ভিনগ্রহ আবিষ্কার করলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী

  27-03-2017 07:32PM

পিএনএস ডেস্ক : এক ‘পাগলাটে’ ভিনগ্রহ আবিষ্কার করলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। যা পৃথিবীর চেয়েও প্রায় ২৫ হাজার গুণ বড়। বিজ্ঞানী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ পাল বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আরআরআই)-এ কর্মরত। আর অঞ্জন দত্ত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর।

মূল গবেষক বিশ্বজিৎ পাল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) আসন্ন মেগা প্রোজেক্ট ‘মিশন পোলিক্স’-এর প্রধান। পাঁচ জনের গবেষকদলে রয়েছেন দিল্লির হংসরাজ কলেজের গবেষক চেতনা জৈনও।

আমাদের সৌরমণ্ডলের বাইরে যে গ্রহটির খোঁজ মিলেছে, তা আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ২৫ হাজার গুণ বড়! আর আমাদের বৃহস্পতি গ্রহের ২৫ গুণ বড় সেই সদ্য আবিষ্কৃত ভিনগ্রহটির। রয়েছে আমাদের থেকে ৩০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। ‘ওফিউকাস’ নক্ষত্রপুঞ্জে।

অবাক করা সেই গ্রহটি তার দুটি নক্ষত্র বা তারাকে প্রদক্ষিণ করে। সেই নক্ষত্র দুটি আবার ভিন্ন ধরনের। এক জন খাদক, অন্য জন খাদ্য। এক নক্ষত্র অপরটিকে ধীরে ধীরে তার দিকে টেনে নিচ্ছে। খাদক দেখতে অনেক ছোট হলেও তার সর্বগ্রাসী ক্ষুধা। সে আদতে একটি নিউট্রন নক্ষত্র।

দুজনকেই প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছে সেই সদ্য আবিষ্কৃত ভিনগ্রহটি। বলা ভাল, কিছুটা মজাও দেখছে! কারণ, দুই ‘দেবতা’র অহি-নকুল সম্পর্ক দেখতে দেখতে সে দুজনকেই ছেড়ে চলে যাচ্ছে আদিগন্ত, অতলান্ত মহাকাশের আরো দূরে।



এই চমকে দেওয়া আবিষ্কারের খবরটি ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘মান্থলি নোটিশ অফ রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র ১৪ মার্চ সংখ্যায়। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘ইন্ডিকেশান অফ আ ম্যাসিভ সারকামবাইনারি প্ল্যানেট অরবিটিং দ্য লো মাস এক্স-রে বাইনারি এমএক্সবি ১৬৫৮-২৯৮’।

বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্স ইনস্টিটিউটের (আরআরআই) অধ্যাপক বিশ্বজিৎ পাল বলেন, “আমরা যে নক্ষত্রমণ্ডলে ভিনগ্রহটির হদিশ পেয়েছি, সেখানে আসলে দুটি তারা রয়েছে। এটাকে বলে বাইনারি সিস্টেম। এই রকম অনেক বাইনারি সিস্টেমের খোঁজ পাওয়া গেছে। আসলে এই ব্রহ্মাণ্ডে বাইনারি সিস্টেমের সংখ্যাই বেশি। আমাদের সৌরমণ্ডল বরং কিছুটা ব্যতিক্রমই। এখানে একটি নক্ষত্রেরই মাতব্বরি। নতুন নক্ষত্রমণ্ডলে যে ভিনগ্রহটির সন্ধান মিলেছে, সেখানে রয়েছে একটি নিউট্রন নক্ষত্র। যা অসম্ভব রকমের ভারী। সূর্যের চেয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই গুণ ভারী।

যাকে বলে কমপ্যাক্ট নক্ষত্র। তার মানে কোনো সুদূর অতীতে সেটাও ছিল কোনো বড় নক্ষত্র। কোনো নক্ষত্র তার জীবন-চক্রের শেষ ধাপে হয় কোনো ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, অথবা হয়ে যায় কোনো নিউট্রন নক্ষত্র। দুটিরই অসম্ভব খিদে। দুটিই রাক্ষুসে।

‘এ ক্ষেত্রেও নিউট্রন নক্ষত্রটি অন্য তারাটিকে গিলে নিচ্ছে। সেই তারাটিকে বলে কমপ্যানিয়ান স্টার বা সঙ্গী নক্ষত্র। দূর থেকে দেখলে এই সঙ্গী নক্ষত্রটিকে মনে হবে যেন চোখের জলের একটি বিন্দু। নিউট্রন নক্ষত্র বিন্দুর মতো দেখতে হলে হবে কি, ব্ল্যাক হোলের মতোই তা অত্যন্ত জোরালো অভিকর্ষ বল দিয়ে টেনে নিতে থাকে সঙ্গী তারাটির দেহাংশগুলিকে। অনেকটা যেন থালার আশপাশে (অ্যাক্রিশন ডিস্ক) এঁটোকাঁটা ছড়িয়ে রাখে। আর সেই থালার ওপর যখন যাকে খাচ্ছে, সেই তারাটির শরীরের অংশগুলি এসে পড়তে থাকে, তখন তা শক্তি হারিয়ে এক্স-রে বিকিরণ করে।

‘সে জন্যই এই ধরনের বাইনারি সিস্টেমকে বলে এক্স-রে বাইনারি সিস্টেম। এই দুটি তারার এক্স-রে বাইনারি সিস্টেমটির আবিষ্কার হয়েছিল আগেই। কিন্তু সেই বাইনারি সিস্টেমে যে এমন একটি ভিনগ্রহও রয়েছে, তা আগে জানা যায়নি। আমরা তারই হদিশ পেয়েছি। এই ভিনগ্রহটি গড়ে সাত ঘণ্টায় তার দুটি তারার চার পাশে পাক মারে। এটাই তার অরবিটাল পিরিয়ড।


‘তবে আমরা এটাও দেখেছি, সেই অরবিটাল পিরিয়ড বদলায়। মানে, আমাদের পৃথিবীর মতো তা সূর্যকে ঘড়ির কাঁটা ধরে ৩৬৫ দিনে পাক মারে না। এখনও পর্যন্ত কোনো বাইনারি সিস্টেমে যে ভিনগ্রহগুলির হদিশ মিলেছে, এটি তার মধ্যে বৃহত্তম।”

বিশ্বজিৎ পাল বলেন, ‘আমরা যে পদ্ধতিতে এই ভিনগ্রহটি আবিষ্কার করেছি, বিশ্বে এই পদ্ধতিতে এর আগে কোনো ভিনগ্রহ কেউ আবিষ্কার করেননি। পদ্ধতিটির নাম- পিরিয়ডিক ভেরিয়েশন্স ইন একলিপ্স টাইম।’

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন