‘ইরানের নীতিতে পরিবর্তন আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আমেরিকা’

  17-08-2018 06:14PM

পিএনএস ডেস্ক : আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নানা উপায়ে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে গত ৮মে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরবর্তী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে ফের নিষেধাজ্ঞা বলবত করার হুমকি দিয়ে রেখেছেন। আমেরিকা গত ৭ আগস্ট ইরানের বিরুদ্ধে প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন শুরু করেছে যা কিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা ও বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছে। এরপর দ্বিতীয় দফা নিষেধাজ্ঞা আগামী ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে। এ পর্যায়ে ইরানের তেল বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনাসহ অন্য দেশের সঙ্গে ইরানের আর্থিক লেনদেন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বন্ধ করা আমেরিকার এসব নিষেধাজ্ঞার প্রধান উদ্দেশ্য যাতে ইরানের অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বসে পড়ে।

প্রকৃতপক্ষে, আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে কঠিন অর্থনৈতিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরান বিষয়ক নীতি সমন্বয় ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি 'অ্যাকশন গ্রুপ' গঠন করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বিভাগের পরিচালক ব্রায়ান হুককে ‘ইরান অ্যাকশন গ্রুপের' প্রধান করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে চুক্তি করার ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্রায়ান হুককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ব্রায়ান হুক বলেছেন, "ওয়াশিংটন তেহরানের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত পদক্ষেপ নেবে। এ লক্ষ্যে নব গঠিত 'অ্যাকশন গ্রুপ' বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইরানের নীতিতে পরিবর্তন আনার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক চেষ্টা চালাবে।" তিনি বলেন, "ইরান যদি তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনে তাহলে ওই দেশটির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে।" অবশ্য কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলোচনার প্রস্তাব দিলেও ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে 'অ্যাকশন গ্রুপ' গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টির জন্য অন্য দেশকে ওয়াশিংটনের নীতি মেনে চলতে রাজি করানো। এই গ্রুপের প্রধান ব্রায়ান হুক যেমনটি বলেছেন, কিছুদিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র দেয়া ১২টি দাবি ইরানকে পুরোপুরি মেনে চলতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমাজকে অবশ্যই আমেরিকাকে সমর্থন দিতে হবে। ওই ১২টি দাবির অন্যতম হচ্ছে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে দেশটিকে সরে আসতে হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাবলীতে ইরান হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

প্রকৃতপক্ষে, নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন উপায়ে আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানের ইসলামি সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত করা। এ লক্ষ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য এ পর্যন্ত ২৪টির বেশি দেশ সফর করেছে। ইরান ইস্যুতে আগামী মাসগুলোতেও মার্কিন কর্মকর্তারা আরো দেশ সফর করবেন বলে কথা রয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এসব সফর ইতিবাচক হয়েছে এবং আমরা আশা করছি ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য এসব দেশ আমেরিকাকে সহযোগিতা করবে।

কিন্তু বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, মার্কিন কর্মকর্তাদের এসব আশাবাদ পুরাই মিথ্যা। কারণ তেল বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার জন্য আমেরিকা চেষ্টা করলেও ইরানের তেলের প্রধান ক্রেতা অর্থাৎ চীন ও তুরস্কের মতো দেশগুলো ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে। ভারতও জানিয়েছে তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মানবে না। এদিকে, তেল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৫০ ডলারে পৌঁছবে। এ ছাড়া, ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে যা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি ইরান ইস্যুতে ইউরোপকেও কাছে টানতে ব্যর্থ হয়েছে আমেরিকা। এ অবস্থায় আমেরিকার ইরান বিরোধী তৎপরতা কতটুকু সফল হবে তা দেখার জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন