পানির দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি আগামী মাসেই

  25-10-2016 05:07PM

পিএনএস: চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের’ কাজ শেষ হওয়ার পথে। আগামী মাসেই প্রকল্পটি চালু হচ্ছে। এটি চালু হলে কমে যাবে চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘ দিনের পানি তীব্র সঙ্কট। চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি আগামী মাসেই চালু হচ্ছে, ফলে চট্টগ্রামের তীব্র পানি সঙ্কট আর থাকবে না। সাত বছর আগে প্রকল্পটি চালু হয়। তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে লেগেছে সাত বছর।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি প্রস্তুত কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪ কোটি লিটার পানি চট্টগ্রাম মহানগওে নতুন করে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে বর্তমানে পানি সরবরাহ করছে মাত্র ১৯ কোটি লিটার। ফলে নগরজুড়ে পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে।
কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী জহুরুল হক বলেন, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় এক হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা এলাকায় নির্মাণ করা হয় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প। কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে প্রথম পর্যায়ে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ১৪ কোটি লিটার পানি নগরীতে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছিল ২০০৬ সালে।
কিন্তু দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থমকে যাওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০০৯ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা পেছাতে পেছাতে চলতি মাসের নভেম্বর মাসে শেষ হতে যাচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গুনিয়া ও চট্টগ্রাম মহানগরীর অক্সিজেন এলাকায় ৩১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে দুটি পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছে চীনা দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্যাকেজ-২ এর আওতায় ৭১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সরবরাহ পাইপলাইন স্থাপন করেছে জাপানের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কবোতা-মারুবিনি।
প্যাকেজ-৩ এর আওতায় ১৪৫ কোটি টাকায় বায়েজিদ বোস্তামী রোডে ২৬ হাজার ঘনমিটার ও ২ হাজার ২০০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতার দুটি জলাধার নির্মাণ, লালখান বাজার বাটালি হিলে ৮ হাজার ৫০০ ঘনমিটার ধারণক্ষমতা স¤পন্ন জলাধারটি সংস্কার ও খুলশি বুস্টার পা¤প স্টেশনটি সংস্কার করেছে কোরিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোলন করপোরেশন। সবমিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৯৯.৯৯ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান ওয়াসার এই কর্মকর্তা।
প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর পানি গোডাউন ব্রিজ এলাকার ইনটেক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে এসে ৭১ মিটার দীর্ঘ, ৬২ মিটার চওড়া ও ৪ মিটার গভীরতার ৮ হাজার ৫০০ ঘন মিটার আয়তন পানি ধারণ ক্ষমতাস¤পন্ন একটি বেসিনে এসে জমা হবে। সেই বেসিন থেকে পানি যাবে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে। কিন্তু এই বেসিন ঠিক আছে কিনা তা টেস্ট করতে গিয়ে গত মাসের শেষ সপ্তাহে ধরা পরে বেসিনের চারদিকের লিকেজ। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি লিকেজ দক্ষিণ পাড়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের পাড়ে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেসিনের দক্ষিণ পাড়ের বাইরের অংশে তিনজন শ্রমিক পাইপের ভেতরে সিমেন্ট ঢুকাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় পাইপগুলোকে পাড়ের বাইরের অংশে গেঁথে এভাবে সিমেন্ট দেয়া হচ্ছে। আর পাড়ের বাইরের অংশটি পুরো ভেজা। পাড়ের নিচের অংশ দিয়ে পানি বের হয়ে যাওয়ার অসংখ্য চিহ্ন রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানায়, সিমেন্ট দেয়া হলে পানির সং¯পর্শে এসে সিমেন্ট জমে গর্তগুলো ভরাট হয়ে যাবে তাহলে পানি লিকেজ হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
কিন্তু তা লিকেজ হচ্ছে কেন এমন প্রশ্ন করা হলে ওয়াসার একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসিন নির্মাণের সময় পাড়ের ভেতরের অংশে ২ দশমিক চার মিটার পুরুত্বের কাদামাটি দেয়ার কথা ছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাদা মাটি না দিয়ে পাহাড়ের বালি মাটি দিয়ে পাড় তৈরি করে সেই মাটির উপর ইটের সলিং দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বেসিনের ভেতরের অংশ। এ কারণে বেসিনে পানি দেয়ার সাথে সাথে পাহাড়ের বালি মাটি চুইয়ে পানি বাইরে চলে আসছে।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, বেসিনটি সঠিক আছে কিনা তা যাচাইয়ের জন্য আমরা ২১ দিন পানি ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু চলতি অক্টোবর মাসের শুরুতে বেসিনের পাড় চুইয়ে পানি বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি শনাক্ত হয়। এখন আমরা তা মেরামতের কাজ করছি। বেসিনের পাড় নির্মাণে কাদা মাটি ব্যবহার না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই কাদা মাটি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, লিকেজ মেরামতের জন্য চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। লিকেজ মেরামত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ থেকে তা পুরোপুরি বুঝে নেব না। তাহলে আগামি নভেম্বর মাসে যে প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে এর কি হবে-প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা ধারন ক্ষমতার ১৪ কোটি লিটারে না গিয়ে ৭ কোটি লিটার উৎপাদন করার মতো করে আগামি মাসে তা চালু করে দেব। এই লিকেজে তা সমস্যা হবে না।
এদিকে প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পোমরা এলাকার পাহাড়কাটা বালিমাটি দিয়ে এই বেসিন তৈরি করা হয়েছে। বালিমাটির কারণেই পানি আটকে থাকছে না। একই বিষয়ে মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে কাজ করা একাধিক প্রকৌশলী হাসিবুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহরা প্রকল্পের বেসিন থেকে কখনো পানি চুইয়ে বের হওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সেখানে কাদা মাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্প চালুর ২৯ বছর পর বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এ প্রকল্পটি। বর্তমানে নগরবাসীর চাহিদার মাত্র এক তৃতীয়াংশ পানি সরবরাহ করছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। হালদার পানি পরিশোধন করে মোহরা প্রকল্পের দৈনিক ৯ কোটি লিটার ও ৯৭টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ১০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে নগরীতে। ফলে গত ৭-৮ বছর ধরে পানি সঙ্কটে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরের মানুষ।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে পানির তীব্র সঙ্কট থেকে রেহাই পাবে নগরীর মানুষ। ফলে যত দ্রুত সম্ভব পুরোদমে এ প্রকল্প চালু করারই এখন আমাদের লক্ষ্য।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন