সীমান্ত এলাকা আলোকিত করছে বিজিবি

  07-12-2016 04:32PM

পিএনএস: বিদ্যুতের আলো কী সেটা আমরা কখনো দেখিনি। বিকেল হলেই আমাদের সীমান্ত এলাকায় অন্ধকার নেমে আসে। বাবা-মা সারাদিন খেতে কাজ করার পর সন্ধ্যায় কিছু খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে আমিও ঘুমিয়ে পড়তাম। এখন আমাদের এলাকায় রাতের বেলায় অন্ধকার হয় না। সবার বাড়ি এখন মিট মিট করে আলো জ্বলে। সেই আলোতে আমিও এখন পড়া-লেখা করি। নিয়মিত স্কুলে যাই।

কথাগুলো বলছিল ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলা বেতনা সীমান্তের চন্ডিপুর মানিকখাড়ি গ্রামের ফাহিম (৮)।

ফাহিমের মত অনেক শিশু এখন নিয়মিত বিদ্যুতের আলোতে পড়ালেখা করার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে সীমান্ত এলাকা।সীমান্ত এলাকার বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকায় তেমন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এসব এলাকার মানুষ নানা রকম সীমান্ত চোরাচালানের সাথে জড়িত। সীমান্ত এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বিকেল হতেই অন্ধকার নেমে আসে। আর সেই অন্ধকারকে কাজে লাগায় কতিপয় চোরাচালানী। তারা রাতের বেলায় সীমান্তের ওইপাড়ে চলে যায়। ভোর বেলা গরু, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাই পথে এই দেশে নিয়ে চলে আসে। অনেক সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এই এলাকা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে সহজেই।

তাই ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন সীমান্ত এলাকায় মানুষকে সচেতনতা ও অপরাধ দমনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়। যাতে সহজেই মানুষ সকল অপকর্ম ছেড়ে ভাল পথে উপার্জন করে। শিশুরা যেন নিয়মিত স্কুলে যেতে পারে সেই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিজিবি।

সেই লক্ষ্যে হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তে মানিকখড়ি গ্রামে সীমান্ত অপরাধ থেকে সরিয়ে ভালো পথে উর্পাজন করার জন্য ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন কয়েকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেমন- সীমান্ত এলাকাগুলোতে সোলার প্লান প্রকল্প, নদীতে মাছের পোনা চাষ, গরুর খামার, মধু চাষ ও সবজি চাষ।

সিরাজুল ইসলাম জানান, আমি আগে সীমান্তের ওই পাড়ে চোরাই পথে গরু আনতাম। এখণ ওই পাড়ে আমাদের গ্রামের কেউ যায় না। আমাদের ছেলে-মেয়েরা এখন রাতের বেলায় বিদ্যুতের আলোয় পড়া লেখা করে। পরের দিন স্কুলে যায়। আমি নদীতে পোনা চাষ করি। এখন আর বিএসএফ’র গুলি খাওয়ার ভয় নাই। অনেক ভাল আছি পরিবার নিয়ে।

সবুজ (৭) নামে এক শিশু জানায়, আমরা কখনো রাতের বেলায় আলো দেখি নাই। এখন আমাদের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে রাতে আলো জ্বলে। সেই আলোতে আমরা পড়া-লেখা করি।

জয়নুল হক জানান, আমার পরিবারের অনেকে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। চোরাচালান করার সময় ১০ বছর আগে বিএসএফর’র গুলিতে আমার বড় ভাই মারা যায়। পরিবারের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। বিজিবির উদ্যোগে আমরা পরিবারের সবাই চোরাচালন বন্ধ করে সৎভাবে বেঁচে থাকার লড়াই করছি। এখন নিজ জমিতে সবজি চাষ, গরু পালন ও মাছ চাষ করছি। ভারতে চোরাই পথে কেউ যায় না এখন।

হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, আগে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান করতে গিয়ে অনেকের প্রাণ গিয়েছিল। কিন্তু এখন আর কেউ চোরাচালান করে না। সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থান না থাকায় চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এখন ৩০ বর্ডার গার্ডের সহযোগিতায় সীমান্তে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বিজিবি এ এলাকার মানুষকে ভালো পথে উপার্জন করার পথ দেখিয়েছে। তাই জেলার প্রতিটি সীমান্তে যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তাহলে চোরাচালান নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ঠাকুরগাঁও ৩০ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের পরিচালক তূষার বিন ইউনূস জানান, আমি যোগদানের পরে এই এলাকায় একজন চোরাচালান করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে মারা যায়। দেখলাম এদের কর্মের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এরা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। তাই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য আমি এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। এখন আর আগের মত কেউ চোরাচালান করে না। যারা এই চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিল তারা কমবেশি সবাই এখন বিজিবির সহায়তায় সঠিক পথে কর্ম করে সংসার চালাচ্ছে।


পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন