ফেসবুকের প্রেমের মনস্তত্ত্ব!

  22-10-2016 09:58AM


পিএনএস ডেস্ক: অস্বীকার করার সাধ্য নাই, বর্তমানে প্রেমের যে দাবানলের দাবদাহ ছুটছে তার বেশিরভাগ ফেসবুক কেন্দ্রিক! জায়গা-বেজায়গায় ক্রাশ খাওয়া চলে কিন্তু প্রেমে পড়ার/করার জন্য ইনবক্স ছাড়া গত্যন্তর নাই।স্বাভাবিকভাবে ইনবক্স ব্যবহারের ব্যতিরেকেই প্রেমিক/প্রেমিকারার এখানে বেছে নেয় ভিন্ন কৌশল! (নিন্দুকরা এখানে বলে বসবে এটা বুঝি আমার অভিজ্ঞতা অথচ তারা বুঝতে চাইবে না-অভিজ্ঞতার চেয়ে ভাবনার বিস্তৃতি ও গভীরতা ব্যাপক ও শক্তিশালী ! বিশেষ করে কুচিন্তা তো মহাশাক্তিশালীর পর্যায়ে)!

সাধারণত ফেসবুকে তিনটি কারণে মানুষ তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দূর্বলতা দেখায়।প্রথমতঃ চেহারা তথা দেখার সৌন্দর্য্যে, দ্বিতীয়তঃ আবোল-তাবোল লিখতে পারার ক্ষমতা (অবশ্য বর্তমান কালে কবি-সাহিত্যিকদের ওপরে যে হারে বিপরীত লিঙ্গ দুর্বলতা দেখাচ্ছে তাতে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিমলদের জন্ম হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না) এবং তৃতীয়তঃ দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া(এটা ভাবের দিক থেকেও হতে পারে আবার ইতিবাচকও হতে পারে)। ইতিবাচক দিক থেকে যদি কেউ সুশিক্ষিতি ও ব্যক্তিস্বম্পন্ন হয় তবে তার সাথে সম্পর্কে জড়ানোকে আমি ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহিত করি।তবে এটা প্রেমের সম্পর্ক না হয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হওয়া উচিত।যার থেকে কিছু শেখা যাবে এবং তাকেও কিছু শেখানো যাবে-এর চেয়ে উত্তম সম্পর্ক আর কি হতে পারে ?

যারা যাদের প্রতি দুর্বল তারা দীর্ঘদিন ধরে বিপরীত লিঙ্গকে অনুসরণ করবে।কোথায় কি ছবি আপলোড দেয়, কি লিখে কিংবা কি কমেন্ট করে-তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে।অনুসরণীয় ব্যক্তির পোষ্টে কারা কি কমেন্ট করে সেটার ওপর নজরদারি থাকবেই।সেখানে তার প্রতিউত্তর কি ধরনের তাও লক্ষ্যদৃষ্টি থেকে বাদ যাবে না।কোথায় কোথায় লাইক দেয় (এটা অবশ্যই রুচিবোধ প্রকাশ করে) তাও খুঁজে খুঁজে দেখবে।তারপর যখন আর সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না তখন ইনবক্সে আগমন ঘটবে, ঘটবেই ! হয়ত কিছুদিন অপেক্ষা করবে, যাতে সে তার ইনবক্সে আসুক।সে না আসলে তিনিই সেখানে যাবেন।

এখানে এসে শুরুতে স্বাভাবিক ভাবের আদান-প্রদান ঘটে।এরপর একসময় দীর্ঘ চ্যাট হয়।যিনি যার প্রতি দুর্বল তিনি অপরপক্ষের একটি বাক্য লেখার মধ্যে অন্তত তিন-চারটি বাক্য লিখে পাঠিয়ে দেন।কখনো কখনো অনেক কিছু লেখেন আবার মুছেন, আবার লেখেন আবার মুছেন ! এর কোনটায় পছন্দ-অপছন্দের বর্ণনা থাকে আবার কোনটায় ব্যক্তি কেন্দ্রিক বিভিন্নমূখী প্রশ্ন ! এককালের দুর্বল ব্যক্তি যখন বুঝতে পারে তার বিপরীতজনও তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে, তখন তিনি টোপ দিয়ে বড়শি ফেলার মত ইনবক্সে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব দেখিয়ে অন্যজনের মনোভাব যাচাই করেন।যদি দেখেন, কাজ হয়ে গেছে তবে তাকে আর পায় কে ! এককালের দুর্বলজনার চেয়েও অন্যজন আরও দুর্বল তখন তার ভাব কিছুটা বাড়ে এবং এ নব্য দুর্বলের দুর্বলতাকে নির্য্যাতন শুরু হয়।উল্লেখ্য যে, যারা ফেসবুকে একাধিক সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে তাদের কান্ড-কারখানায় এই অধমের কোন সূত্রই প্রযোজ্য নয় বরং প্রয়ো করতে গেলে সবগুলো লেটারমার্কসহ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে !

দিনের আলোর মত স্পষ্ট, এখন অবধি ফেসবুকের বেশিরভাগ প্রেমের সম্পর্ক পরিণতি পায়না।কারণ এখানে ব্লক টেনে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে দেয়া যায় ।সাময়িকের মোহ মিটে গেলে ছুড়ে ফেলা যায়।কোন ধরণের কৈফিয়তের কেউ ধারধারে না।তাছাড়া একজনকে হারালে অন্য কাউকে পেতে খুব বেশি অপেক্ষা কিংবা কষ্ট করতে হয়না। যার কারণে শুণ্যতা কিংবা একাকীত্বের দহন কাউকেই সেভাবে ভোগায় না।ফেসবুকের সম্পর্ক ভাঙার পর কেউ দীর্ঘ সূত্রিতায় কান্নাকাটি করেছে কিংবা মন খারাপ করে বসেছিলো এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর।কেননা এখানে মূলের অল্টারনেটিভ পাওয়া খুব সহজ ।

শেষ পর্যন্ত এসে যারা আমার ব্যাপারে সন্দেহের আঙুল তুলছেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে, ফেসবুকে আমার ইনবক্স নামক অংশটি আপনার জন্য খোলা নাই।যারা হ্যায় হ্যালো বলেন(পুরুষ/নারী), সৌজন্যতার খাতিরে তাদেরকেও প্রতিউত্তর করতে হয় কিন্তু ওটা এক ম্যাসেজে তিন মেসেজ লেখার পর্য্যায়ভূক্ত হয়নি কখনো কিংবা হবেও না কোনদিন।তাছাড়া আগামী একশো বছরেও কারো ইনবক্সে আমার প্রথম ম্যাসেজ যাবে এমনটা ঘটার আদৌ সম্ভবনা নাই।বীপরিত লিঙ্গের প্রতি তো একেবারেই নাই।

রাজু আহমেদ।কলামিষ্ট।
fb.com/rajucolumnist/

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন