নারীরা টুইটার বর্জন করছেন

  14-10-2017 10:18AM

পিএনএস ডেস্ক: হলিউডসহ বিশ্বের শোবিজ জগতে এখন তোলপাড় চলছে পরিচালক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে একের পর এক ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও হয়রানির অভিযোগ ফাঁস হওয়ার পর। আর এ নিয়ে টুইট করায় অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ানের টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। এর প্রতিবাদেই শুক্রবার বিশ্বজুড়ে অনেক নারীই টুইটার বর্জন করেছেন।

টুইটার অবশ্য রোজ ম্যাকগোয়ানের অ্যাকাউন্ট বন্ধের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, তিনি টুইটার একাউন্টের শর্তাবলী ভঙ্গ করেছেন। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই অভিযোগ করেছেন, হার্ভে উইনস্টেইনের মতো প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় টুইটার রোজ ম্যাকগোয়ানের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

হার্ভে উইনস্টেইন হচ্ছেন হলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী সিনেমা প্রযোজকদের একজন। বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের তিনি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে মোটা অংকের তহবিল যোগান দেন যারা, তাদেরও অন্যতম তিনি।

কিন্তু বহু বছর ধরে তিনি তার সিনেমায় কাজ করতে আসা মহিলা তারকাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের সাথে জবরদস্তি করে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন বলে একের পর এক অভিযোগ আসছে। অভিনেত্রী রোজ ম্যাকগোয়ানও টুইটারে হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন।

টুইটার তার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেয়ার পর বহু মহিলা সংহতি জানিয়ে টুইটার ব্যবহার বন্ধ রেখেছেন।

#WomenBoycott হ্যাশট্যাগটি শুক্রবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক লাখ নব্বই হাজারবার শেয়ার হয়েছে।
যারা টু্ইটার বর্জনের ডাক দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন অনেক বিখ্যাত তারকা।

এদের অনেকে কিভাবে টুইটারে নারী বিদ্বেষী মন্তব্য এবং হয়রানির শিকার হয়েছেন তারও উল্লেখ করেছেন।

অভিনেত্রী টারা স্ট্রং বলেছেন, ওরা রোজ ম্যাকগোয়ানের একাউন্ট বন্ধ করছে, অথচ এই লোকের (হার্ভে উইনস্টেইন) একাউন্ট বন্ধ করছে না।

তবে অন্য অনেকে যুক্তি দিচ্ছেন যে এভাবে নারীদের টুইটার বর্জন করে কোন লাভ হবে না। নারীদের বরং আরো বেশি করে টুইটারে সরব হওয়া দরকার এর প্রতিবাদ জানাতে।

এদিকে হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক এবং লন্ডনের পুলিশ ইতোমধ্যে কোনো কোনো অভিযোগের তদন্তও শুরু করেছে।

পাল্প ফিকশন, মালেনা, দ্য কিংস স্পিচ, শেক্সপিয়র ইন লাভ, মাই উইক উইথ মেরিলিন, গ্যাংস অব নিউইয়র্ক-এর মতো ছবিগুলোর প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টিন। তিনি প্রভাবশালী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়াইনস্টিন কোম্পানির প্রধান ছিলেন। ছিলেন মিরাম্যাক্স ফিল্মসের প্রতিষ্ঠাতাও। এমন কোনো বড় হলিউড তারকা নেই, যিনি কাজ করেননি হার্ভির সাথে।

৫ অক্টোবর দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও ১০ অক্টোবর দ্য নিউ ইয়র্কার পত্রিকা হার্ভির যৌন কেলেঙ্কারি বিষয়ে দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ছাপে।

প্রতিবেদন দুটিতে হলিউডের প্রভাবশালী অভিনেত্রী থেকে শুরু করে উঠতি মডেল, এমনকি ওয়াইনস্টিন কোম্পানির নারী কর্মচারীরা পর্যন্ত হার্ভির যৌন নির্যাতন ও হয়রানির রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অভিনেত্রী মুখ খুলছেন।

প্রতিবেদন দুটিতে হলিউডের প্রভাবশালী অভিনেত্রী থেকে শুরু করে উঠতি মডেল, এমনকি ওয়াইনস্টিন কোম্পানির নারী কর্মচারীরা পর্যন্ত হার্ভির যৌন নির্যাতন ও হয়রানির রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশিত হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অভিনেত্রী মুখ খুলছেন।

হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে হলিউড অভিনেত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগ
মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠায় তার ভবিষ্যত নির্ধারণে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে অস্কার পুরষ্কার প্রদানকারী সংস্থা দ্য ইউএস অ্যাকাডেমি।

ইতোমধ্যেই মিরাম্যাক্স এবং উইনস্টেইন কোম্পানি ৮১টি অস্কার পুরষ্কার পেয়েছে।

কিন্তু যৌন নিপীড়নের অভিযোগের প্রেক্ষাপটে এ নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে বুধবার জানায় সংস্থাটি।

২০১৫ সালে এক নারী হার্ভে উইনস্টেনের বিরুদ্ধে যৌন অভিযোগ করলেও তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি এবং এ নিয়ে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন আইনজীবীরা।

তারা বলছেন উইনস্টেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণাদি তারা পাননি, ফলে তাকে অপরাধীও বলা সম্ভব হয়নি। তবে তারা এটাও বলছেন যে অস্কারজয়ী এই প্রযোজকের "নারীদের সাথে অশালীন ব্যবহারের উদাহরণ রয়েছে।"

হার্ভে উইনস্টেন বলছেন তার বিরুদ্ধে আনা বেশিরভাগ অভিযোগই মিথ্যা।

সম্প্রতি এই মার্কিন প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন হলিউডের তিন অভিনেত্রী।

৬৫ বছর বয়সী এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন হলিউডের জনপ্রিয় তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও গিনেথ প্যালট্রো।

নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় এক লিখিত বিবৃতিতে হার্ভে উইনস্টেনের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযোগের কথা জানিয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ও গিনেথ প্যালট্রো।

১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া 'এমা' সিনেমার প্রযোজক ছিলেন হার্ভে উইনস্টেইন।

ছবির প্রধান চরিত্র জেন অস্টেনের ভূমিকায় কাজ করেন গিনেথ প্যালট্রো।

প্যালট্রো তার দেয়া বিবৃতিতে জানান, একবার নিজের হোটেল রুমে তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন হার্ভে উইনস্টেন। সে সময় তার দেহে আপত্তিকরভাবে স্পর্শ করেন উইনস্টেন এবং মিস প্যালট্রোকে কুপ্রস্তাব দেন।

গিনেথ প্যালট্রো তখন হলিউডের কম বয়সী এক উঠতি তারকা।

"আমার বয়স তখন খুব বেশি নয়। এরপর আবার হার্ভে উইনস্টেইনের ছবিতেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছি, সে দিনের ঘটনায় আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমার বয়ফ্রেন্ড ব্র্যাড পিটকে এ কথা বলেছিলাম, সে তখন প্রযোজকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। আমার মনে হচ্ছিল উইনেস্টেন আমাকে চুক্তি থেকে বাদ দিয়ে দেবে।"

অন্যদিকে অ্যাঞ্জেলিনা জোলি জানান, ১৯৯৮ সালে 'হার্ট' ছবিটির মুক্তির সময় হার্ভে উইনস্টেন তাকে হোটেল রুমে ডেকেছিলেন।

"'হার্ভে উইনস্টেইনের সাথে কাজ করে আমার খুব খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর এ কারণে আমি এই প্রযোজকের সাথে পরে আর কোনো কাজ করিনি, আমার অন্য নারী সহকর্মীদেরও এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি"।

"নারীদের প্রতি এ ধরনের আচরণ মেনে নেয়া যায় না, তা আপনি যেকোনো দেশে যে কোনো অবস্থানেই থাকুন না কেন" বলেন মিস জোলি। সূত্র : বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন