`হলিক্রস ছাত্রী স্বর্ণার মৃত্যু ব্লু হোয়েলে নয়, ব্ল্যাকমেইলের কারণে'

  14-10-2017 08:10PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের ছাত্রী অপূর্বা বর্ধন স্বর্ণা ব্লু হোয়েল কারণে আত্মহত্যা করেনি, অন্য কোনো ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইন্টারনেটে আসক্ত হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল, ব্লু হোয়েল গেমের নির্দেশনায় সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তে স্বর্ণার ব্লু হোয়েল গেম খেলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গত ৫ অক্টোবর রাতে ধানমন্ডি সেন্ট্রাল রোডের বাসায় নিজের পড়ার কক্ষে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় অপূর্বা বর্মণ স্বর্ণার (১৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বর্ণা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মণের মেয়ে এবং ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

ঘটনার পর স্বর্ণার বাবার সন্দেহ ছিল, তার আদরের মেয়ে ঢুকে পড়েছিল ইন্টারনেটভিত্তিক ডেথ গেমস ব্লু হোয়েলে। তার লাশের পাশ থেকে ব্লু হোয়েলের কিউরেটরের নির্দেশ মতো লিখে যাওয়া একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়। যা নিয়ে ঘটনার পরপরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ওই চিরকুটে বড় করে লেখা ছিল, আমার আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়। লেখা শেষে গেমসের নির্দেশনা মতো একটি হাসির চিহ্ন আঁকা। এরপরই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং স্বর্ণার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম (সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং) বিভাগ।

স্বর্ণার মৃত্যুর কয়েকদিন পর অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্মণ বলেছিলেন, মেয়ের মৃত্যুর পর আমি ব্লু হোয়েলের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করি। জেনেছি, রাশিয়ার এক সাইকিস্ট সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এই গেমটি উদ্ভাবন ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে নাকি বাংলাদেশে আমার মেয়েসহ অন্তত ৬১ জন ব্লু হোয়েলের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভারতে এই সংখ্যা ১৩০ বলে জানা গেছে। নিজ দেশ রাশিয়াতে এর শিকার হয়ে ১৮১ জন আত্মঘাতী হয়েছে।

এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ। বাংলাদেশের আইনে যদি এই অপরাধের জন্য উদ্ভাবকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ থাকে আমি মামলা করব। এই গেমে একবার ঢুকলে আর বের হওয়া যায় না। তাই আমার অনুরোধ কেউ যেন কৌতূহলের বশেও এই গেমসে না ঢোকে।

এ বিষয়ে কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইমের এডিসি নাজমুল ইসলাম বলেন, স্বর্ণার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি নষ্ট। তার স্মার্টফোন এনে টেস্ট করে ব্লু হোয়েল গেম খেলার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর কারণ যাই হোক, ব্লু হোয়েল নয়।

তিনি আরো বলেন, ব্লু হোয়েল গেমটি যদি তার মোবাইল থেকে আনইন্সস্টলও করা হয় তবুও গেমটি খেলার কোনো না কোনো চিহ্ন বা আলামত থাকবে। সেটি ফরেনসিকে উঠে আসার কথা ছিল। আত্মহত্যার কয়েকদিন আগে স্বর্ণা রকমারি ডটকমের মাধ্যমে অনেকগুলো ভূতের বই কিনেছিল। ভূতের বই পড়ত সে।

কিন্তু তার মধ্যে ব্লু হোয়েল খেলার কোনো আলামত দেখেনি পরিবার। সুইসাইডাল নোটে স্বর্ণা লিখেছিল, নো ওয়ান রেসপনসিবল ফর মাই ডেথ। এরপর সে একটি ইমো এঁকেছিল, যেটি মুখের অবয়ব, এক চোখ মাত্রাতিরিক্ত ছোট।

এদিকে স্বর্ণার মৃত্যুর পর সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে পুলিশ। প্রতিবেদনে শরীরের কোথাও ব্লু হোয়েল গেমের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়নি। তার পায়ে শুধু একটি কাটার দাগ ছিল। তাও এটি প্রায় মাস খানেক আগের হতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বর্ণার আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবার পক্ষ থেকে কোনো সাধারণ ডায়েরি (জিডি) বা মামলা করা হয়নি।

এ বিষয়ে নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমান বলেন, আমরা স্বর্ণার আত্মহত্যার বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্তে তার সুইসাইডাল নোটের সাথে হাতের লেখার মিল পাওয়া গেছে। তবে ব্লু হোয়েল বা অন্য কোনো গেমের নির্দেশনায় সে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রমাণ মেলেনি।

স্বর্ণার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্বর্ণা বিদ্যালয়ের ফার্স্ট গার্ল হিসেবে পরিচিত ছিল। ওয়াইডব্লিউসিএ হাইয়ার সেকেন্ডারি গার্লস স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্মিলিত মেধা তালিকায় তার অবস্থান ছিল প্রথম।

ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ফার্মগেটের হলিক্রস স্কুলে। হলিক্রস স্কুলে ভর্তির পর থেকে বদলে যেতে থাকে সে। পড়াশোনার জন্য সে ব্যবহার শুরু করে ইন্টারনেট। কয়েক বছর আগে থেকেই অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোনও ব্যবহার শুরু করে স্বর্ণা। ফেসবুকসহ সোসাল মিডিয়া ব্যবহার চলছিল।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন