সৌন্দর্যে ঘেরা আশারচর ও টেংরাগিরি ইকোপার্ক

  17-01-2017 10:32PM

পিএনএস, মো. আবু সাইদ খোকন আমতলী (বরগুনা) : সবুজ ঘন ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। সৈকতের তটরেখায় লাল কাঁকড়াদের ছুটোছুটি। শেষ বিকেলে দিগন্ত রেখায় সূর্যাস্তের দৃশ্য। সকাল-দুপুর-বিকেল পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ইকোপার্ক ও চর । নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়েছে চারপাশে। চিকচিক বালিতে যেন ভোরের কোমল সূর্য আলো ছড়ায়। সৌন্দর্য ঘেরা এই জায়গাটির নাম ‘সোনকাটা ইকোপার্ক ও আশারচর ’। এটির অবস্থান বরগুনার তালতলী উপজেলা সদর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনাকাটা ইউনিয়নে।

সোনাকাটা ইকোপার্কে ও আশার চরে সোনা নেই ঠিকই, কিন্তু আছে সোনার রঙে রাঙিত বালি। সূর্যের রশ্মি যখন বালির ওপর পড়ে তখন দূর থেকে মনে হয়, সত্যি সত্যিই সোনার আবির্ভাব হয়েছে এখানে। সোনাকাটা ইকোপর্কে রয়েছে বিশাল বনভূমি। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, সুন্দরবনের পরেই আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সুবিশাল সমুদ্র সৈকত।

এলাকাবাসীর কাছে সোনাকাটা ও আশারচরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক। সাগরে যখন জোয়ারের জল উথলে ওঠে তখন চাদের আলোয় অন্য এক সৌন্দর্যে রূপ নেয় এই আশারচর । প্রতিনিয়তই তীরে আছড়ে পড়ছে ছোট-বড় ঢেউ। ঝুরঝুরে বালি গলে পড়ছে লোনা জলে। সবুজ ঘন অরণ্যের নিবিড়তা ছেয়ে আছে চারপাশজুড়ে। মৃদু মৃদু বাতাস আর ঢেউয়ের তালে এই চরের ছোট-ছোট বাঁওড়ে অথবা খালে চলে জেলেদের নৌকাগুলো। বিভিন্ন ধরনের জাল ফেলে মাছ ধরছে জেলেরা।

বনাঞ্চলের কাছাকাছি গেলে হয়তো সহজেই চোখ পড়বে, হরিণ, শুকর, বানর, মেছো বাঘসহ আরও সব বন্য প্রাণীর ওপর। সৈকতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ের মনোরম দৃশ্য। চোখে পড়বে নানা ডানা ঝাপটানো নাম না জানা অতিথি পাখির দল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সন্ধ্যার পরিবেশটুকু উপভোগ করা যাবে নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে। শীত মৌসুমে এলেই পরিযায়ী ওইসব পাখিগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে আসে। আবার শীত মৌসুম শেষ হলেই নিজ দেশে ফিরে যায়।

দেশের মানচিত্রটি সামনে ধরলে দেখা যাবে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থান করছে সাগরকন্যা হিসেবে খ্যাত তালতলীর সোনাকাট ইউপির টেংরাগিরি ইকোপার্ক ও আশার চর ।

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা থেকে এসব স্থানে ট্রলারে যাতায়াতের সুযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে পর্যটকেরা এসব স্থানে আসেন কিছুটা প্রশান্তির খোঁজে।

অথচ সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এসব স্থানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে পর্যটকদের যাতায়াত সহজ হতে পারে, আর সরকারও আয় করতে পারে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।সরকার ১৯৬০ সালে এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। আর ১৯৬৭ সালে নামকরণ হয় টেংরাগিরি বন নামে। চোখজুড়ানো এই বনের আয়তন ১৩ হাজার ৬৪৪ একর। সুন্দরবনের পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় এ অরন্যে প্রবাহিত অসংখ্য ছোট খাল দিনে দু’বার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়। লবণাক্ত ও মিষ্টি মাটির অপূর্ব মিশ্রণের কারণে এই বনে রয়েছে বিলুপ্ত প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ, পশু-পাখি এবং সরিসৃপের বসবাস। কয়েকজন বনরক্ষী ছাড়া এখানে কোন স্থায়ীভাবে বসবাস নেই।

বনের সবুজ অরণ্যর মাঝে প্রবাহিত অসংখ্য ছোট খালের ওপর রয়েছে বাঁশের সাঁকো, বন বিভাগের রেস্টহাউস, মিঠা পানির পুকুর, পিকনিক কর্নার। ঘন গহিন অরণ্যে পেরিয়ে নামা যায় সৈকতে। নাগরিক কোলাহল থেকে ক্ষণিক সময় সাগরের বিশালতার মাঝে সবুজ এ অরন্য মুগ্ধ করে ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে। বনরক্ষীরা জানান, সম্প্রতি বেড়ে গেছে বনদস্যুদের উৎপাত। সীমিত লোকবল ও যানবাহন সমস্যার কারনে বনদস্যুদের তৎপরতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছেনা বনরক্ষীরা। জীবনের ঝুকি নিয়ে বন রক্ষা করেও বনরক্ষীরা পাচ্ছেনা ঝুকি ভাতা।

এছাড়াও বারবার প্রলংয়নকারী ঘুর্নিঝড়ের আঘাত এবং জলবায়ু জনিত পরিবর্তনের ফলে বালু ও মাটি ক্ষয়ের কারনে বনের আয়তনে যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি অসংখ্য গাছ মরে যাচ্ছে। বন কর্মকর্তা সজিব কুমার মজুমদার জানান, বন্যপ্রানীর স্বাভাবিক বিচরন যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিক বিবেচনায় রেখে প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকের এখানে ভ্রমনের আরো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন