'বাবা ফেসবুক থেকে আমার আঁকা বঙ্গবন্ধুর সেই ছবিটি সরিয়ে ফেলেছিলেন'

  18-08-2017 07:52PM

পিএনএস, বরিশাল প্রতিনিধি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এঁকে আবারও পুরস্কার জিতে নিয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়ার অদ্রিজা কর অদ্রি (১১)। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় জাতির জনকের ছবি এঁকে এবার প্রথম পুরস্কার পেয়েছে সে। এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তাঁর ছবি এঁকে সে দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। সেই ছবি দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের কার্ড তৈরি করে আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়েছিলেন আগৈলঝাড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী তারিক সালমন। অদ্রিজা কর বরিশালের আগৈলঝাড়ার শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী। সে উপজেলা বন্দরের শান্তিরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী পরিমল কর ও শ্রীমতি মাতৃমঙ্গল বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা পদ্মাবতী হালদারের মেয়ে।

এবার শোক দিবস উপলক্ষে অদ্রিজা এঁকেছে ১৫ আগস্ট কালরাতে আততায়ীর হাতে গুলিবিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর ছবি। ১৪ আগস্ট শিশুদের ‘গ’গ্রুপের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশুটি। অদ্রিজা কর অদ্রি তার অনুভূতি জানাতে গিয়ে এই প্রতিবেদকে বলে, ‘আমি মনের মতো করে জাতির জনকের ছবি এঁকেছি। উপজেলা প্রশাসন আমাকে প্রথম পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এ জন্য আমি আনন্দিত ও উৎসাহিত।’ শিশুটি আরও জানায়, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমার আঁকা দ্বিতীয় পুরস্কার পাওয়া ছবিটি নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি।

পুরস্কার দেওয়া স্যারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে শোনার পর আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। বাবা ফেসবুক থেকে আমার আঁকা বঙ্গবন্ধুর সেই ছবিটি সরিয়ে ফেলেছিলেন। কারও সঙ্গে কথাও বলতে দিতেন না তখন বাবা-মা। এ নিয়ে সারাদেশে হইচই হলেও বাবা-মা আমাকে কিছু বুঝতে দেননি। ছবি আঁকার যখন যে উপকরণ চেয়েছি, তা পেয়েছি।’ অদ্রিজার বাবা পরিমল কর জানান, ‘অদ্রিজা প্রথম শ্রেণী থেকেই ছবি আঁকে।

এ জন্য বিভিন্ন সময় অনেক পুরস্কারও পেয়েছে সে। বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে তার ভালো লাগে। তাই আদ্রিজা থেমে থাকেনি।’ গত ১৪ আগস্ট সোমবার বিকেলে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অংশ নেয় অদ্রিজা। এ প্রসঙ্গে মা শিক্ষিকা পদ্মাবতী হালদার বলেন, ‘আমার মেয়েটি যথেষ্ট মেধাবী। সব পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে আসছে। ছবি আঁকায়ও সে ভালো পুরস্কার পাবে, এ বিষয়ে আমরা নিঃসন্দেহ ছিলাম।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের ছবি আঁকা নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিয়ে আমরা মেয়ের মনে কোনও প্রভাব ফেলতে দেইনি। তাকে আরও সুন্দর করে ছবি আঁকার ব্যাপারে আমরা সবসময় উৎসাহ দিয়েছি। অদ্রিজার সমাপনী পরীক্ষা সামনে। তবু সে তার মনের জোরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে ছবি এঁকে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে। এতে তার মনোবল বেড়েছে। আমরাও আনন্দিত হয়েছি।’ উল্লেখ্য, গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রশাসন শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অংশ নেয় অদ্রিজা। প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’। ওই ছবি দিয়ে ছাপানো কার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি ‘বিকৃত’ করা হয়েছে এবং পেছনের পৃষ্ঠায় ছপানোয় মানহানি হয়েছে বলে অভিযোগ এনে গত ৭ জুন আগৈলঝাড়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের বিরুদ্ধে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানি মামলা করেন জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ওবায়েদউল্লাহ সাজু।

আদ্রিজার আঁকা বঙ্গবন্ধুর এই ছবিটি স্বাধীনতা দিবসের কার্ডে ব্যবহার করা হয় ।আদালতের সমন পেয়ে ১৯ জুলাই বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন তারেক সালমন। জামিন শুনানির সময় বাদী অ্যাডভোকেট ওবায়েদল্লাহ সাজু ছাড়াও আওয়ামী লীগের জেলা সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসসহ আওয়ামীপন্থী অর্ধশতাধিক আইনজীবী জামিনের বিরোধিতা করেন। আদালত প্রথমে তার জামিন নামঞ্জুর এবং দুই ঘণ্টা পর দুপুর দেড়টার দিকে জামিন মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় দেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইউএনও’র বিরুদ্ধে মামলা করায় জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর ২৩ জুলাই বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন