চোখ রাঙাচ্ছে বড় ধরনের বন্যা

  12-07-2019 02:36PM

পিএনএস ডেস্ক : গত কয়েকদিনে ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে অবিরাম বর্ষণ। টানা বর্ষণের পাশাপাশি উজান থেকে প্রবল স্রোত নামায় ডুবে যাচ্ছে মাঠঘাট আর মানুষের বসতবাড়ি। পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেজন্য চোখ রাঙাচ্ছে বড় ধরনের বন্যা। অন্তত ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বন্যার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে শুক্রবার (১২ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এজন্য ১০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে ৬২৮টি পয়েন্ট ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এর মধ্যে ২৬টি পয়েন্ট ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’। তবে সরকার ৫২১টি পয়েন্টকে ঝুঁকিমুক্ত করতে দ্রুত কাজ করছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী জানান, মানিকগঞ্জ ও জামালপুরে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। লালমনিরহাটেও তিস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এসব মোকাবিলায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

প্রত্যেকটি বন্যা-উপদ্রুত জেলায় প্রথমে ২০০ মেট্রিক টন এবং পরে ৩০০ মেট্রিক টন খাবার পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ডা. এনামুর রহমান। তিনি আরও জানান, প্রত্যেক জেলায় ২ হাজার প্যাকেট উন্নতমানের শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল টিম গঠন করে কাজ করছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা হচ্ছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকরা মাঠ পর্যায়ে ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং পরিস্থিতি তদারকি করছেন।

কুড়িগ্রাম: উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ সবকয়েকটি নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ায় বন্যার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করা সম্ভাবনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার (২৩ দশমিক ৭০), ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ০৯ সেন্টিমিটার (২৬ দশমিক ৫০) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের নদ-নদী অববাহিকার চর-দ্বীপচরগুলোতে সম্ভাব্য বন্যাবস্থায় নৌ ডাকাতি প্রতিরোধসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলার ১১টি থানা পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান।

ইতোমধ্যেই নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার মানুষজন।

নেত্রকোণা: টানা চারদিন ধরে চলছে অবিরাম বর্ষণ। নদীনালা ও খালবিলের পানি উপচে পড়ে নেত্রকোণার বিভিন্ন স্থানে ডুবে যাচ্ছে মাঠঘাট আর মানুষের বসতবাড়ি। পানিতে ছেয়ে যাচ্ছে স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিশেষত জেলার কলমাকান্দা, দুর্গাপুর ও হাওরখ্যাত খালিয়াজুরী উপজেলায় পাহাড়ি ঢল আর বৃষ্টিতে পানির পরিমাণ বেড়েই চলছে। শান্ত নদী আর টলটলে জলের হাওরগুলো ধরেছে ভিন্ন রূপ; উথাল-পাতাল আর অথৈ-উচ্ছ্বাস।এসব উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে তারা নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউনিয়ন পরিষদে আশ্রয় নিচ্ছেন।

দুর্যোগ কবলিত মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করছে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পৌঁছে দিচ্ছে সকলের হাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, পাহাড়ি ঢল আর অবিরত বর্ষণে উপজেলার প্রধান নদী সোমেশ্বরীসহ অন্যান্য নদীগুলোর পানি বেড়ে গেছে।

গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, কাকৈরগড়া ও বিরিশিরি ইউনিয়নের ১১ টি গ্রাম ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩৮০ টি পরিবার। পরে তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আশ্রয় দেয়া হয়। বন্যা দুর্গত মানুষদের ১০ মেট্রিক চাল ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দা দেয়া হয়েছে।

সুনামগঞ্জ: পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া জেলার ২১৮টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ২২টি, দোয়ারাবাজার উপজেলার ১৮টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ২৭টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার তিনটি, ছাতক উপজেলার ১০টি, জামালগঞ্জ উপজেলার ৩০টি, তাহিরপুর উপজেলার ১৯টি ও ধর্মপাশা উপজেলার ৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ করা হয়েছে।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন