গণমাধ্যমজুড়ে শনির দশা

  20-07-2017 07:55PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : গণমাধ্যমে শনির দশা কাটছে না। সমস্যা-সংকট গণমাধ্যম কর্মীদের পিছু ছাড়ছে না। একদিকে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় আক্রান্তের ভয় অন্যদিকে একশ্রেণীর মালিক পক্ষের বেতন-ভাতা নিয়ে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাগর-রুনির প্রকৃত খুনিরা এত বছরেও গ্রেফতার না হওয়ায় সাংবাদিক নির্যাতন গাণিতিক হারে বাড়ছে।

রাজধানী ঢাকায় গণমাধ্যমকর্মীদের অবস্থা কতটা সঙ্গীণ, একটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে ২৬ মাসের বেতন বকেয়া, এর অন্যতম নজির। অন্যটিতে ২৫ মাসের বকেয়া। আরেকটিতে ছিল ১৪ মাসের। পরেরটি ইতিপূর্বে বকেয়া পরিশোধ করেছে। অন্যটি শুরু করেছে। প্রথমটিতে চাকরিচ্যুতদের ৬ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়। করপোরেট হাউজের অনেক দৈনিকে চাকরি চলে গেলে সাংবাদিক-কর্মচারীদের পাওয়া নিয়ম অনুযায়ী দেয়া হয় না!

দুঃখজনক হলেও সত্য, গণমাধ্যমের অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলো নিয়মিত তো নয়ই কালেভদ্রেও বেতন-ভাতা দেয়ার নজির নেই। যদিও কাগজে-কলেমে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের হাল নাগাদ করা প্রতিবেদন মজুদ থাকে তাদের কাছে। আবার সেটার আলোকে তারা সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে আর করে।


রাজধানীতে একই প্রেস থেকে ডজনখানেক সংবাদপত্র ছাপা হয়। এগুলো ঘোষিত প্রচার সংখ্যার শতভাগের ১০ ভাগও ছাপে না। কারো বা অফিসের নামে একটি কক্ষে একটি টেবিল-চেয়ার থাকে। থাকে একটা সাইনবোর্ড। হাতে গোনা দুয়েকজনের হয়তো একটা কম্পিউটার থাকে। যে কম্পিউটারে ডজন ডজন পত্রিকার ট্রেসিং বের হয় প্রায় এক ও অভিন্ন শিরোনামে। সুষ্ঠু তদন্ত ও সঠিক তদারকির অভাবে এ খাতে প্রতারণা সীমা ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই।

হালে চাকরি আছে বেতন নেই- এমন একটি পেশার নাম সাংবাদিকতা। হাতে গোনা কয়েকটি গণমাধ্যম ছাড়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতন-ভাতা দেয়া হয় না বা পাওয়া যায় না। ফলে এ পেশায় এসে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কেউ কেউ অসততার আশ্রয় নেয়। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মালিকপক্ষের অসাধুতা এ জন্য দায়ী।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাজারে গিয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ যারপরনাই বিপাকে পড়ছে। ২৫০ টাকার গ্যাস ৯০০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৭ বার বেড়েছে। বেড়েছে ভাড়ি-গাড়ি ভাড়া। এগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আনুসঙ্গিক অন্যান্য খরচ। এসব জোগান দেয়া একজন পেশাদার সাংবাদিকদের পক্ষে কঠিন। কারণ একটাই, অন্য পেশাদারদের বেতন ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও সাংবাদিকরা উপেক্ষিত।

ইউনিয়নগত বিভক্তি সাংবাদিকদের অধিকার, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি অনেকাংশে ক্ষতি করছে। কাঙ্ক্ষিত ঐক্যের অভাবে উপেক্ষিত থাকতে হচ্ছে। বঞ্চিত হতে হচ্ছে ন্যায্য পাওনা থেকে। নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের সময় অনেক আগে অতিক্রান্ত হলেও কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। নবম ওয়েজ বোর্ডে ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে যুক্ত করার কথা বলা হলেও এ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।

নবম ওয়েজ বোর্ড গঠনের নামে বিরাজমান ঐতিহ্যকে পাশ কেটে যাওয়া হচ্ছে। এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ট্রেড ইউনিয়নের বৈধ অংশকে। ফলে অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের মতোই একটি বিকলাঙ্গ ওয়েজ বোর্ডের আশঙ্কা করছেন এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। ২০০৬ সালে শ্রম আইনে সাংবাদিকদের মর্যাদাগত দিকটি ম্লান করে দেয়া হয়। অনেক আবেদন-নিবেদন, বক্তৃতা-বিবৃতি ও সংগ্রামের পরও সাংবাদিকদের মর্যাদার বিষয়টি সুরাহা হয়নি।

অনলাইন নীতিমালা, জাতীয় সম্প্রচার আইন, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে সাংবাদিক সমাজ যখন সোচ্চার তখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারা করার অপচেষ্টা চলছে। সাংবাদিক সমাজ মনে করে ৫৭ ধারা মতোই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারা মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের অন্তরায়। সাংবাদিক নেতাদের মতে, এটি নতুন বোতলে পুরনো মদ সমতুল্য।

মুক্ত ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অন্তরায় হিসেবে পরিগণিত হয়ে গেছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। নতুন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারার যে অপচেষ্টা, সাংবাদিক সমাজ তা মেনে নিতে নারাজ। উল্লিখিত কালো আইন বাতিল এবং মুক্ত-স্বাধীন ও অনুসন্ধানী সাহসী সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করা সময়ের দাবি। সে দাবি পূরণে সাংবাদিক বান্ধবরা এগিয়ে আসবেন, একটুই পরম চাওয়া।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন