এক পায়ে তিন কিলোমিটার হেঁটে কলেজে যান ইয়াছমিন

  30-03-2024 11:19AM



পিএনএস ডেস্ক: এক পায়ে ক্র্যাচে ভর দিয়ে প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে নিয়মিত কলেজে যায় ইয়াছমিন আক্তার। তার এক পা নেই, আরেক পা থাকলেও তা প্রায় শীর্ণ। বলছি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাংচিল গ্রামের দিনমজুর নুরনবীর মেয়ে ইয়াছমিন আক্তারের কথা।

দেড় বছর বয়সে এক পা হারিয়ে এমন বাস্তবতা নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন জীবনের ১৯টি বছর। তবু কঠিন জীবন সংগ্রামে দমে যাননি। দারিদ্রতা আর শারীরিক অক্ষমতাকে জয় করে এখন জেলার সদর উপজেলার ড.বশির আহমদ কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষের মানবিক বিভাগে পড়ছেন তিনি।

২০০৫ সালের ঘটনা। মা শিশু ইয়াছমিনকে বিছানায় রেখে পাশের বাড়ি থেকে পানিতে আনতে যায়। তখন চৌকির পাশে থাকা চেরাগ থেকে মশারিতে আগুন ধরে যায়। ওই আগুনে ইয়াছমিনের দুই পা দগ্ধ হয়ে যায়। পরে ডাক্তারের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়। পায়ের রগ পুড়ে অপর পাও অনেকটা শীর্ণ হয়ে যায়।

এরপরও উদ্যম ইচ্ছা শক্তিতে প্রথমে ভর্তি হন স্থানীয় পশ্চিম গাংচিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে গাংচিল কবি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে দেড় কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে প্রথমে স্থানীয় গাংচিল বাজারে যান। পরে সেখান থেকে গাড়ি করে বাড়ি থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমটিার দূরে কলেজে ক্লাস করছেন নিয়মিত। আবার বাড়ি ফিরতেও তাকে হাঁটতে হয় দেড় কিলোমিটার পথ। এভাবে ব্যয়ে চলেছেন জীবনের ভার। বছরে ৫ হাজার টাকা প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতা পান। কিন্তু সরকারের এ সহযোগিতা একেবারেই অপ্রতুল।

ইয়াছমিন আক্তার বলেন, অনেক কষ্ট করে আমি লেখাপড়া করছি। পড়ালেখা শেষ করে আমি শিক্ষক হতে চাই। সবার সহযোগিতায় একটি কৃত্রিম পা সংযোজন হলে আমার স্বপ্ন পূরণ সহজ হবে।

ইয়াছমিনের বাবা নুরনবী বলেন, আমি একজন দিনমজুর। তবে শত কষ্ট সহ্য করে হলে মেয়েকে লেখাপড়া করাতে চাই। তার একটি কৃত্রিম পা সংযোজনে সমাজের বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা।

ড.বশির আহমদ কলেজের প্রভাষক এ.এইচ তানিম বলেন, আমরা তার কষ্টকে মূল্যায়ন করি। একইসঙ্গে তার চেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। কেননা ইয়াছমিন যেটা সম্ভব করে চলেছেন তা সবার কাছেই অনুপ্রেরণা ও দৃষ্টান্ত।

ড.বশির আহমদ কলেজের অধ্যক্ষ আঞ্জুমান আরা মুক্তা বলেন, ইয়াছমিন প্রতিদিন তিন কিলোমিটার পথ এক পায়ে হেঁটে কলেজে আসে। সে একজন জীবন সংগ্রামী তরুণী। অদম্য প্রচেষ্ঠায় তার গল্পটি হয়ে উঠেছে প্রেরণার। দিনমজুর বাবা সব কিছু হারিয়ে মেয়েকে সারিয়ে তুললেও স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারে না সে। তাদের আকুতি যদি কৃত্রিম পা দিয়ে হাঁটতে পারত ইয়াসমিন।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন