতি প্রদর্শন করে। কিন্তু ইসরাইল এ সময়টাতেও নিরীহ মানুষ হত্যা করে উল্লাস করছে। কী অপরাধ ওই ছোট্ট ছোট্ট শিশুর- যারা বৃষ্টির পানিতে শরীরের অর্ধেক, বাকি অর্ধেক কোনো একটি অবলম্বনের ওপর রেখে ঘুমায়! বলতে পারবেন নেতানিয়াহু! ইসরাইলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। গাজায় তাদের চলমান সামরিক অভিযানকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মুসলিমদেশ পরিবেষ্টিত ইসরাইল এতই শক্তিধর হয়ে উঠেছে যে, কাউকে গোণার মধ্যে ধরছে না। তাদের সামরিক অস্ত্রের, পারমাণবিক শক্তির কোনো তথ্য দিতে হয় না আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থাকে (এআইইএ)। এমন সব খবর মানবাত্মাকে ব্যথিত করে।

নেতানিয়াহু দম্ভ করে ঘোষণা দিয়েছেন- আমরা গাজা উপত্যকার উত্তর এবং খান ইউনুস দখল করেছি। দক্ষিণের রাফা শহরে স্থল আগ্রাসন আসন্ন। কোনো রকম বিলম্ব না করে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং চিকিৎসা সরবরাহসহ মৌলিক পরিসেবা এবং মানবিক সহায়তার অবাধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইসরাইলকে তার আইনগত বাধ্যবাধকতা মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে।

উল্লেখ্য, ৭ই অক্টোবর থেকে গাজা যুদ্ধে কমপক্ষে ৩২,৫৫২ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৪,৯৮০ জন। তারপরও এই রমজানে মানুষ যখন আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন তখন গাজার কেন্দ্রস্থলে মাঘাজি শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়িতে হামলা করেছে ইসরাইল। এতে সেখানে কমপক্ষে ৮ জন নিহত ও বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিরাপত্তা বিষয়ক দুটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, সিরিয়ার আলেপ্পোতে ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ৩৩ জন সাধারণ মানুষ এবং লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ৫ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।

গাজা, লেবাননজুড়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বেড়ানোর পরও ইসরাইল বলছে, তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইসিজের নির্দেশের পর তারা ত্রাণ সরবরাহে নতুন উদ্যোগ শুরু করতে পারে। অন্যদিকে গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ অত্যাসন্ন বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। সেখানে অনাহারী মানুষকে বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ মানবিক ত্রাণ প্রয়োজন। এমন অবস্থায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে অবশ্যই আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন বেলজিয়ামের মন্ত্রী ক্যারোলাইন গেনেজ। তিনি বলেছেন, গাজায় অবশ্যই নিরীহ মানুষ ও শিশুদের অনাহারে থাকা বন্ধ করতে হবে। তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে খাদ্য।

ইসরাইলের প্রতি আইসিজে সর্বশেষ যে আদেশ দিয়েছে তা নিয়ে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। তারা বলেছে, আইসিজে এর আগে গাজায় সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা ও মৌলিক চাহিদা মেটাতে ইসরাইলকে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। আইসিজের নতুন আদেশ সেটাই ফুটিয়ে তোলে। অ্যামনেস্টি বলেছে, গাজায় যে বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি তা ক্রমাগত অবনতি হচ্ছে। এ বিষয়টি জোর দিয়ে তুলে ধরেছে আদালত। ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যারা মদত দিচ্ছে তাদের প্রতিও বার্তা দিয়েছে অ্যামনেস্টি। বলেছে, আইসিজের নতুন রায় সব রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে, এর ফলে গণহত্যা প্রতিরোধে তাদের সুস্পষ্টত দায়িত্বের বিষয় উল্লেখ আছে। নিশ্চিত করতে হবে যে, আইসিজের সব বিধি সবাইকে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বেলজিয়ামের উন্নয়ন সহযোগিতা ও নগর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলাইন গেনেজ বলেছেন, ইসরাইলকে নিবৃত করতে আন্তর্জাতিক চাপ অত্যাবশ্যক। গাজায় অবিলম্বে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে। তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, ভয়াবহভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল। এই যখন অবস্থা তখন উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে দুই মাস বয়সী শিশু লাইলা জুনায়েদ। তার যে ওজন হওয়ার কথা এ সময়ে তার চেয়ে অর্ধেকেরও কম এখন। তাকে নিয়ে অনলাইন আল জাজিরা একটি ভিডিও প্রতিবেদন করেছে। সে দৃশ্য দেখলে চোখের অশ্রু ধরে রাখা কঠিন।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন