খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে পাল্টে যেতে পারে রাজনীতির দৃশ্যপট

  24-09-2017 11:36AM

পিএনএস ডেস্ক:বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যেতে পারে। এমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে সবমহলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিরোধীদের রাজনীতি মূলত নির্ভর করে ২০ দলীয় দলীয় জোটের নেত্রী ও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর। তিনি আড়াই মাস ধরে দেশের বাইরে থাকায় এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সুযোগে সরকার পক্ষ রাজনীতিতে কিছুটা সুবিধা অবস্থান নিতে সক্ষম হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতারাও বিশ্বাস করেন খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে রাজনীতির অনেক প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে। সেই অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

বিএনপি সূত্রের দাবির, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া অক্টোবরের মাসের প্রথম দিকেই দেশে ফিরছেন। ফেরার তারিখ এখনো সুনির্দিষ্ট না হলেও এ মাসে তার দেশে না ফেরার বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। লন্ডনে দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। খালেদা জিয়া ফেরার পর বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করছে বিএনপি।

প্রায় তিন আড়াই মাস ধরে দেশের বাইরে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। গত ১৫ জুলাই চিকিৎসা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটাতে লন্ডনে যান তিনি। এ সফর একান্ত ব্যক্তিগত হলেও তিনি সেখানে কি করছেন, কবে ফিরবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে নানা কৌতূহল।

লন্ডন বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে দেশে ফিরতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে তাকে আবারো চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকেরা ছাড়পত্র দিলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফিরবেন।

এদিকে লন্ডনে খালেদা জিয়ার একটি সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল কিন্তু তা এখনো হয়নি। কবে হবে সে তারিখও ঠিক হয়নি। দেশে ফেরার আগে যে কোন দিন তিনি নেতা-কর্মীদের সাথে মিলিত হতে পারেন বলে জানা গেছে।

বিদেশে অবস্থান করলেও দেশের রাজনীতির খোঁজখবর প্রতিনিয়তই রাখছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। দলের মহাসচিব সাথে টাইম টু টাইম কথা হচ্ছে। দেশে বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং রোহিঙ্গাদের সহযোগিতার নির্দেশনা তিনিই দিয়েছেন।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপি এবার অনেকটা সুশৃঙ্খল পন্থায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম ছিল উল্লেখ করার মতো। নির্বাচনের আগে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টি দলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে বলে তাদের মত। রোহিঙ্গা ইস্যুতেও সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের পাশাপাশি দলটি কক্সবাজারে একটি টিম পাঠিয়ে মজলুম রোহিঙ্গাদের সার্বিক সহায়তায় নেমেছে। দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবাও।

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলের এই কার্যক্রমের পাশাপাশি বিএনপি সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে বন্যা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্যস্ত থাকায় সদস্য সংগ্রহ অভিযান কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি।

লন্ডনে চিকিৎসা শেষে বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরলে বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করছে বিএনপি। সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরার পাশাপাশি এই ইস্যুতে সরকারের উপর চাপ তৈরি করতে কর্মসূচির ধরনও পাল্টে ফেলতে পারে দলটি। বছর দুয়েক ধরে সাদামাটা কর্মসূচিতে থাকা বিএনপি নির্বাচনকে মূল লক্ষ্য ধরে এখন সামনে এগুচ্ছে। আসছে ডিসেম্বর থেকে কিংবা নতুন বছরে সত্যিকারভাবেই ঘুঁরে দাঁড়াতে চায় তারা।

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির এক নেতা বলেছেন, সাংগঠনিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের চলমান লন্ডন সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সেখানে দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন। মা ও ছেলের মধ্যে সংগঠন ও আগামী দিনের রাজনীতির গতিপথ নিয়ে তাই আলোচনা হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।

ওই নেতা বলেন, দল পুনর্গঠন এবং কর্মসূচি প্রণয়নে তারেক রহমান সবসময়ই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দেশে থাকা অবস্থায় মা ও ছেলের মধ্যে টেলিফোন আলাপে কিংবা বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরামর্শ বিনিময় হয়ে থাকে। আগামী বছর নির্বাচনের। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়া আর লন্ডনে নাও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতিটি আসনে দলের যোগ্য প্রার্থী ঠিক করা এবং আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে কোন কোন দিকগুলো প্রাধান্য দেয়া হবে, তা নিয়ে দুই নেতা সরাসরি কথা বলেছেন বলেই তারা জেনেছেন।

খালেদা জিয়ার এ সফরের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক গুরুত্ব আছে কি-না জানতে চাইলে দলের এক নেতা বলেন, কূটনৈতিক পর্যায়ে একাধিক মিটিং হওয়ার কথা শুনেছি, তবে তা নিশ্চিত নয়।

এদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত প্রধান রাজনৈতিক বিরোধীদল বিএনপিকে মামলা-হামলা দিয়ে এবং রাজপথে মিছিল করতে না দেয়াসহ সকল বিষয়ে চাপে রেখে নির্বাচনে আনতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

শুধু তাই নয়, বিএনপির বেশ কিছু নেতানেত্রীকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়। এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বড় টার্গেট করা হয়েছে বলে দাবি বিএনপির নেতাদের।

অবশ্য বিএনপি নেতাদের এমন দাবি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে। দৃশ্যত সরকারের মোটিভ সেদিকেই এগুচ্ছে। বিএনপি প্রধানের মামলা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে বিএনপিতে আশঙ্কা বাড়ছে। যেভাবে দুর্নীতির মামলা চলছে এবং দীর্ঘদিন ধরে স্থগিত থাকা মামলাগুলো সচল করা হচ্ছে তাতে দ্রুত সরকার তাকে সাজা দিতে চাইছে বলে দলের নেতারা আশঙ্কা করছেন। কয়েকটি মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ভাষ্যেও নতুন ইঙ্গিত মিলছে। কেননা, বেশ কিছুদিন আগে সরকারের মুখপাত্র তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছিলেন, রাজনৈতিকভাবে এই মুহূর্তে নির্বাচন অগ্রাধিকার নয়। অগ্রাধিকার হলো খালেদা জিয়ার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে তার সাজার ব্যবস্থা করা।

এতে সহজেই অনুমেয় সরকার কোন পথে হাঁটছে। তবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তারা যেকোনো মূল্যে সরকারের এহেন ষড়যন্ত্র রুখতে চায়।

ফলে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতার আভাস মিলছে। দুপক্ষই অনঢ় অবস্থানে থেকে ক্ষমতায় যেতে চাইবে। আর এতেই সহিংস পরিস্থিতি রূপ নিতে পারে রাজনীতি। কেননা, বিএনপি আর ক্ষমতাসীনদের ফাঁকা মাঠে গোল করতে দিতে নারাজ। তারা যে কোনো মূল্যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতা স্বাদ ভোগ করতে চায়।

এদিকে সামনের নির্বাচনকে ঘিরে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা বিএনপিকে বর্তমান দুরাবস্থা ও চাপের মধ্যে রেখেই আগামী নির্বাচনে আনতে চায়। সে জন্য কৌশল ঠিক করার কাজও চলছে।



গত নির্বাচনের আগে সরকারের পরিকল্পনার বিপরীতে বিএনপি ও তার জোটের দলগুলোর সামনে আন্দোলনসহ অন্য বিকল্প ছিল। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিকে অন্য বিকল্প নিয়ে ভাবারও সুযোগ দেবে না সরকার।

সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রমতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপিকে নানাভাবে চাপে রাখার যে মনোভাব ছিল সরকারি দলে, সেটা এখনো আছে।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মনে করছেন, সাংবিধানিক সব বাস্তবতা মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে খুব একটা বিকল্পও নেই। কারণ, পরপর দুবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার মতো আইনি জটিলতায় পড়বে বিএনপি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, সরকার পরিচালনায় ও রাজনীতিতে নানা উত্থান-পতন আসতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে বিএনপিকে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। অবস্থা এমন দাঁড়াবে যে তাদের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বাইরে কোনো বিকল্প থাকবে না। ওই নেতা আরো বলেন, বিএনপি ‘খর্ব শক্তি’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। এ জন্য নিজেদের ঘর গোছানো জরুরি। একই সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা বা ঐক্যের প্রক্রিয়ায় যেতে হতে পারে।

সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, তারা মনে করছেন, আগামী কিছুদিন বিএনপির রাজনীতি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের মামলাকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খাবে। এমনকি আগামী নির্বাচনের আগেও তারা এ থেকে বের হতে পারবে না। ফলে তারা নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা সরকারবিরোধী কোনো ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করতে পারবে না। তারা রাজনৈতিক সমস্যা মীমাংসার জন্য কূটনীতিকদের দ্বারস্থ হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসা এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো চাপের আশঙ্কা করছে না।

শুক্রবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য সেদিকেই ইঙ্গিত বহন করছে। তিনি সুস্পষ্টভাবেই বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপিকে তারা কোনো প্রস্তাব দিবে না। এমন কী বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতাও করবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন