ঢাকায় মাদকসেবীদের ২২% এইচআইভি আক্রান্ত

  19-11-2017 04:02PM

পিএনএস ডেস্ক : শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ঢাকায় বিপজ্জনকভাবে বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২২ শতাংশ হয়েছে। রক্তের নমুনাভিত্তিক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। জাতীয় এসটিডি/এইডস কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এই জরিপের ফলাফল এক বছর আগে জমা দেওয়া হলেও সরকার তা এখনো প্রকাশ করেনি।

গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে এই জরিপ (সেরোলজিক্যাল সার্ভেল্যান্স) করে।

জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা সাংবাদিকদের বলেন, খুব শিগগির জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

দেশে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) মাধ্যমে সেভ দ্য চিলড্রেন শিরায় মাদকসেবীদের মধ্যে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ওই জরিপ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ঢাকায় শিরায় মাদক গ্রহণকারীদের ২২ শতাংশের শরীরে এইচআইভির সংক্রমণ আছে। রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় মাদকসেবীদের মধ্যে এই হার ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি চারজনের একজন এইচআইভি সংক্রমিত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ৫ শতাংশের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ দেখা দিলে পরিস্থিতিকে ‘কনসেনট্রেটেড এপিডেমিক’ বা ‘ঘনীভূত মহামারি’ বলে। এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ অতি দ্রুত ওই জনগোষ্ঠীর অন্য সদস্যের পাশাপাশি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

এই পরিস্থিতিতে দেশে এইচআইভি/এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় শিরায় মাদকসেবীদের মধ্যে এই রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জরিপ ফলাফল আগেই প্রকাশ করা উচিত ছিল। ফলাফল এক বছর আগে প্রকাশ করলে কর্মসূচি মূল্যায়ন করে নতুনভাবে কাজ শুরু করা সম্ভব হতো। তিনি বলেন, ‘চানখাঁরপুলের পাশেই দেশের বৃহত্তম চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এই হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় বেশ কিছু ব্লাড ব্যাংক গড়ে উঠেছে। মাদকসেবীদের একটি অংশ নিয়মিত রক্ত বিক্রি করে। বড় ঝুঁকিটা তৈরি হয়েছে এখানেই।’

এইচআইভি রক্ত বা গ্রন্থিরসের মাধ্যমে ছড়ায়। মাদক গ্রহণকারীরা একই সুই-সিরিঞ্জে মাদক ভাগাভাগি করে বলে এদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি। মাদকসেবীদের অনেকের স্ত্রী বা স্বামী আছে। একটি অংশ নিয়মিত যৌনকর্মীদের কাছে যায়। একটি অংশ নিয়মিত রক্ত বিক্রি করে।

সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছে, এশিয়া মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সুইয়ের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটলে তা অতি দ্রুত একইভাবে ওই জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ড এর উদাহরণ। প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, বাংলাদেশে সুইয়ের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে এইচআইভির বিস্তার দ্রুত ঘটছে বলে সর্বশেষ জরিপে জানা গেছে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উদ্বিগ্ন।

এর আগে সেরোলজিক্যাল সার্ভেল্যান্স (রক্তের নমুনাভিত্তিক জরিপ) হয়েছিল ২০১১ সালে। তাতে ঢাকায় শিরায় মাদকসেবীদের ৫.৩ শতাংশের মধ্যে এইচআইভির সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভির প্রকোপ সম্পর্কেও জানা গিয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জরিপের পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করলে যৌনকর্মী, হিজড়া, সমকামী, কয়েদিদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ সম্পর্কে জানা যাবে।

জরিপের সঙ্গে জড়িত একজন গবেষক ও একজন এনজিও কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জরিপ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এক বছরেও এই প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করা হয়নি তা তাঁরা জানেন না।

জানতে চাইলে জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির ব্যবস্থাপক ডা. মো. বেলাল হোসেন এসব ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক (লাইন ডিরেক্টর) দেশের বাইরে থাকায় তাঁর মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।-প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন