রামপালে সুন্দরবন প্রাঃ হসপিটাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রমরমা ব্যবসা, পরিচালক নাজমুলের খুটির জোর কোথায়?

  17-09-2018 04:04PM

পিএনএস, স্টাফ রিপোর্টার (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গিলাতলা গ্রামের হাওলাদার ইকবাল হোসেনের স্ত্রী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) গর্ভধারণ করেছেন কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য তিনি যান ফয়লাহাটের সুন্দরবন প্রাইভেট হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। সেখানে গিয়ে তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাফী করান। রিপোর্টে জানা যায় তিনি গর্ভবতী নন কিন্তু জরায়ুতে টিউমার। এমন রিপোর্টে আতঙ্কিত হন স্বামী ইকবাল হোসেন ও তার স্ত্রী। তারা বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য খুলনাতে গিয়ে পুনরায় আল্ট্রাসনোগ্রাফী করালে সেখানে রিপোর্টে আসে রোগীনির এ্যাপেন্ডিক্স জনিত সমস্যা। পরে ওই রোগীনিকে এ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করার পর তিনি সুস্থ্য হন। রোগীর স্বজনেরা ওই হসপিটালের পরিচালকে পাকড়াও করলে পরিচালক অর্থদন্ড দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ইতিপূর্বে ওই প্রতিষ্ঠানে গত ইং ১৪/০৮/১৭ তারিখে উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের রেজয়ানের স্ত্রী লাবনী (৩০) নামের এক প্রসূতিকে ওই হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করা হলে রিপোর্ট দেয় রোগীনির গর্ভের বচ্চা মারা গেছে। এরপর ওই রোগীনিকে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে রেফার করা হয় খুমেক হাসপাতালে। সেখানে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করালে রিপোর্টে দেখা যায় গর্ভের বাচ্চা জীবিত এবং সুস্থ্য আছে। বর্তমানে ওই বাচ্চার বয়স প্রায় ৬ মাস।

অপর একটি রিপোর্টে দেখা যায় গত ইং ১২/০৩/১৮ তারিখ একই হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের স্ত্রী সুমি বেগম (৩০) জরায়ু জনিত সমস্যায় অসুস্থ্য হলে চিকিৎসকের পরামর্শে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করান ওই সেন্টার থেকে। রিপোর্টে দেখা যায় সুমির জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। এতে তারা খুব ভড়কে যান। পরে খুমেক হাসপাতালে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফী করালে সেখানে রিপোর্টে জরায়ুতে সংক্রামন জনিত সমস্যা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ ইতি সাহা নিশ্চিত করেন। সুন্দরবনের পূর্বের রিপোর্টটিও ভুল রিপোর্ট বলে প্রমানিত হয়।

সর্বশেষ গত ৭ আগষ্ট সোনাতুনিয়া গ্রামের বাবুল হাওলাদারের প্রসূতি স্ত্রী বায়তুন বেগম (২৫) কে ওই হসপিটাল এ্যান্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান করার জন্য ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতে কথিত ডাক্তার সাধন কুমার বসুকে দিয়ে সিজার করানো হয়। এরপর রোগীনির অপারেশনের স্থান থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। গুরুতর অসুস্থ্য প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য কোথাও না পাঠিয়ে ওই হসপিটলে রাখা হয়। এরপর ৮ আগষ্ট ভোর রাত ৪ টায় রক্তক্ষরন জনিত কারনে ওই প্রসূতি মারা যায়। ওই প্রসূতি পূর্ব থেকেই রক্ত শূন্যতায় ভুগছিলেন।

একটি প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে পরিচালিত অনুমোদনহীন প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক নাজমুল হাসান কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে দেদারছে তার অবৈধভাবে ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এব্যাপারে তার মুখোমুখি হলে, তিনি এ প্রতিবেদককে দাম্ভিকতার সাথে বলেন, এতভাবে বলার পরও আমার হসপিটালের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে কি পারলেন আমার এ হাসপাতাল বন্ধ করতে ? এক পর্যায়ে তিনি বলেন, প্রাইভেট হসপিটালের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছি। তাকে প্রশ্ন করা হয় অনুমোদন না নিয়ে কিভাবে আপনি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করলেন ? জবাবে তিনি বলেন, আরও কত ক্লিনিক আছে তারাও অনুমোদন ছাড়াই পরিচালনা করছে, আমি করলে সমস্যা কি?

অবৈধভাবে এবং মানহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খুলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অসহায় রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এসব বিষয়ে কথা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মাছুম ইকবালের সাথে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই হসপিটালের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের নির্দেশে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ এম,এ হান্নান ও ডাঃ সাধন কুমার বসু’র বিএমডিসি’র রেজিষ্ট্রেশন ভুয়া বলে আমাদের মনে হয়েছে। প্রাইভেট হসপিটাল খুললে ও সরকারিভাবে কোন অনুমতিপত্র বা রেজিষ্ট্রেশন দেখাতে পারেনি, তবে তারই প্রতিষ্ঠানের আরএমও ডাঃ ফজলে বারী সরকারি হসপিটালের জরুরী বিভাগের সিলমোহর ব্যবহার করে ওই প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার জন্য কিভাবে রোগী পাঠান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম নাই কিন্তু রোগীদের সুবিধার্থে ওটা করা হয়। তিনি সাংবাদিকদের তদন্ত রিপোর্ট দেখাতে বা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার কুমার পাল এর মুঠোফোনে একাধীকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। অবৈধভাবে পরিচালিত প্রাইভেট হসপিটাল সম্পর্কে বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ অরুন কুমার এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সরকারি অনুমোদন বা রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খোলার কোন নিয়ম নাই। যদি কেউ এ ধরনের হসপিটাল বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার পরিচালনা করে অবশ্যই ওই ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভুয়া ডাক্তার দ্বারা প্রসূতির সিজারে রোগীর মৃত্যুর বিষয়সহ অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন রামপাল শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন শেখ এর দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, অনুমোদনহীন ক্লিনিক বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার খুলে যারা সেবার নামে ব্যবসা করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে ওইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

উল্লেখ্য ওই অবৈধ হসপিটালের বিরুদ্ধে গত ১৩ আগষ্ট বিভিন্ন জাতীয় ও স্থাণীয় পত্রিকায় তথ্য বহুল সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তার তত্বাবধানে একটি তদন্ত কমিটি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর প্রায় ১ মাস পেরিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন