রাষ্ট্রের চালচিত্র বনাম তারুণ্যের স্বপ্নচিত্র!

  31-03-2017 10:20PM

প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ছোটাছুটি সাক্ষ্য বহন করে, সর্বান্তকরণে অহির্নিশি স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের সম্মৃদ্ধি কামনা করি । এ শুধু ব্যক্তির শপথ নয়, এ শপথ তারুণ্যের, প্রিয় কাঁচাসোনা লাখো তরুণের । এ মাটির ঘ্রাণ, বায়ুর স্পর্শ এবং আলোর নির্দেশনাই জীবনের সঞ্চালনী শক্তির মূল বাতিঘর । অনেক আশার মাঝেও কিছু দুষ্টু প্রেতাত্মা, যারা এদেশের ভাবমূর্তি ম্লানের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের বিরুদ্ধে বিষাদিত ঘৃণার বিষবাষ্প ছড়িয়ে মাত্র কয়েকটি কথা-

এক । সীমাহীন অসূখের নাম জঙ্গিবাদ ।

বর্তমান সময়ে দেশের যদি কোন অসূখ থাকে তবে সেটা জঙ্গিবাদ । জঙ্গিবাদের নামে দেশে যেভাবে উগ্রতা ও বিচ্ছিন্নতাবাদের আস্ফালন চলছে তা হৃতকম্প সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট । তবে আমরা ভরসা পাই, কেননা এদেশের গর্বিত বাবারা, তাদের সন্তান জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়ার মত মহৎকর্ম এখনো করে । কাজেই যে দেশের মা-বাবা সন্তানের সাথে হৃদ্যতার সম্পর্কের চেয়ে দেশের সার্থকে সর্বাগ্রে স্থান দেয় সেসব দেশপ্রেমিকের দেশে জঙ্গিবাদ তথা মানবতা বিনাশী কর্মকান্ড স্থায়িত্ব পাবে-এমন আশায় গুঁড়েবালি । জঙ্গিবাদের নামে যে আঁধারে দেশের কিঞ্চিৎ ভূমি ও স্বপ্নের যে অংশ ঢেকেআছে সে অংশ তার কালিমা আপন ধর্মে দূর করে অচিরেই সোনার আলো দিকে দিকে ভরিয়ে নেবে-এমন প্রত্যাশা আমরা লালন করি । ধর্মের অপব্যাখ্যা করে যারা বিপথগামী হয়েছে কিংবা কোন ষড়যন্ত্র চরিতার্থ করার মানসে যদি কেউ এ উগ্রতা ছড়ানোর আস্পার্ধা দেখায় তবে তার সবটাই যেন ব্যর্থ হয়ে এদেশের তরুণ-যুবকদের হৃদয়ে দেশপ্রেমের স্ফুলিঙ্গ আলোকিত করুক সবার হৃদয় ।

দুই । বিচার বহির্ভূত এবং গুপ্ত হত্যাকান্ড ।

মাত্র কয়েকদিন পূর্বেই আমরা পালন করলাম স্বাধীনতা দিবস । এ দিবসের ঘোষণার মাধ্যমেই ’৭১ এর রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নিরস্ত্র অথচ সাহসী বীর বাঙালি, যারা আমাদের পূর্বগামী, আমাদের নেতা । স্বাধীনতা লাভের ইস্পাত কঠিন মনোভাব ও শতভাগ দেশপ্রেমের আদর্শ নিয়ে জীবনের শঙ্কা জেনেও তারা শত্রু-হায়েনার মোকাবেলা করতে পিছপা হয়নি কভূ । আজ দেশ স্বাধীন অথচ আজও সেই ’৭১ এর আলামত থেকে আমরা পরিপূর্ণভাবে বের হতে পারিনি । পাকিস্তানী হায়েনাসম হানাদারেরা যেমন এদেশের নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিলো তেমনি আজও অজ্ঞাত একটি দল/মহল অবৈধ হত্যাকান্ডের ধারা অব্যাহত রেখেছে । কয়েক ঘন্টা পূর্বেই হত্যা করা হয়েছে চট্টগ্রামের একজন ছা্ত্রনেতাকে । আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে দড়ি দিয়ে হাত ও ওড়না দিয়ে চোখ বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়েছে নদীর তীরে । ’৭১ এবং ’১৭ এর চিত্রে খুব বেশি কি ব্যবধান ? সরকারকে আন্তরিক হয়ে হত্যাকারী এ চক্রের মুখোশ উম্মোচনে সর্বোচ্চ চেষ্টা বিনিয়োগ করতে হবে । কেননা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে এসব লক্ষ্মণ খুব ভালো আলামত বহন করে না ।

তিন । বাধ্য হয়ে কিংবা স্বার্থের খাতিরে দল পরিবর্তন এবং গণতন্ত্রের আগামী !

পরিচিত মহলের বেশ কিছু দূর কিংবা কাছের বন্ধু খুব শোরগেোলে সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের হয়ে স্লোগান দিচ্ছে, কাজ করছে ! অথচ অল্প কিছুদিন আগেও এরা ভিন্ন মতাবলম্বী(ছাত্রদল/শিবির কিংবা অন্যান্য) ছিলো এবং সেখানের বেশ সক্রিয়ও । যারা এতোদিন খুব করে সরকার বিরোধীতা করতো তারা হঠাৎ বোল পাল্টে সরকারী দলের স্লোগান ধরার কারণ কি ? অনেকেই হয়তো ভাবছেন, সরকারের কার্যকলাপে খুশি হয়ে এরা সরকারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ! এমন ভাবনা ঠিক হবেনা বোধহয় কেননা হঠাৎ করে মোড়ক বদলানোর কারণ পাঠের চক্র সমাপান্তে তাদের এখন চাকরি চাই । দেশের হালচাল দেখে তারা স্পষ্টতই বুঝে নিয়েছে, সরকারবিরোধী মত দেখালে তাদের ভাগ্যে সরকারী চাকুরী জোটার সম্ভাবনা প্রায় শুণ্যের কোঠায় । কাজেই গণতন্ত্র ও দলের ভবিষ্যত স্বার্থে সরকারী পক্ষের কলা-কুশলীদের এসব বিবেচনায় আনা আবশ্যক । স্বার্থ রক্ষা ও নাগরিক অধিকার বহাল রাখার তাগিদে যদি কাউকে তার সহজাতিক ও বৌদ্ধিক আদর্শকে ত্যাগ করে নতুন কোন ছদ্মবেশ ধারণ করতে হয় তবে তার পরিণতি কোনপক্ষের জন্যই সূফল আনবে না বরং দেশের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং দলের প্রতি ক্ষোভ তৈরি হয়ে যেকোন ষড়যন্ত্রের অঙ্কুর স্পষ্ট হতে পারে ।

চার ! নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন ।

বহুদিন ধরেই দেশের স্পষ্টতর বিতর্কের স্থানটি নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার । দেশের ১২তম প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্ধারণ পদ্ধতি প্রশংসিত হলেও পদ্ধতির প্রয়োগ প্রশংসিত হয়নি বলেই সুধীজনদের বৃহদাংশের মতের ব্যক্ততায় স্পষ্ট হয়েছে । সর্বশেষ সুষ্ঠু নির্বাচনটি কোথায় হয়েছিলো তা স্মরণ করাও কিছুটা কষ্টসাধ্য বটে ! তারপরেও নতুন নির্বাচন কমিশন কর্তৃপক্ষের প্রথম পরীক্ষা তথা কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের ধরণে তারা তাদের পূর্বসূরীদের কৃতকর্ম থেকে কিছুটা বের হতে পেরেছেন-এটা নিশ্চিত । তাদের এ সংক্রিয়তা ধারাবাহিক রেখে নিরপেক্ষ পেশাদারিত্ব প্রদর্শনে কতোটা উন্নতি করতে পারবেন সেটা সময় সাক্ষ্য দেবে তবে জনগণ কাকে নির্বাচিত করবে তা নিয়ে মোটেও মাথাব্যথা নাই কিন্তু জনগণের পছন্দের যেনো সঠিক ও সুষ্ঠূ মূল্যায়ণ হয়-এ নিশ্চয়তাটুকু সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে ।

সকল অভিযোগ-অনুযোগের পরেও আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি বাংলাদেশী পরিচয়ে আমরা তৃপ্ত, গৌরবান্বিত । যখন লিখতে বসেছি তার কিছু আগেই সংবাদ পেলাম, পাকিস্তানে এক গাড়ি বোমা হামলায় ১২ জনের অধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে । আলহামদুলিল্লাহ, তেমন দুঃসহ স্মৃতি এবং অনিশ্চিত জীবন আমাদের নেই এবং আসবেও না ইনশাআল্লাহ । রাজনৈতিক দলগুলো যদি পরমত সহিষ্ণু হয়, ক্ষমতা লাভের স্পৃহার ওপরে দেশপ্রেমকে অগ্রাধিকার দেয় তবে আমাদের শঙ্কিত হওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নাই । বিচ্ছিন্ন্ দু’একটি দূর্ঘটনা যা আছে তা থেকে উৎরে গিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এবং দল-মত-বর্ণবিরোধী দেশেপ্রেমের শপথে দেশকে তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাবই । আজও এমন স্বপ্ন এদেশের লাখো তরুণের হৃদয়জুড়ে ভাসে-শুধু দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রসারিত দৃষ্টি পেলেই সোনার বাংলাদেশ নিয়ে আমরা বিশ্বের বুকে গর্বভরে দাঁড়াতে পারবো । বাংলাদেশী পরিচয়ে হবো ধন্য এবং দেশমাতৃকার সেবায় তারুণ্যের সকল শক্তি একীভূত হয়ে দেশের মঙ্গলের তরে কাজ করে যাবে, প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করে দেশের চলার পথকে মসৃণ করে যাবে তাদের পূর্বসূরী বীর বাংঙালীদের মতো ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন