পুরান ঢাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে রমরমা চাঁদাবাজি

  12-10-2017 04:16AM

পিএনএস ডেস্ক: পুরান ঢাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি করছেন সাজ্জাদ হোসেন মিনার নামে এক ব্যক্তি। বিভিন্ন জায়গায় তিনি নিজেকে পুলিশের সোর্স এবং পুলিশ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষদের হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

জানা যায়, সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি এলাকায় প্রায় ১০-১২ বছর ধরে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে, পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে দেওয়া, ডিসির নিকট নালিশ করা, মারধর করা করাসহ নানান ভয় দেখিয়ে জোরকরে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে এবং ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরান ঢাকার মহানগর দায়রা জর্জ আদালত এলাকা, শাঁখারি বাজার, বাবু বাজার, ইসলামপুর, তাঁতিবাজার এবং ইংলিশ রোড এলাকার প্রায় দুই-তিন শতাধিক দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে মিনার। নির্যাতনের শিকার রবিউল নামে এক মুদি দোকানদার বলেন, ‘মিনার নামে ওই ব্যক্তি আমার কাছে প্রায়ই আসে। সে বিনা টাকায় দোকানের বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে যায়। কিছু বললে মারধর করে। কয়েকদিন আগে টাকা না দিয়ে কিছু জিনিস নিতে চাইলে আমি বাধা দিলে আমাকে মাইর দেয়’।

স্থানীয় লোকজন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সে এই এলাকায় কয়েক জন মহিলাদের দিয়ে যৌন কর্মের লোভ দেখিয়ে লোক হয়রানি করে এবং টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়াও মাদক সেবন করে মানুষকে উল্টাপাল্টা গালাগালি করে।

দোকানদারদের কাছে টাকা চাইলে যদি না দেয়া হয় হাতের কাছে যা থাকে তাই নিয়ে অন্য দোকানে বিক্রি করে দেয়। সে শাঁখারি বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে হপ্তা (সাপ্তাহিক চাঁদা) তোলে নিয়মিত।

ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। আসলে সে কি সাংবাদিক না চাঁদাবাজ এমন প্রশ্ন অনেকের। অভিযোগ আছে এই কাজে এলাকার দুই একজন লোক তাকে সহযোগিতা করছে। মাঝে মাঝে পুলিশ পরিচয়ে অপরিচিত লোকজন ধরে তাকে তল্লাসি করার নামে তার টাকা পয়সা নিয়ে নেয়। ফুটপাতের দোকাদাররা চাঁদা দিতে রাজি না হলে মারধর সহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। যেমনটা বলছিলেন মুরগী বিক্রেতা চুন্নু, ‘আমার দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে তাকে একটা মুরগী দেয়া লাগে। না দিলে আমাকে মাইর দেয় এবং নানা ধরনের হুমকি ধামকি দেয়’।

একই অভিযোগ কাঁচামালের দোকানদার আলমগীর, ফল বিক্রেতা মনির আহমেদ, ডাব বিক্রেতা মোশাররফসহ অনেকের। এ বিষয়ে সাজ্জাদ হোসেন নয়নের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চেয়েও সম্ভব হয়নি। জানা যায় তার মুঠো ফোনের নাম্বার এবং বাসস্থান কিছুদিন পর পর পরিবর্তন করা হয়।

টাইম টোয়েন্টিফোর ডট নেট নামে একটি অনলাইন পোর্টালের ফটো-সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই সমস্ত কর্মকাণ্ডলো চালিয়ে যাচ্ছে মিনার। উল্লেখিত পত্রিকার সাংবাদিক কি না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পোর্টালটির সম্পাদক হাবিবুর রহমানের সাথে মোবাইলে কথা বলা হয়। তিনি বলেন, ‘সাজ্জাদ হোসেন মিনার আমার অনলাইন পত্রিকায় ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করে’। চাঁদাবাজিসহ নানান অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি জানি না, তবে যদি কোনো অভিযোগ আসে তবে তাকে পত্রিকায় রাখা হবে না। '

এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সাঈদুর রহমান বলেন, ‘মিনার নামে এক ব্যক্তি নিজেকে পুলিশ সদস্য এবং সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা নেয়ার কথা জেনেছি। যে যায়গাগুলোতে টাকা তোলে তার বেশির ভাগই কতোয়ালি থানায় পড়েছে। আমার পোর্সদেরকে বলা আছে যাতে এই এলাকায় পাওয়া গেলে তাকে হাতে নাতে ধরে। ' বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম মশিউর রহমান বলেন, ‘একজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এসেছিলো। হতে পারে সেই মিনার। '


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন