উচ্চ আদালতেও রায় বহাল থাকার আশা

  27-04-2017 08:48AM


পিএনএস ডেস্ক: চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ২০১৪ সালের এই দিনে—২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করে নির্মমভাবে খুন করা হয়।

ঘটনার প্রায় পৌনে তিন বছর পর গত ১৬ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ে ৩৫ আসামির মধ্যে ২৬ জনকে ফাঁসির দণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণে এলেই শিউরে ওঠে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা, কেঁদে বুক ভাসায়। দণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে তারা।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষের আইনজীবীরা আশা করছেন, নিম্ন আদালতের দেওয়া রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে।

নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য : কাউন্সিলর (প্যানেল মেয়র) নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘যাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে তাদের ফাঁসি উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে সেটাই আশা করি। তাহলে নিহতদের পরিবারগুলো স্বস্তি পাবে। ’

তাজুলের বাবা আবুল খায়ের বলেন, ‘আমাদের তো কিছু পাওয়ার নেই। যা হারিয়েছি তা তো আর ফিরে পাব না। নারায়ণগঞ্জের আদালত ফাঁসির যে রায় দিয়েছেন, সেটা যেন কার্যকর হয়। উচ্চ আদালতে এ রায় বহাল থাকবে—এটাই আমার চাওয়া। ’

গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী নূপুর বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স এখন দুই বছর ১০ মাস। সে তার বাবাকে খোঁজে। তার বাবার খুনিদের যেন ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়, তাহলেই আমরা খুশি। মেয়ে রওজাকে বলতে পারব, তোমার বাবাকে যারা খুন করেছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। মনে সান্ত্বনা পাব যে আমার স্বামীর হত্যার বিচার আমি পেয়েছি। ’

লিটনের ভাই রফিক বলেন, ‘ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা চাই এ রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকবে এবং সব আসামির দণ্ড দ্রুত কার্যকর করা হবে। তাহলে একটু শান্তি পাব যে আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার আমরা পেয়েছি। ’

মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই রিপন বলেন, ‘নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন সেটা কার্যকর হবে, সে আশাই করি। যারা মারা গেছে তাদের তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু রায় কার্যকর হলে সবার আত্মা যেমন শান্তি পাবে তেমনি আমরাও স্বস্তি পাব। ’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের উপযুক্ত তথ্য উপস্থাপনের কারণে মামলাটি নিম্ন আদালতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি, উচ্চ আদালত রায় বহাল রাখবেন। ’

বাদীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য বাদীপক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, ‘নিম্ন আদালতে যে রায় হয়েছে উচ্চ আদালতেও তা বহাল থাকবে বলে আশা করি। তা হলেই নারায়ণগঞ্জবাসী খুশি হবে। ’

যাঁরা খুন হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, জাহাঙ্গীর আলম ও মো. ইব্রাহীম।

বিচার ও রায় গত ১৬ জানুয়ারি প্রধান আসামি নূর হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ র্যাবের তিন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে ফাঁসির দণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, দণ্ডিত ব্যক্তিদের মধ্যে র্যাবসংশ্লিষ্ট সবাই চাকরিচ্যুত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন নূর হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা (এম এম রানা), মেজর আরিফ হোসেন, হাবিলদার এমদাদুল হক, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়্যব, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, আসাদুজ্জামান নূর, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান চার্চিল, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান, জামালউদ্দিন, সিপাহি আবদুল আলীম, সিপাহি মহিউদ্দিন মুন্সী, আলামিন শরিফ, তাজুল ইসলাম ও এনামুল কবীর। শেষের ৯ জন পলাতক রয়েছেন।

কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন করপোরাল রুহুল আমিন (১০ বছর), এএসআই বজলুর রহমান (সাত বছর), হাবিলদার নাসির উদ্দিন (সাত বছর), এএসআই আবুল কালাম আজাদ (১০ বছর), সিপাহি নুরুজ্জামান (১০ বছর), কনস্টেবল বাবুল হাসান (১০ বছর), হাবিবুর রহমান (১৭ বছর), কামাল হোসেন (১০ বছর) ও মোখলেসুর রহমান (১০ বছর)। শেষের তিনজন পলাতক রয়েছেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন