রমজানেও রক্ষা নেই গাজার মুসলিমদের, আল শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের হামলা

  18-03-2024 11:52AM



পিএনএস ডেস্ক: পবিত্র রমজানে বিশ্বের মুসলিমরা যখন ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল, তখন গাজাবাসী অনাহারে-অর্ধহারে মৃত্যু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কখন বোমা এসে প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দেবে- সে আতঙ্ক সারাক্ষণ তাদের। তবুও গাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা রোজা পালন করছেন। কিন্তু ইসরাইলি নৃশংস বাহিনী থেমে নেই। তারা একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গাজার আল শিফা হাসপাতালকে তারা ঘিরে ফেলে তাতে প্রকাশ্যে গুলি চালাচ্ছে। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেছে- হাসপাতালের ভিতরে আবার পুনর্গঠিত হচ্ছে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের একটি দল। এর প্রেক্ষিতে সেখানে হামলা হচ্ছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলটজ। কারণ, ওই এলাকায় কমপক্ষে ১০ লাখ সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

কিন্তু কে শোনে কার কথা! রাফায় স্থল অভিযান চালানোর প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ওদিকে যুদ্ধ বন্ধে তিন দফার পরিকল্পনা দিয়েছে হামাস। তা নিয়ে আলোচনা করতে কাতারের রাজধানী দোহায় উপস্থিত হওয়ার কথা ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ প্রধানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের। ত্রাণের ভয়াবহ প্রয়োজনীয়তা থাকায় চার মাসের মধ্যে কোনো রকম বাধা ছাড়া গাজার দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে প্রথম একটি গাড়িবহর ত্রাণ নিয়ে প্রবেশ করেছে। ১৯টি ত্রাণবাহী জাহাজ নিরাপদে জাবালিয়ায় পৌঁছেছে।

ওদিকে ৭ই অক্টোবর হামাসের রকেট হামলার পর গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৩১,৬৪৫ ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৩,৬৭৬ জন।

অন্যদিকে ইসরাইলে নিহত হয়েছে ১১৩৯ জন। কয়েক ডজন মানুষকে জিম্মি রাখা হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল।

এতে বলা হয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী দখলীকৃত পশ্চিমতীর জুড়ে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে নাবলুসের দক্ষিণে তাল গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করেছে দুইজনকে। রামাল্লাহর উত্তর-পশ্চিমে অরোরা শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছে দু’জনকে। হেবরনের দক্ষিণে আল সামোউ শহর থেকে দু’জনকে, তুলকারেমের পূর্বে ধানাবা থেকে এক ব্যক্তিকে, অতিল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইলিরা।

আল শিফা হাসপাতালে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে আটকা পড়েছেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওয়াদিয়া আবু আলসৌদ। তিনি সেখান থেকে পাঠানো ভিডিওতে বলেছেন- হাসপাতালের পরিস্থিতি বিপর্যয়কর। এটাই হতে পারে আমার শেষ ভিডিও। সেখানে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গুলি বিনিময় চলছিল। তিনি বলেন, আল শিফা হাসপাতালের ভিতরে আটকা পড়েছি আমরা। আমাদের দিকে ভারি গুলি ছোড়া হচ্ছে। দখলদাররা আকস্মিকভাবে হাসপাতাল ও এর আশপাশ ঘিরে ফেলেছে। আপনারা এখন শুনতে পাচ্ছেন আল শিফা হাসপাতালের আশপাশে তীব্র সংঘর্ষ চলছে। হাসপাতালের গেটে গুলি বিনিময়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। হাসপাতাল চত্বরে গুলির খোসা ও শার্পনেল এসে পড়ছে। আমরা যাতে নিরাপদে বের হতে পারি, এ জন্য দোয়া করুন। আপনারা এখনও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন। বাইরে কি হচ্ছে পরিষ্কার জানি না। কিন্তু হাসপাতালের ভিতরকার অবস্থা বিপর্যয়কর।

গাজার মিডিয়া অফিস বলেছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী, ট্যাংক ও ড্রোন সক্রিয় করা হয়েছে আল শিফা হাসপাতালে। এই অভিযানের কড়া নিন্দা জানিয়েছে মিডিয়া অফিস। তারা দাবি করেছে, এই হামলা যুদ্ধাপরাধ। সোমবার দিনের শুরুতে যখন মানুষ সেহরি খেয়ে রোজা রাখবেন, তখন ভয়াবহ এই হামলা শুরু হয়। ইসরাইলিরা হাসপাতালের ভিতরে গুলি করা শুরু করেছে। এতে সেখানে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। এতে আরও বলা হয়, গাজার হাসপাতালগুলোকে যে ধ্বংস করে দিতে চায় ইসরাইল, এই হামলা তা-ই বুঝিয়ে দেয়। ফলে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

ওদিকে আল শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের বোমা হামলার ফলে একটি সার্জিক্যাল বিল্ডিংয়ে আগুন ধরে গেছে। সেখানে আশ্রয়গ্রহণকারী ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য লাউডস্পিকারে নির্দেশ দিচ্ছিল ইসরাইলি বাহিনী।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন