পানিবন্দি ১০ লাখ মানুষ, নিহত ৩১

  14-08-2017 11:32AM

পিএনএস, দিনাজপুর: টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তলিয়ে গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলা। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে অন্তত ২০ জন। ঢাকার সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

নিহতদের মধ্যে দিনাজপুরে ১৪, কুড়িগ্রামে ৬, লালমানিরহাটে একই পরিবারে ৪ জনসহ ৫ ও ঠাকুরগাঁয়ে ১ জন রয়েছে। গত দুই দিনে পানিতে তলিয়ে অন্তত ১৫০২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পরীক্ষা।

লালমনিরহাটে রেল লাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। একই সঙ্গে বেশ কিছু এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী আগামী কয়েকদিন পানি আরো বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর বাংলাদেশ অংশ ও মেঘনা নদীর অববাহিকায় পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার অববাহিকার ভারতীয় অংশে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে এই তিন নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা বেসিনে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও সিরাজগঞ্জ স্টেশনে। যমুনা এবং মেঘনা নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে এর শাখা নদী সুরমা, কুশিয়ারা, ভোগাই কংস নদীতেও পানি বাড়ছে।

লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিঙ্গীমারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। সদর উপজেলার তিস্তা রেলস্টেশন সংলগ্ন ও জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার কয়েক জায়গায় রেললাইনে উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় লাইনের নিচে বিশাল আকার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্তমানে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রামের ধলাই ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়াই ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ধরলা নদীতে ৩ টি লাশ ভেসে এসেছে। রোববার সকালে ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ও চিলমারি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে এলাকার ৫০টি ইউনিয়নের ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে রাজারহাট উপজেলার ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আরো ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নেয়ায় ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে ৪৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে জেলার প্রায় ১ হাজার গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামে বন্যার পানির আতঙ্কে রেহেনা পারভীন নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার টাঙ্গন নদীর তীরে অবস্থিত ডিসি বস্তিতে প্রবল স্রোতের মুখে আটকা পরা বেশ কয়েকজনকে উদ্ধার করেছে রংপুর ডিভিশন সেনাবাহিনী। তবে এখনো রিয়াদ (২০) নামে একজন নিখোঁজ রয়েছে। জেলার ৬৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁওয়ের রেলপথের নয়ন ব্রিজ এলাকায় ২ কিলোমিটার রেলপথ ডুবে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় থেকে ট্রেন চলাচল দুই দিন থেকে বন্ধ রয়েছে।

জয়পুরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় জেলার পাঁচবিবি, ক্ষেতলাল, আক্কেলপুর ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দিনাজপুরে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে শহররক্ষা বাঁধ। দিনাজপুর জেলায় পানিতে ডুবে, দেয়াল চাপায় ও সাপের কামড়ে অত্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম। তিনি জানান, নিহতদের মধ্যে সদরে ৫ জন, বিরল উপজেলায় ৫ জন, কাহারুলে ৫ জন ও ঘোড়াঘাটে ১ জন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন