ভৌতিক অবকাঠামোসহ মৌলিক উন্নয়নগুলো এরশাদই করেছিলেন

  27-11-2016 03:36PM

পিএনএস (মোঃ রুহুল আমিন চৌধুরী) : ১৯৮২ সালের ২৪ শে জানুয়ারী শান্তি প্রিয় ও বিনা রক্তপাতের মাধ্যমে সাবেক অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করেও তিনি রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব না নিয়ে জনাব আতাউর রহমান খানকে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতি করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেই রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন।

এখন আসল কথায় আসা যাক। এরশাদ সাহেব ক্ষমতা গ্রহনেরপর দল গঠনের উপর তেমন একটা গুরুত্ব দেন নাই। আঠার দফা বাস্তবায়ন পরিষদ নামে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি কর্মসুচীকে সামনে রেখে প্রথমে জাতীয় যুব সংহতি ও কিছুপরে জনদল নামে একটি অস্তিত্ব দাঁড় করালেও পরবর্তীতে জাতীয়পাটি নামে সর্বশেষ একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক দল গঠন করেন। দল গঠন করেও দলকে স্থিতিশীল ও সর্বস্তরের দলের কাঠামোকে বিস্তৃতি করার কোন পদক্ষেপ ও সহযোগীতা তিনি করেন নাই। তিনি কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। যার কারণে নেতাকর্মীরা তারকাছ থেকে দল গঠনে সহযোগীতা চাইলে তিনি বলতেন কাজ করলেই জনগণ ভোট দেবে। উলেখ না করলেই নয়, তার রাজনীতিতে জাতীয় পর্যায়ে এক ঝাঁক শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ও শ্রেষ্ঠ সংগঠক ব্যক্তিরাই তার সরকারের ছিলেন এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগিতা করেছিলেন। রাষ্ট্রও রাজনৈতিক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চাইলে একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন।

প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকার পরিচালনার ছিলেন এক নায়কতান্ত্রিক আর রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন গণতান্ত্রিক। এত প্রাঙ্গ বিজ্ঞ ও অভিক্স নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রি ও এমপি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও দল পরিচালনায় সহজও স্বাবলীলভাবে মন খুলে সলা পরামর্শ করার সুযোগ পেতেন না। কারণ সামরিক প্রেসিডেন্ট হওয়াতে ভাব ভঙ্গিমা ও ঐরকম কঠিন কঠোর ছিল। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তিনি বলতেন আমি যে সকল কাজ ও কর্মসুচী হাতে নিয়েছি ঐ সকল প্রকল্প ও কর্মসুচীগুলো নিষ্ঠার সাথে মনোযোগ দিয়ে বাস্তবায়ন করুন। কাজ করলেই জনগণ ভোট দিবেন। তিনি উন্নয়ন ও কাজের প্রতি এতই বিশ্বাসী ছিলেন যে, স্বাধীনতার পর দেশের ভৌতিক অবকাঠামোগুলো ও মৌলিক উন্নয়ন এরশাদই করেছিলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধ পাকিস্তানীদের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে মাথা শির দাঁড়া সোজা করতে না করতে সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতীয় ও আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রের যাত্রাকলে স্বপরিবারে চির বিদায় নিলেন। এর পরে যারা আসলেন এর মধ্যে কেউ কেউ আবার ক্ষমতার শিড়ি পাকাপোক্ত করতে ও দলগঠন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এরমধ্যে নিকটতম আত্বীয় পদবঞ্চিত ও বিদ্রোহীও জেনারেল আবুল মঞ্জুরসহ এক পাল উচ্ছবিলাসী সেনার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে চির বিদায় নিয়েছেন জেনারেল জিয়া। জনাব এরশাদ দীর্ঘ নয় বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার কারণে ব্যক্তিগতভাবে উন্নয়নের প্রতি আত্মবিশ্বাস, ও সৎসাহস, ছিল বলেই যখন যে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাহা বাস্তবায়নে সকল রকমের জড়তা ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই এগিয়ে গিয়েছেন। তার একটা গুন ছিল যে, তিনি যদি বুঝতেন দেশ জাতীয় প্রয়োজনে এ কাজটি এখনই করা দরকার, কাল বিলম্ব না করে তাহা শুরু করে দিয়েছেন এবং যথা সময়ে তাহা শেষ করে নিতেন।

যেমন প্রশাসন বিকোন্দ্রকরণের সুযোগে বৃটিশ গঠিত থানায় পুলিশ নিয়ন্ত্রিত থানা প্রশাসনকে ভেঙ্গে জনপ্রতিনিধি পরিচালিত উপজেলা গঠন। জনগনের সুবিধার্থে কোটকাচারী ও উপজেলায় স্থানান্তর ২৫/২৬ জন বিএসএস কর্মকতাকে জনগণের প্রয়োজনে উপজেলায় নিয়োগ করেন। যাতে জনগ আর জেলা সদরে যেতে না হয়। মহকুমা প্রশাসন কে ভেঙ্গে জেলায় উন্নীত করেন ও জনপ্রতিনীধি দ্বারা পরিচালিত ও জবাবদীহিতা চালু করেন। সর্বপরী প্রশাসনকে জনগণের দৌঁড় গোড়ায় ও হাতের নাগালে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন।

হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদ ইইসি নামে একটি প্রকল্প ও কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ শিক্ষা, বিদ্যুৎ যোগাযোগ, সেই কর্মসুচীর আওতায় এমনিভাবে গ্রামীণ সড়কগুলো গ্রাম থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে উপজেলা সংযোগ সড়ক, উপজেলা থেকে জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও জেলা থেকে রাজধানীর যাত্রায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নও নিশ্চিত করেন। মেঘনা সেতুসহ সাড়া দেশে ৫০৮ (পাঁচশত আট) খানা বড় সেতু নির্মান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এছাড়া এল,জি,ইডি প্রতিষ্ঠান গঠন করে তার মাধ্যমে ছোট ছোট ব্রীজ কালভাট ও গ্রামীণ সড়ক পাকাকরণসহ অসংখ্য স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার অবকাঠামো নির্মাণ করেন। অপর দিকে বিশ্বরোড নির্মাণ করে অনন্যা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

রাজধানী ঢাকাকে তিলোত্বমায় রূপান্তরীত করতে গিয়ে পান্থপথসহ অসংখ্য নতুন নতুন রাস্তা নির্মান করেন। ঢাকা শহরের ডোবা নালা ভর্তি করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক নির্মান করে॥ ফুলবাড়িয়া থেকে বাস টার্মিনাল সায়েদাবাদে স্থানান্তর করেন। ফুলবাড়িয়া এশিয়ার সবচেয়ে সৌন্দর্য নগরভবন, ও মতিঝিলে বাংলাদেশ বাংক ভবনসহ ঢাকা শহরে অসংখ্য বড় বড় ভবন নির্মান করেন। গাবতলীতে বাস ডিপোকে বর্ধিতকরণসহ মিরপুরে বিআরটিসি বাস ডিপো শ্রীবৃদ্ধি করেন। হাই কোঁটের পাশে ডোবা ও খানা খন্দ ভরাট করে বিশাল জাতীয় ঈদগাহ নির্মাণ করেন। জনপথ মুক্তি স্বরণী ও বিজয় স্বরণীসহ স্বাধীনতার অনেক স্থৃতি সংরক্ষনে নামকরণ করেন।
জাতীয় শহিদ মিনার বর্ধিত ও সুন্দর্যবর্ধন এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের শ্রীবৃদ্ধি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন ছাত্রাবাস যথাক্রমে, বঙ্গবন্ধ হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও একটি ছাত্রীহলসহ কয়েকটি আবাসিক ভবন নির্মান করেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এরশাদ হল যাহা রাজনীতির স্বীকার বর্তমানে ডা: মিলন হল নির্মানসহ শিক্ষক ও ছাত্রদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ট্রান্স পোর্ট প্রদান করেন। এছাড়া সারা দেশে অসংখ্য স্কুল কলেজ সরকারীকরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আরও উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের খাবারের মান উন্নয়নের জন্য হল ছাত্র সংস গুলোর ফান্ডে ১০ (দশ) লক্ষ টাকা করে অনুদান দেন।
জাতীয় ঔষুধনীতি প্রণয়ন করে বিদেশী ঔষুধ আমদানী বন্ধ করে দেশীয় উদ্যোগক্তাদেরকে উৎসাহের উপর গুরুত্ব দেওয়া এবং বর্তমানে বিশ্বের ৪০ (চলিশ) টির বেশী দেশে আমাদের উৎপাদিত ঔষুধ রপ্তানী করা হচ্ছে।
এরশাদ সাহেব সেসময় মসজিদ মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ বিল মওকুপ করেন। ১৯৮৮ সালের সর্বগ্রাষী বন্যার কারণে রাষ্ট্রপতি এরশাদ সাড়া বিশ্বের দৃষ্টি বাংলাদেশে প্রতি আকৃষ্ট করেন। বর্নাকে কেন্দ্র করে মাসে দুইবার ত্রিশ কেজী করে চাউল ও গম বিজিডি কার্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে বিনাকারচুপীতে বিতরণ করা হয়। আরএমপি অর্থাৎ কাজের বিনিময়ে খাদ্যকর্মসুচীর মাধ্যমে ঐ সময় থেকেই মূলত বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ হয়। শুধু এখানেই শেষ নয়। যদিও পরবর্তী সরকারগুলো এরশাদের নির্মিত প্রকল্পগুলোকে প্রলেপ ও রাঙ্গিয়েছেন।

তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় বড় প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের প্রভ’ত উন্নয়ন করে চলেছেন।

যমুনা সেতুর অর্থ যোগান ও প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর তিনিই স্থাপন করেন। বিদেশী মিশনে সেনা ও যৌথ বাহিনী পাঠিয়ে বিদেশী অর্থ আয়ের পথ তিনিই প্রথ শুরু করেন। পাঁচ হাজার টাক কৃষিঋণ মওকুপ ও চক্রবৃদ্ধিসূধ মওকুপ করেন। তার উন্নয়নের কথা লিখে শেষ করা যাবে না।

ঃরাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন গণতান্ত্রিকঃ আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন একাধিকার একমাত্র এরশাদ আমলেই হয়েছে। এছাড়া একাধিকবার ইউপি নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন ও একাধিকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ছাড়া প্রায় সকল দলই অংশ নেয়। ৮৬ সালে আওয়ামী লীগ ৮৬ আসন পেয়েছিল।

অপর দিকে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছাত্র শিক্ষক, শ্রমিক, কর্মচারীসহ পেশাজীবিরা নিজস্ব দাবীদাওয়ার ওপর মিছিল মিটিং ও আন্দোলন করার নিরকুশ সুযোগ ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ ব্যানারে কখনও জোট বদ্ধ হয়ে আবার কখন যুগপথ আন্দোলন অবাধে করার সুযোগ পেয়েছিল। এই হলো শ্বেরাচারের সংঘা।

১৯৯১ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমিক আমাদের গণতন্ত্র তথাকথিত রূপ লাভ করেছে। বিগত ছাব্বিস বছর যাবৎ দেশের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নেই। ৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা ভোটবিহীন নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করেছি। একদিকে গণতান্ত্রিক নির্যাতন গুম, খুন ও হত্যাসহ জটিল গণতন্ত্রের যাত্রাকলে জাতী আজ নির্যাতিত। অপরদিকে হাতে গোনা কয়েকজন নাম সর্বস্ব বাম ঘরোনার নেতাকর্মীর অতি গণতান্ত্রিক মন্ত্রে ডানের ও বামের রক্ত ও ঘামে মিশে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গা জ্বালার কারণে বস্ত্রহীন হয়ে পরেছে।
পরাশক্তি নিষ্ঠুর ক্ষমতার পালাবদলের প্রতিযোগীতায়, কেউ হেরেছে আবার কেউ জিতেছে। তাই ভোট ও গণতন্ত্র রাগে ক্ষোপে, গোস্বায় ও ভয়ে প্লাটিনাম কারাগারে স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেছে। কারণ সেখানে তো বস্ত্র পরিধান করার সুযোগই নেই। এই হলো শ্বৈরতন্ত্র ওগণতন্ত্রের পার্থক্য।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন