মালয়েশিয়া থেকে ৫০ হাজার কর্মী ফিরছেন

  13-12-2019 10:39AM


পিএনএস ডেস্ক: মালয়েশিয়া সরকারের ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অবৈধ বিদেশী শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে প্রতিদিন দেশটির ইমিগ্রেশনে গিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। জেল-জরিমানার ভয়ে এই সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে মালয়েশিয়া সরকারের নতুন এই পদ্ধতির সুযোগ নিয়ে অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। সব কিছু ঠিক থাকলে ঘোষিত সময় অর্থাৎ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার কর্মী দেশে ফিরতে পারেন বলে হাইকমিশন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

এ দিকে যেসব শ্রমিক স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে ইমিগ্রেশন অফিসগুলো থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়েছেন তাদের দেশে ফেরার জন্য বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট পেতে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় ফেরার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা, মালিন্দ এয়ার এশিয়া ও মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের কোনো ক্লাসের টিকিট স্বাভাবিক দামে পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে গেলেই বলা হচ্ছে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো ক্লাসেরই টিকিট নেই। আর যারা পাচ্ছেন তাদের দ্বিগুণ, আড়াই গুণ দামে টিকিট কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকরা যদি ফিরতে না পারেন, তাহলে তাদের পরে দেশটির আইন অনুযায়ী জেল জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এমন ঘোষণা দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আগেই দেয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির বিষয়ে বলেন, যারা দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছে, তাদের কোনো ধরনের জেল-জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরতে সুযোগ দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী ডেডলাইন হচ্ছে ৩১ জানুয়ারি। এই সময়ের মধ্যে যারা ফিরবে না তাদের পরবর্তীতে সমস্যায় পড়তে হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ব্যাক ফর গুড সুযোগ নিতে অবৈধ শ্রমিকদের হাইকমিশন থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। এতে শ্রমিকরা সাড়াও দিয়েছেন। তবে উড়োজাহাজের সিট না পাওয়ায় অনেকের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহম্মদ শহীদুল ইসলাম, পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে গত ২৯ নভেম্বর চিঠি দেন। এই চিঠি লেখার পরই সরকারের নির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬টি বিশেষ ফ্লাইট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রত্যেক কর্মীর জন্য (বিমান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়) মোট ১২ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, ভর্তুকি হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০০ টাকা এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা ভর্তুকি দেয়া হবে। এতে মালয়েশিয়া থেকে কম টাকায় বিমানের ফ্লাইটে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার অতিরিক্ত শ্রমিক ফিরতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। গতকাল ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সির মালিক কবির আহমেদ বলেন, ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিটের বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না। আর যেসব টিকিট এই মুহূর্তে অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ। তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই রুটের যে টিকিটের দাম ২৪ হাজার টাকা সেটি এখন ৩৮-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত সার্ভারে দেখাচ্ছে। আর বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর টিকিটের মূল্য ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতি যাত্রীর জন্য দুই হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তরে গতকাল সন্ধ্যার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোকাব্বির হোসেন বলেন, আমি কেন টাকা দেবো, আমি কোনো টাকাই দিচ্ছি না। টাকা দেবে সরকার। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ডিজি বলেছেন প্রত্যেক কর্মীর জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেবেন। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কাকে দিচ্ছেন এটা তারা জানেন। আমাকে তারা বলেছেন, আমার ডিস্ট্রিক্ট ম্যানেজারকে তার লোকদের লিস্ট দিলে ১০ হাজার টাকা কম দামে টিকিট দেবে তারা। তখন আমিও দুই হাজার টাকা কম দেবো। এই ১২ হাজার টাকা কমে মানুষ আসবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় আমাকে ১০ হাজার টাকা করে দেবে। আমার ভাড়া পড়বে ৩৩ হাজার টাকা। বিমান টিকিটের ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার এয়ারক্রাফটটি যে আমি অতিরিক্ত দিচ্ছি এপাশ থেকে যে খালি যাবে এই খরচ কে দেবে? আমার তো এখানে এয়ারক্রাফট দেয়ার দরকার নেই। আমার এয়ারক্রাফট যেতে খরচ লাগবে না। অন্যরা (এয়ারলাইন্স) তো ৫০ হাজার টাকা চাচ্ছে। এর আগে বিমানের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি সুবিধায় ১৪ ডিসেম্বর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৬টি অতিরিক্ত ফ্লাইট শুরু হবে, যা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।


প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে বলেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির আওতায় আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। শুধু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ যে ১৬টি ফ্লাইটে শ্রমিকরা ফিরবে আমরা শুধু তাদের প্রত্যেকের টিকিট বাবদ ১০ হাজার টাকা করে ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এবারের ব্যাক ফর গুড কর্মসূচিতে বিভিন্ন দেশের এক লাখ দুই হাজার ৬১৮ অবৈধ অভিবাসী অংশ নিয়েছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি-জেনারেল তান শ্রী আলভি ইব্রাহিম বলেছেন, ইন্দোনেশিয়ানরা সবচেয়ে বেশি ৩৭,০৪৮, এরপরে রয়েছে বাংলাদেশ ৩১,১০১, ভারত ১,১০৭, পাকিস্তান ৫,২৫৮ এবং বাকিরা অন্যান্য দেশের। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির মাধ্যমে সব অবৈধ অভিবাসী নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন