আইভীর পোস্টারে ভয় তাড়ানোর মন্ত্র!

  08-12-2016 09:14AM


পিএনএস ডেস্ক: শহীদ জিয়া হলের মাথার ওপরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি। জিয়াউর রহমান তাকিয়ে আছেন সোজাসুজি।

তাঁর ঠিক সামনেই ঝুলছে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পোস্টার। সাদা-কালো রঙের নতুন পোস্টারগুলোর গায়ে লেমিনেটেড ফয়েল জড়ানো। ঝলমলে রোদে ক্ষণে ক্ষণে ঝিলিক দিচ্ছে। সেই সঙ্গে গোলচত্বরের সুবিশাল বিজয়স্তম্ভের গ্রিলের ওপর ভেসে থাকা কয়েকটি প্রতীকী নৌকা যেন তাতে বাড়তি আকর্ষণ যুক্ত করেছে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া মোড়ের এই চিত্র দৃষ্টি কেড়েছে অনেক নগরবাসীর। অনেকেই বারবার তাকিয়েছে ওই পোস্টারের দিকে। এর প্রমাণ মিলল মধ্যবয়সী দুই রিকশাযাত্রীর চাহনিতে। ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়া ওই রিকশাযাত্রীর একজন বেশ চেঁচিয়ে উঠে পাশেরজনের উদ্দেশে বললেন, ‘আরে, এইটা তো আগে দেখি নাই। দ্যাখো, দ্যাখো—আমাদের আইভী এইবার ভোটারদের আসল মন্ত্রটা ধরাইয়া দিছে। এইটা যদি সবার মনের মধ্যে গেঁথে ফেলা যায়, তাইলেই নৌকার আর টেনশন নাই। ’ তাঁদের উচ্ছ্বাস দেখে আইভীর পোস্টারের দিকে ভালো করে নজর দিতেই দেখা গেল ‘নয় শঙ্কা—নয় ভয়/চাই শহর শান্তিময়’ লেখাটি।

ঘুরতে ঘুরতে সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের জামতলা এলাকার এক চায়ের দোকানে বসতেই কানে আসে একই আলোচনা। কয়েকজন রিকশাচালক পাশেই তাঁদের বাহনটি রেখে চা-পানের সঙ্গে ভোটের আলোচনায় ব্যস্ত। যে যার মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। মতের মিল না হলে যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। ত্রিশোর্ধ্ব শফিকের কাছে তাঁদের আলোচনার বিষয় জানতে চাইলে বললেন, ‘ভোট লইয়া যে মাইনসের মনের মইধ্যে ডর আছে হেইডা তো আইভীর পোস্টারেই পরিষ্কার অইয়া গ্যাছে। হেই ডর ভাঙ্গনের লাইগ্যাই তো পোস্টারে অইয়া ল্যাখছে। কিন্তু আমি কইতে লাগছিলাম—এই পোস্টারের লেখা দিয়া কি আর ডর দূর করন যাইবো?’

এর আগে পাগলা হয়ে ফতুল্লা লঞ্চঘাট ছাড়িয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ঢুকতেই প্রধান সড়কের ডান দিকে ঝুলতে দেখা যায় সারি সারি পোস্টার। সবই কাউন্সিলর প্রার্থীদের।

মেয়র প্রার্থীদের পোস্টার এখনো এদিকটায় লাগেনি কেন জানতে চাইলে স্থানীয় এক ফার্মেসির কর্মী আস্তে করে বলেন, ‘এ এলাকায় মেয়র প্রার্থীর কর্মীদের চেয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মীরাই বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মেয়রের ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ আর দ্বিধাদ্বন্দ্ব-ভয়ভীতির ব্যাপার আছে। কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে তো এমনটা নেই। ’

অন্যদিকে কেল্লারপুলে চোখে পড়ল ব্যতিক্রমী চিত্র—একই রশিতে নৌকা আর ধানের শীষের পোস্টার ঝুলছে। সেদিকে তাকিয়ে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ানো যাত্রী সোলায়মান মিয়া বললেন, ‘নৌকা-ধানের শীষের এই গলাগলি দেখতে বেশ ভালোই লাগছে। কিন্তু এটা এখানে কতক্ষণ থাকে সেটাই দেখার বিষয়। ’

পাশে থাকা আরেকজন জানালেন রহস্যটা—আসলে আলাদা রশিই ছিল। সকালে নৌকার পোস্টার লাগানোর পর সেটা হঠাৎ ছিঁড়ে পড়ে যায়। পরে একটা ছেলে ওই ছেঁড়া অংশটি ধানের শীষের পোস্টারের রশির সঙ্গে বেঁধে দিয়েছে। তিনি অবশ্য কিছুটা শঙ্কার কথা শুনিয়ে বললেন, ‘পোস্টারে যতই ভয় তাড়ানোর মন্ত্র দেওয়া হোক না কেন, ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই এখানে ভয় আরো বাড়ছে। বলতে পারেন এটা নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ’

এদিকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের কাছে যেতেই দেখা হয়ে যায় ধানের শীষের লিফলেট হাতে নিয়ে প্রচারণায় থাকা চার-পাঁচজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে। পরিচয় দিয়ে কথা বলার ইচ্ছা পোষণ করতেই একজন বললেন, ‘কথা একটাই। মানুষ যদি কেন্দ্রে যাইতে পারে আর নিজের ভোটটা নিজে দিবার পারে, তাইলে আইভী বলেন, নৌকা বলেন আর শামীম ওসমান বলেন, কিছুতেই কিছু অইবো না। আপনারা খালি সেইদিকে খেয়াল রাইখেন। ’ বলেই তাঁরা দ্রুত একটি অটোরিকশায় উঠে বসেন। সূত্র: কালের কণ্ঠ

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন