পিএনএস ডেস্ক: ড্যান্সবারের জন্য বাংলাদেশ থেকে সুন্দরী নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচারের অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ইভান শাহরিয়ার সোহাগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পিছিয়ে আগামী ৭ মার্চ নতুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল না করে সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইয়াসমিন আরা প্রতিবেদন দাখিলের নতুন এ তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। ওইদিনও তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল না করায় ১৬ ফেব্রুয়ারি নতুন দিন ঠিক করেছিলেন আদালত।
গেল বছরের ২ জুলাই সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃণাল কান্তি দাশ আজম খান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
দুবাই পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গেল বছরের জুলাই মাসে মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান আজম খান এবং তার ৪ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গেল ১১ সেপ্টেম্বর নৃত্যশিল্পী ইভানকে গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। ২১ সেপ্টেম্বর ইভানকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায় আদালত।
ইভান ছাড়াও মামলার অন্যান্য আসামিরা ভুক্তভোগীদের নাচ শিখিয়ে ভালো বেতনে বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব দিতেন। তাদের প্রস্তাবে ভুক্তভোগীরা জারি হলে তাদের থাকা-খাওয়াসহ ক্লাবে নাচ-গানের বিনিময়ে প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়ার মৌখিক চুক্তি করেন।
ইভান নিজের নামে (সোহাগ ড্যান্স ট্রুপ) একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নাচে তার দল অংশ নেয়। ২০১৭ সালে নির্মিত ‘ধ্যাততেরিকি’ ছবিতে নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
পাচারচক্রের শিকার হওয়া নারীদের সূত্রে জানা যায়, সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগীরা আসামিদের ওপর ভরসা করে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে রাজি হন। আসামি আজম খান, তার ভাই নাজিম ও এরশাদের সহায়তায় ভুক্তভোগীরা ময়নার পারপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে দেন।
এরপর ২০১৯ সালের মে মাসে ময়নাকে দুবাইয়ের সারজা নিয়ে যান এবং পরবর্তীতে আজম খান নিজেসহ বিভিন্ন লোক দিয়ে তার ওপর যৌন নির্যাতন চালান। কিন্তু দুবাই গমনের পর আসামিরা ময়নাকে কোনও বেতনও দেয়নি।
পরস্পর যোগসাজশে আসামিরা বিবাদী নির্মল দান, আলমগীর, আমান ও শুভসহ অজ্ঞাতনামা এজেন্টদের সহায়তায় ভুক্তভোগী আলেয়া ও মনি আক্তারদের ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ড্যান্স ক্লাব থেকে প্রলোভনের মাধ্যমে বাছাই করেন।
এভাবে বহু বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে আসামিরা দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার করেন এবং পরবর্তীতে জোরপূর্বক আটকে রেখে যৌন নিপীড়ন চালান।
আসামি নির্মল চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করা হলে গেল ১৩ আগস্ট তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেখানে তিনি জানান, ইভান বিদেশে পারফর্ম করার জন্য অধরা ও বিথী নামে দুজন আর্টিস্ট দেন। আসামি ইযাছিনও ২০ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা জানান।
বাংলাদেশি নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে দুবাইসহ অন্যান্য দেশে পাচার ও জোরপূর্বক আটকে রেখে যৌন নির্যাচন করার অভিযোগে গেল বছরের ২ জুলাই মূল হোতা আজম খানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে লালবাগ থানায় একটি মামলা করেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মৃনাল কান্তি শাহ।
মামলার আসামিরা হলেন- আল-আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড (২৬), স্বপন হোসেন (২৮), আজম খান (৪৫), নাজিম (৩৬), এরশাদ ও নির্মল দাস (এজেন্ট), আলমগীর, আমান (এজেন্ট) ও শুভ (এজেন্ট)।
পিএনএস/আনোয়ার
নাচের আড়ালে দুবাইয়ে নারী পাচার, ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ৭ মার্চ
16-02-2021 07:16PM