শিশু জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ দিল ফায়ার সার্ভিস-রেল

  13-08-2018 08:56AM


পিএনএস ডেস্ক: রাজধানী ঢাকার শাহজাহানপুরে রেলের পরিত্যক্ত নলকূপের পাইপে পড়ে মারা যাওয়া শিশু জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা তার বাবা-মার ব্যাংক হিসাবে জমা দিয়েছে রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনার সাড়ে তিন বছর পর আইনি প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি শেষে ২০ লাখ টাকার চেক ও পে অর্ডার জিহাদের মা-বাবার নামে খোলা একটি যৌথ ব্যাংক হিসাবে জমা পড়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী আব্দুল হালিম।

জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ চেয়ে এই আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন, যাতে আদালত ২০ লাখ ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দিয়েছিল।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিস ও রেল কর্তৃপক্ষ। গত ৫ অগাস্ট তা খারিজ করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপরই ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধ করল সরকারি সংস্থা দুটি।

অ্যাডভোকেট হালিম রবিবার বলেন, ফায়ার সার্ভিস ১০ লাখ টাকার পে অর্ডার এবং রেলওয়ে ১০ লাখ টাকার চেক দিয়েছে।

তিনি বলেন, যতটুকু জেনেছি, চেক এবং পে অর্ডারটি জিহাদের পরিবারের একটি যৌথ অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। তবে এখনও নগদায়ন হয়নি।

জিহাদের বাবা নাসির উদ্দিন আদালত এবং আইনজীবী হালিমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, গত ৫ আগস্ট রেল ভবনে ও ৬ অগাস্ট মন্ত্রণালয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে চেক আর পে-অর্ডারটা দিয়েছে।

নাসির উদ্দিন বলেন, আমি ও আমার স্ত্রীর নামে উত্তরা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় যৌথ অ্যাকাউন্টে গত বৃহস্পতিবার সে চেক আর পে-অর্ডার জমা করেছি। সোমবার ব্যাংকে গিয়ে দেখব, টাকা জমা হয়েছে কি না।

মতিঝিল মডেল স্কুলের গার্ড নাসির বলেন, ক্ষতিপূরণ পাব, তা চিন্তাও করিনি। আদালতের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আর হালিম সাহেব আমাদের না দেখলে হয়ত এ ক্ষতিপূরণ পেতামই না। আমরাও তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ।

নিজেদের ব্যাংক হিসাবের চেক বই জিহাদের বাবা-মা এখনও পাননি জানিয়ে আইনজীবী হালিম বলেন, চেক না পাওয়া পর্যন্ত সে টাকা জিহাদের মা-বাবা কেউ উত্তোলন করতে পারবে না। ব্যাংকের কাছে স্টেটমেন্ট চাওয়া হয়েছে, যেটি আমাকে হলফনামা আকারে আদালতেও দাখিল করতে হবে। ব্যাংক স্টেটমেন্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না, টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে কি না।

আগামী ১৪ অগাস্ট আদালতে মামলাটির তারিখ আছে বলেও জানান এ আইনজীবী।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে খোলা থাকা কয়েক’শ ফুট গভীর একটি নলকূপের পাইপের ভেতরে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিহাদ।

প্রায় ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। পাইপে জিহাদের অস্তিত্বই নেই- এমন সন্দেহ রেখেই উদ্ধার অভিযান স্থগিত করার কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে তুলে আনা হয় অচেতন শিশুটিকে। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি বেঁচে নেই।

ওই ঘটনার দুই দিন পর চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হালিম জিহাদকে উদ্ধারে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও ক্ষতিপূরণের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করে। তাতে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আরজি জানানো হয়।

ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রুল জারি করে। জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে।

পরে ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্ষতিপূরণের পক্ষে রায় দেয় হাই কোর্ট। রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়ে রেলওয়েকে ১০ লাখ এবং ফায়ার সার্ভিসকে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে এ টাকা পরিশোধ করার নির্দেশ ছিল রায়ে।

কিন্তু ৯০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করায় রেলওয়ে ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠান আইনজীবী হালিম। নোটিসে ১৪ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।

কিন্তু দুই কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আদালত অবমাননার আবেদন করেন রিট আবেদনকারী এই আইনজীবী।

তবে তার আগেই হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) চেম্বার আদালতে যায় ফায়ার সার্ভিস ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

চেম্বার আদালত ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর আবেদন দুটি আপিলের নিয়মিত পাঠিয়ে দেয়; যা চলতি মাসের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন