ক্রেতা সমাগমে সুবাস ছড়াচ্ছে দেশি টুপি-আতরের বাজার

  09-04-2024 12:41PM



পিএনএস ডেস্ক: ঈদের বাকি আর দুইদিন। আনুষাঙ্গিকে ‘নতুন’ শব্দটি ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে দেয় আরো। তাই নতুন জামা-জুতা, নতুন অলংকার কেনে সবাই। ঈদে মুসলিমদের অন্যতম অসুষঙ্গ টুপি, আতর, জায়নামাজ। নতুন পোশাকের সঙ্গে মাথায় টুপি আর শরীরে আতরের সুবাস না থাকলে পুরুষের সাজে যেন পূর্ণতা আসে না। তাই রোজার শেষে এসে জমে উঠেছে টুপি-আতরের বাজার। তবে এবার দাম বেশি হওয়াই দেশি টুপি-আতরে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। অনেকে আবার ফিরে গেছেন খালি হাতে।

বিক্রেতারা বলছেন, ডলারসংকটের কারণে ও ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতায় আমদানি কম হয়েছে। ফলে বিদেশি টুপি ও আতরের দাম কিছুটা বেশি। কমেছে বেচাকেনা।

আতর-টুপি আর জায়নামাজের সবচেয়ে বড় বাজার বায়তুল মোকাররম মার্কেটে গতকাল সোমবার দেখা গেছে, এবার বাজারে নকশা ও কারুকার্যের টুপির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। ৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টুপি। তবে বিদেশি টুপির দাম বেশি হওয়ায় এবার দেশি টুপি বেশি কিনছেন ক্রেতারা।

সেখানে দেখা গেছে, সাধারণ গোল টুপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এছাড়া সোনালি সুতার কারুকাজ করা টুপি ৮০০ থেকে ১০০০, পুঁতির কারুকাজ করা ২০০ থেকে ৩০০, বাচ্চাদের চুমকি বসানো টুপি ৮০ থেকে ২০০, জালের তৈরি এবং সাধারণ টুপি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে।

ক্রেতারা বলছেন, এবার টুপির দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর যে টুপি ১০০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার তার দাম দেড় থেকে দ্বিগুণ বেড়েছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ স্বীকার করে ইসলামিক আইটেম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, ডলার ও এলসি জটিলতায় এবার সব ধরনের ইসলামিক আইটেমের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে টুপি ও আতরের দামটা কিছুটা বাড়তি।

এর আগে শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের আতর-টুপির দোকান ঘুরে অবশ্য উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। তবে দাম সেখানেও বেশি। দাম বেশি চাওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডায় জড়াতে দেখা গেছে।

বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট, দক্ষিণ গেটের দোকানগুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, এবার এক সপ্তাহ আগে থেকে ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা শুরু হয়েছে। কিন্তু সুগন্ধি আর টুপির দাম বাড়ায় এই দুই আইটেমের বেচাবিক্রি কিছুটা কম হচ্ছে।

উত্তর গেটের টুপি বিক্রেতা অলিউল্লাহ জিহাদ বলেন, এবারের ঈদে আমি প্রায় তিন লাখ টাকার টুপি-আতর কিনেছি বিক্রির জন্য। তবে এখনো ভালো বিক্রি হচ্ছে না। আশা করছি ঈদের আগের দিন ও রাতে আরও বেশি ভালো বিক্রি করতে পারব।

ঈদের অন্য আরেক অনুষঙ্গ আতর। ঈদগাহে যাওয়ার আগে আতরের ঘ্রাণ মনের মধ্যে একধরনের পবিত্রতা এনে দেয়। ঈদে আতরের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। দেশের বাজারের যেসব আতর পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আতরও আছে নানা রকমের।

তবে গত বছরের তুলনায় দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ডের ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম আতরের বোতলের দাম ৩০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ছোট আকারের আতরের বোতলের দাম ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। বড় বোতল পাওয়া যাবে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। তবে সুরতি ব্যান্ডের আল-ফেজহারা, ফাওয়াকির মতো আতরের দাম প্রতি ১০০ গ্রাম ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত।

আতর ব্যবসায়ীরা জানান, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কামায় আতরের দামও বেড়েছে। সব ধরনের ব্র্যান্ডের আতরের দাম গ্রাম থেকে কেজি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের আতর ব্যবসায়ী রাহমত উল্লাহ বলেন, বছর জুড়ে আমরা এখানে আতর বিক্রি করি। প্রতিবছর ঈদের বাজারে কিছুটা ভালো বেচাকেনা হয়। তবে এবার আতরসহ অন্যান্য অনুষঙ্গের দাম বাড়ায় বিক্রি ধীর গতিতে হচ্ছে। ঈদের বাজার হিসেবে তা একদমই করুণ।

ইসলামিক আইটেম ব্যবসায়ী সমিতির তথ্যমতে, দেশে বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার বাজার আছে আতর, টুপি ও জায়নামাজের।

সংগঠনটির সেক্রেটারি বশির উদ্দিন বলেন, দৈনিক গড় সেল হিসেবে আতর-টুপি, তসবি ও জায়নামাজের বাজার প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে উৎসব কেন্দ্র করে এক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার কেনাবেচা হয়ে থাকে। তবে এবার কত হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।

তিনি বলেন, এবার দাম বাড়ারি কারণে বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। হয়তো এ হিসাব কিছুটা কম হবে।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন