প্রতারকদের উৎপাত টার্মিনালে মৌসুমি ছিনতাইকারী

  21-06-2017 12:33AM


পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের একটি বাস কাউন্টারের বিশ্রাম কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন মোর্শেদ মুকুল। তার গন্তব্য ময়মনসিংহ। এনা পরিবহনের টিকিট নিয়ে ঘুরতে দেখেন একজনকে। কাউন্টারের লোক ভেবে মোর্শেদ মুকুল পছন্দমতো সিটের টিকিট নেন ৫টি। একটি ১ হাজার ও ১টি ৫শ’ টাকার নোট দিলে ওই লোক ভাঙতি আনার কথা বলে চম্পট দেয়। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও ওই লোক আর না আসায় মোর্শেদ মুকুল বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এনা পরিবহনের কাউন্টারের দায়িত্ব পালনরতরা জানান এই পরিবহনের টিকিট সংশ্লিষ্ট কাউন্টার রুম ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। গত ১৪ই জুন কল্যাণপুরের হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারের সামনে নিজের ব্যাগ লাগেজ রেখে পাশের দোকানে টাকার ভাংতি আনতে গিয়েছিলেন সোনিয়া ফেরদৌস ভূঁইয়া। কিছুক্ষণ পর এসে দেখেন তার ব্যাগ, লাগেজ নেই। স্বর্ণের গহনা, দামী কাপড় ও ১০ হাজার টাকা ছিল ওই ব্যাগ লাগেজে। কাউন্টারের দায়িত্বরতরা জানান, তারা কিছুই জানেন না। রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য ১৮ই জুন গাবতলী বাস টার্মিনালে এসেছিলেন শারমিন সোমা। গোল্ডেন লাইন পরিবহনের যাত্রী হিসেবে অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। অপেক্ষার এক ফাঁকে তার ব্যাগ নিয়ে চম্পট দেয় এক ছিনতাইকারী।

শুধু মহাখালী, গাবতলী কিংবা কল্যাণপুর নয়। ঈদ যাত্রাকে কেন্দ্র রাজধানীর প্রায় সব বাস টার্মিনালে এভাবেই ছিনতাইকারী ও প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে মূল্যবান সামগ্রী খোয়াচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। বিভিন্ন কৌশলে যাত্রীদের টাকা, গহনাসহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল ছিনিয়ে নিচ্ছে মৌসুমী ছিনতাইকারীরা। ভুক্তবোগী, পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাই ও প্রতারক চক্র। যাত্রীদের অভিযোগ এসব ছিনতাইকারী ও প্রতারকরা সবসময় বাস কাউন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেশে ঘোরাঘুরি করে। কখনও বা যাত্রীবেশেও থাকে। সময়-সুযোগ মতো তারা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা বা মালামাল চুরি বা ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। মহাখালী এনা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার আরমান আলী বলেন, আমরা টিকিট কাউন্টার থেকে মাইকে ডেকে ডেকে টিকিট বিক্রি করি। এর বাইরে কোথাও টিকিট বিক্রি করি না। প্রতি ৫ মিনিট অন্তর ময়মনসিংহের উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যায়। এর জন্য যাত্রীদের আগে থেকে টিকিট কেনার কোনো প্রয়োজন হয় না। তিনি বলেন, এই (মহাখালী) টার্মিনালে একটি চোর-ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা যাত্রীর মালামালসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। কাউন্টারের বাইরে বাসের টিকিট যায় কিভাবে জানতে চাইলে আরমান আলী বলেন, হয়তো ওই প্রতারক আমাদের অফিস থেকে কোনো এক ফাঁকে টিকিট চুরি করেছে। কয়েকদিন আগেও এমন অভিযোগ পেয়েছিলাম। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাকে আমরা চিনি। কিন্তু ওই ঘটনার পর বহুদিন আমরা ওই প্রতারককে এই এলাকায় দেখি নাই।
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার একাধিক যাত্রীর অভিযোগ- টার্মিনালের এসব চোর-ছিনতাইকারীর যোগাযোগ রয়েছে কিছু পরিবহন শ্রমিকের সঙ্গে।

তারা মিলেমিশে এসব ছিনতাই ও প্রতারণা করে। যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, মহাখালী টার্মিনালের বেশির ভাগ কাউন্টারই সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত। এর মধ্যে বাইরের লোক চুরি করে কিভাবে? তবিবুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, কিছুদিন আগে মহাখালী টার্মিনাল থেকে আমি টিকিট প্রতারকের খপ্পরে পড়েছিলাম। কাউন্টারের লোকদের কাছে অভিযোগ করলে তারা উল্টো আমাকেই কথা শুনিয়ে দেন। গাবতলী থেকে টিকিট প্রতারণার শিকার হওয়ার অপর এক যাত্রী সোহাগ হোসেন বলেন, কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে হাঁক-ডাক করা এক লোকের কাছ থেকে সাকুরা পরিবহনের একটি টিকিট কিনেছিলাম। গাড়িতে উঠে দেখি এক সিট দুইজনের কাছে বিক্রি হয়েছে। আমার সিটে আগে থেকেই একজন লোক বসে রয়েছেন। সুপারভাইজারকে বললে তিনি বলেন, তারা এই টিকিট বিক্রি করেনি। পরে বাধ্য হয়ে আবার টিকিট কিনে অন্য গাড়িতে বাড়ি যেতে হয়। সোহাগ হোসেনের প্রশ্ন ওই লোকটা যদি কাউন্টারের লোক না হয় তাহলে কাউন্টারের সামনে থেকে তার কাছে একই পরিবহনের টিকিট বিক্রি করল কিভাবে? বেশক’জন যাত্রী আলাপকালে জানান, মহাখালী টার্মিনালের কিছু কিছু কাউন্টারে সিসি ক্যামেরা নেই। যে কারণে কেউ চুরি বা ছিনতাই করলে ধরারও কোনো সুযোগ নেই।

এ ছাড়া কাউন্টারের লোকেরা যদি মিলেমিশে ছিনতাই করে তাহলে সেখানে কারো কিছু করার থাকে না। ঈদ উপলক্ষে গাবতলী বাস টার্মিনালে নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসআই (উপ-পরিদর্শক) মাসুদ রানা জানান, ছিনতাই বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাজনিত ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন না। যে কারণে আমরা ব্যবস্থাও নিতে পারি না। তবে, ঘটনা ঘটলেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন