সরকার চিনি শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য উন্নয়মূলক কর্মসূচি

  25-02-2017 10:05AM



পিএনএস, এবিসিদ্দিক: রাষ্ট্রায়ত্ব চিনি শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, তথা ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় এনে বর্তমান সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে সরকার জনগণকে বিশুদ্ধ ও মান সম্পন্ন চিনি খাওয়ানোর পাশাপাশি আখ চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে এই শিল্পের উন্নয়নে যে সব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কোন-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন। প্রকল্পটি ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা।

এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারের মাধ্যমে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চিনিকলের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় একটি সুগার রিফাইনারীও স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে ‘র’ সুগার হতে হোয়াইট সুগার উৎপাদন করে দেশে চিনির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভুমিকা রাখা হবে।

ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে চেয়ারম্যান জানান। ৪১১ দশমিক ১০ কোটি ব্যয় নির্ধারিত এই প্রকল্পের আওতায় মিলটিতে পুরাতন যন্ত্রপাতির পরিবর্তে আধুনিক ও নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটিতে আখের পাশাপাশি বিট হতে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। ফলে চিনি উৎপাদন বাড়বে আর চিনিকলটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা হচ্ছে দেশে একটি বড় চিনিকল ও ডিস্টিলারি কারখানা কেরু এন্ড কোম্পানী (বিডি) লিঃ। এটির আধুনিকীকরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিএমআর প্রকল্প। এতে ৭৩ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিনিকলটির বর্তমান আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষতি হবে। মাড়াই ও প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র আধুনিকীকরণের মাধ্যমে প্রসেস লস ন্যুনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। এছাড়ও সাম্প্রতিক অন্যান্য যেসব উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা হলো সনাতন পুর্জি প্রথার পরিবর্তে একটি মোবাইল এসএম এস’র মাধ্যমে সকল আখচাষির কাছে মিলে আখ সরবরাহের আগাম বার্তা পৌঁছে দেয়া (ই-পুর্জি)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর একযোগে সকল চিনি কলে ই-পুর্জি কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন। এরফরে লাখ লাখ চাষির দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল সেবা। নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ই-পুর্জির সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভারতের মস্থন এওয়ার্ড সাউথ এশিয়া ২০১০ পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এ ই-সেবা ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরষ্কার সহ বিভিন্ন পুরষ্কার লাভ করে। ই-পুর্জি ব্যবস্থাপনায় সফলতার পর সেবার পরিধি আরো বিস্তৃতি করতে চালু করা হয়েছে ই-গেজেট।

এর মাধ্যমে চাষীরা ই্উনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে পুরো মৌসুমের কেন্দ্র ও ইউনিট ভিত্তিক আখ ক্রয়ের আগাম কর্মসূচি দেখতে পারেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আখমাড়াই মৌসুমে ফরিদপুর চিনিকলে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয় এবং চলতি ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মৌসুমে সকল চিনিকলে চালুর কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। ই-পুর্জি ও ই-গেজেট প্রচলনের পর চিনিকল গুলোতে এবার মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করার যুগান্তকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। করপোরেশনের চেয়ারম্যান জানান, রূপালী ব্যাংকের শিওর ক্যাশ-এর মাধ্যমে চলতি আখ মাড়াই মৌসুম হতে সকল চিনিকলে একযোগে চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চাষিদের আখ চাষে ভতুর্কীর টাকাও মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান আরো জানান, আখ হতে সরকারি চিনিকলে উৎপাদিত চিনি বিভিন্ন সংরক্ষিত খাত ও ডিলারের মাধ্যমে বিতরণের প্রচলিত পদ্ধতির ফলে ভোক্তাসাধারণ আখের চিনি সহজে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা পেতেন না।

এমনকি আখের চিনির পুষ্টিমান ও এর গুনাগুন সম্পর্কেও ধারণা ছিল না বা এখনও এতো নেই। আখের চিনি সবচেয়ে পুষ্টিমানের ও মানদেহের জন্য উপকারি। করপোরেশন এখন ভোক্তা যাতে সহজে চিনি পান সে লক্ষ্যে ১ ও ২ কেজির প্যাকেটজাত চিনি বাজারজাত করা হচ্ছে। তাও আবার কম মূল্যে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ২৮ মে’ এই কর্মসূচির উদ্ধোধন করেন। পাশাপাশি আখের চিনির গুনাগুন, পুষ্টিসম্পন্নমান যা মানবদেহের জন্য উপকারি তা প্রচার করা হচ্ছে। চিনিকলের প্রেসমাড ও ইথানল প্লান্টের বজ্য হতে বায়োকম্পোস্ট উৎপাদনপূর্বক রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করতে কেরু এন্ড কোম্পানীতে স্থাপন করা হয়েছে জৈব সারকারখানা। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ২০১৫ সালের ১৭ এপ্রিল এর উদ্ধোধন করেন। করপোরেশনের চেয়ারম্যান আরো জানান, শিল্পায়নে অগ্রগতির মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখি, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথ চলায় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন দেশের সকল আখ চাষি এবং চিনি শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সাধারণ মানুষের ভাগ্যেন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এলক্ষ্যে আখ সম্মানিত আখচাষি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা আমাদের কাম্য।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন