পাট রফতানি নিয়ে ভারতের নাটকীয়তা

  15-01-2017 09:25AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্যে সর্ববৃহৎ বাজার হওয়া সত্বেও কিছু দিন পর পর ভারত এক একটি নাটক করে। ভারতীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশে বাজার বৈধ-অবৈধ ভাবে খোলা থাকলেও বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা বাধা থেকেই যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অদৃশ্য হাতে বাংলাদেশের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ভারত। হঠাৎ করেই ভারত সেদেশে বাংলাদেশি পাট রফতানিতে জঠিলতার সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাতদ্রব্য রফতানির ওপর ভারতের জুট কমিশন নতুনভাবে শর্তারোপ করে প্রজ্ঞাপন জারি করায় গত দুদিন আগে থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে পাট রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। বেনাপোল বন্দর এলাকায় পাট ও পাটজাত পণ্য বোঝাই শত শত ট্রাক আটকা পড়ে আছে।

ভারত সরকার গত বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করায় সেই দিন বেলা ৩টা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশটিতে পাট রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। জুট কমিশনের জারি করা প্রজ্ঞাপনের সাথে ভারতীয় আমদানিকারকদের নতুন ফরমেট করা ফরম দেয়া হয়েছে সেটি পূরণ করে নতুনভাবে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে যে, প্রতি চালান আমদানির আগে কমিশন থেকে চালান হিসেবে এনওসি নিতে হবে। ২০ হাজার বেল এলসির পাট ২০০-৩০০ ট্রাকের চালান ভারতে রফতানি হয়। এখন প্রতি চালানে এনওসি আনতে গেলে এলসির সময়সীমা পার হয়ে যাবে। একইভাবে বলা হয়েছে, ভারতে আমদানি করা পাট দিয়ে বস্তা তৈরি করা যাবে না। অথচ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যে পাট রফতানি হয় তার বেশির ভাগ দিয়ে সে দেশের জুট মিল বস্তা তৈরি করে। এ প্রজ্ঞাপনের কারণে বাংলাদেশে পাট কলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে মনে করছেন বেসরকারি পাট কল মালিকরা।

এর ফলে কাঁচা পাটের বাজারে ধস নামবে। বেকার হয়ে পড়বেন লাধিক শ্রমিক। ভারত সরকারের পাট মন্ত্রণালয় না থাকায় টেক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের জুট কমিশন সে দেশের পাট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে; যার প্রধান কার্যালয় কলকাতার সল্টলেকে। বেনাপোল বন্দরের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ পাটের ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি পাহাড় পরিমাণ বছরে ভারত থেকে শুধু বৈধ পথেই প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, গত একদশকে ভাতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৪ গুণ বেড়েছে।দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশ আমদানি করে ৫ হাজার ৮১১ দশমিক ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। পক্ষান্তরে ৫২৭ দশমিক ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। অর্থাৎ ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৫ হাজার ২৮৪ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোটির হিসাবে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ ৫৮২ কোটি ডলার আর ভারতে বাংলাদেশে রফতানির পরিমাণ মাত্র ৫৩ কোটি ডলার। ১০ বছর আগে ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ঘাটতি ছিল ১৬০ কোটি ডলার। ১০ বছরে এই ঘাটতি বেড়েছে ৪২২ কোটি ডলার। অর্থাৎ বিগত ১০ বছরে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে টাকার হিসাবে ৪১ হাজার কোটি টাকা। ২ সপ্তাহ আগে একটি বাংলা সহযোগী জানিয়েছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আট বছরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। ক্রমেই বাংলাদেশের প্রতিকূলে যাচ্ছে বাণিজ্যিক ভারসাম্য। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একবছরের ব্যবধানে ভারতের সাথে বাণিজ্য ঘটতি বেড়েছে ৩৩.৭৬ শতাংশ।

যদিও এ সময়টায় ট্রানজিট থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করার সুযোগসহ অনেক কিছু পেয়েছে ভারত। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক কেবলই দেয়ার। অপরদিকে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে নানা বাধা থেকেই যাচ্ছে। এবিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী বার বার ভারত সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করে আসছে যেন বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে সকল বাধা দুর করেন। কিছুদিন আগেও এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনারের দৃষ্টিতে আনেন।

অপরদিকে ভারত থেকে বৈধ পথে আমদানি কমে গেছে। অবৈধ পথে শুল্ক না দিয়ে আসছে শত শত কোটি টাকার পণ্য। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে চলছে রমরমা চোরাই পণ্য বাণিজ্য। রাজধানীর প্রতিটি ছোট-বড় শপিংমল, মার্কেট, বিপণি বিতান এখন ভারতীয় পণ্যের দখলে। লাখ টাকা দামের শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস থেকে শুরু করে সব বয়সীদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, জুতা, সেন্ডেল প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। বাহারি নামের এসব পোশাকের চাহিদা ও লাভ অনেক বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য মজুদ ও বিক্রিতে বেশি আগ্রহী। রাজধানীর বাইরেও প্রতিটি জেলা শহরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় পণ্য। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে নিয়ে আসা এসব পণ্যের আগ্রাসনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে দেশীয় শিল্প। সরকার হারাচ্ছে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন