বিডিআরে সংঘটিত ঘটনার মূল নায়কদের মুখোশ উন্মুচন জরুরি

  25-02-2017 07:14PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আজ প্রতিটি বাংলাদেশীর জন্য ঘৃণিত, নিন্দিত ও শোকাবহ কালদিন। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটেছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সেদিন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। যে শোক ও কষ্ট দেশবাসীকে যারপরনাই আজও পীড়া দিচ্ছে। ওই ভয়াবহ নির্মম ঘটনার পেছনে খলনায়কদের মুখোশ উন্মুচন না হওয়ায় মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।

সেদিন পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বাংলাদেশের শত্রুরা তাদের খুতপিপাসা মিটিয়েছে চৌকস, মেধাবী মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। ঘটনার পৈশাচিকতা ও ভীবিষিকা প্রমাণ করে এ দেশের সেনাবাহিনী খুনিচক্র এবং তাদের দোসরদের জন্ম-জন্মাতের শত্রু। যে কারণে তারা নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশগুলো বিকৃত করে দেয়! নরামদের এমন অমানবিক ঘৃণ্য কাজ দেশবাসীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণের স্রোত বইয়ে দিয়েছে।

পিলখানায় সেদিন যে বর্বরতা অবাধে চলেছিল, সেখানে বেছে বেছে, দেখে দেখে, খুঁজে খুঁজে দেশপ্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সেনা কর্মকর্তাদের টার্গেট করে পৈশাচিকতা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। নির্দয় ও অমানবিক আচরণ করা হয় তাদের পরিবারের সঙ্গে। অকর্ত নির্যাতন করা হয় তাদের পরিবারের নারী সদস্যদের সঙ্গে।

ঘটনার আকস্মিকতা ও পৈশাচিকতা বলে দিচ্ছে এ দেশের কেউ এমন নির্দয় ও নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে না তাদের দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে। এমনটা তাদের দ্বারাই সম্ভব, যারা তাদের আগের দেশপ্রেমিক কর্মতৎপরতায় ভীত ও ক্ষতিগ্রস্ত। বিশেষ করে সীমান্তে বীরত্বপূর্ণ অবদানের কারণেই তারা কারো চক্ষুশূল হতে পারে বলে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট অভিমত। কোনো বাংলাদেশীর দ্বারা এমন কাজ করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা।

সেদিনের নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনদের মতে, সেদিন অপেক্ষা না করে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিলে এমন নারকীয় ও হৃদয়বিদারক ঘটনা দেখতে হতো না। তারাও পরিবারের সদস্যদের হারাত না। কী এক রহস্যজনক কারণে সেনাবাহিনীকে সে কাজটি তাৎক্ষণিকভাবে করতে দেয়া হয়নি, তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না দেশের সচেতন জনগোষ্ঠী।

কালক্ষেপণ না করে ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এত প্রাণ অকালে ঝরত না বলে মনে করেন সচেতন মানুষ। যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে পৃথিবীর ইতিহাসে একসঙ্গে এত সেনা কর্মকর্তা হত্যার দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না বলে মনে করা হচ্ছে। কে বা কাদের গাফিলতিতে সেদিন এত সেনা কর্মকর্তার প্রাণ গেল, ইতিহাস একদিন তা জানান দিবে বৈকি।
ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দুটি কমিটিই নাকি ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে, সে ব্যাপারে বেশকিছু সুপারিশ করেছিল বলে চাউর আছে। তবে অনেক সাবেক সেনা কর্মকর্তা ওই রিপোর্ট নিয়ে রহস্যজনক আচরণের কথা বলাবলি করছেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাহিনীর নিজস্ব আইনের পাশাপাশি ফৌজদারি আইনে দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আসামিদের আপিলের ওপর শুনানি এখন শেষ পর্যায়ে। যদিও এ নিয়ে মানুষের সন্দেহ দূর হচ্ছে না।

ঘটনার পর বিডিআরের নাম বদল করে ফেলা হয়েছে। এটিকে বিদ্রোহ হিসেবে দেখিয়ে এটা করা হয়। যদিও ঘটনার পেছনে পঞ্চম বাহিনীর দোসররা জড়িত বলে মনে করা হচ্ছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ইন্ধন ও যোগসাজশে ইতিহাসের জঘন্যতম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। ঘটনার পেছনে কারা জড়িত, তাদের যতদিন না খুঁজে বের করা না হবে; ততদিন যত বিচারই হোক আমাদের সেনাবাহিনী নিয়ে ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বন্ধ হবে না।

‘বাংলাদেশে সেনাবাহিনী থাকার দরকার নেই’ বলে চিহ্নিত একটি মহল প্রচারণা চালাত। সেনাবাহিনীর উন্নয়নে কোনো কাজ করা হলে ওই মহলটি তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠত। বিডিআর সদর দফতরে সেদিনের ঘটনায় সে চিহ্নিত মহল এবং যাদের হয়ে তারা এসব বলত, তাদের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না।

কিছু দাবি নিয়ে উসকিয়ে কৌশলে বিডিআরের সদস্যদের সামনে ঠেলে দিয়ে সুযোগসন্ধানী বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিরোধীরা এটা করেছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিশেষ করে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী এবং সীমান্তে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী বিডিআরের কোমর ভেঙ্গে দিতে পরিকল্পিতভাবে বিডিআরে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। এই অভিমত দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজের।

নির্মম ওই ঘটনার পর থেকে দাবি উঠেছে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার। আরো দাবি উঠে বিচার বিভাগীয় তদন্তের; কিন্তু এর কোনোটাই হয়নি। কথায় কথায় হরতাল পালনকারী দেশে ৫৭ সেনা হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ ঘটনার পর কেউ হরতালও ডাকেনি! একটি দেশের রাজধানীতে, একটি বাহিনীর সদর দফতরে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার আগে এমন নজিরবিহীন ঘটনায় বিস্ময়ের ঘোর কাটছে না অভিজ্ঞ মহলের।

একটি ঘটনার সঙ্গে এত রকম রহস্য জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিলেও তা দৃশ্যমান করতে পারছে না আমাদের দায়িত্বশীলরা। ফলে দিন যত যাচ্ছে মানুষের মনের সন্দেহ ততই দানা বাঁধছে। সে সন্দেহ দূর করে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জনকারী সেনাবাহিনীকে অনাকাঙ্ক্ষিত খুনের ঘটনা থেকে চিরতরে রক্ষায় বিডিআরে সংঘটিত ঘটনার পেছনের নায়কদের মুখোশ উন্মুচন সময়ের দাবি।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : JALAM_PRODHAN72@YAHOO.

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন