আর কত রিশার জীবন ঝড়বে অকালে?

  31-08-2016 09:34AM



পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা । বয়সের কোঠায় মাত্র ১৪ এ পদার্পন করেছিল । জেষ্ঠ্য সন্তান হিসেবে বাবা-মাকে কথা দিয়েছিল, লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবে । মাকে দেখে রাখবে । মাইশার হাসিমাখা মুখখানায় কতই না বাহারি স্বপ্ন দোল খেত সর্বক্ষণ । বছর শেষে জেএসসি, তারপরে এসএসসি-এইচএসসির গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় । চাকরি, প্রতিষ্ঠা এবং সংসার । সকল স্বপ্নগুলো মুকুলেই ঝড়ে পড়লো । বাবা-মাকে দেয়া কথা রাখা হয়নি, সহপাঠীদের কাছে আগামীকাল দেখা হবে বলে দেওয়া প্রতিশ্রুতিও বাস্তবতার মুখ দেখেনি । ৪র্থ ও ১ম শ্রেণীতে পড়–য়া ছোট ভাই-বোন দু’টোর সাথে মজার মজার গল্প বলাও আর হলো না । আত্মীয় স্বজনসহ দেশবাসীকে কাঁদিয়ে রাইশা চলে গেলো না ফেরার দেশে । অন্য কয়েকটি মৃত্যুর মত রাইশার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলার সাধ্য নাই । বখাটের ছুড়িকাঘাতে মারাত্মকভাবে জখমী হয়ে দু’দিন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে লড়াই করে অবশেষ রাইশা হার মানলেন । আরেকটি অস্বভাবিক মৃত্যু দেশবাসীকে জানিয়ে গেলে হায়েনার নির্মমতা, পাশবিকতার বর্বরতা । প্রেমে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় যারা এভাবে ছুড়িকাঘাত করে মানুষ হত্যা করতে পারে তারা মানুষ নয়; পশুরও অধম । মানুষের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার তাদের নাই । অথচ এসব পশুরাই রাইশাদের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে নিয়ত ।

রাইশাদের গল্পগুলো ক্রমশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে । কুমিল্লার তনু, রাজধানীর আফাসানা কিংবা রাইশাদের অকালে চলে যাওয়া নিয়তির অমোঘ বিধানে দাঁড়িয়েছে । বর্বরতা, পাশবিকতা, পাষ-তা সর্বত্র রাজ করে বেড়াচ্ছে । প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় ফেরার পথে ধর্ষিতা হয়ে জীবনহানী, প্রেমের ফাঁদে ফেলে গণধর্ষন শেষে হত্যা, স্কুলের পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার পথে ছুড়িকাঘাতে মৃত্যু-এসব কি শুরু হয়েছে দেশজুড়ে ? নারীর জীবনের নিরাপত্তা কি আর অবিশিষ্ট থাকবে না মোটেও ? ঘরে-বাইরে নারীদের অসহায়ত্বের এ চিত্র অন্ধকার যুগের সাথে সাযুজ্যতা প্রকাশ করছে গভীরভাবে । কোন সভ্যতার মুখে আমরা প্রবেশ করতে যাচ্ছি ? মাতৃ-বোনতুল্য নারীদের শরীর-জীবন নিয়ে যারা ধ্বংসের খেলায় মাতোয়ারা তাদেরকে যদি দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হতো তবে বোধহয় নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কমে আসত উল্লেখযোগ্যভাবে ।

দীর্ঘ ৬’মাস এক বখাটে কন্যাকে ফোনে কিংবা রাস্তায় দিন-রাত বিরক্ত করছে জেনেও যে বাবা-মা আইনের কাছে মুক্তির জন্য প্রতিকার চায়নি সে বাবা-মায়ের অসর্তকতা মেয়ের বিপদগ্রস্থ হওয়াকে ত¦রান্বিত করেছে । আদর্শবান বাবা-মা হিসেবে প্রত্যেকের তাদের সন্তানদের ব্যাপারে সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ রাখা আবশ্যক । সামাজের আনাচে-কানাচে কুলাঙ্গারের দল শিকার ধরতে ঘাঁপটি মেরে আছে । সামাজিকভাবে এদেরকে প্রতিহত করতে হবে । পারিবারিক শিক্ষা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশিক্ষা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে পারলেই নারীরা নিরাপদে জীবন-যাপন করতে পারবে এবং অপরাধীরা দমন হবে । ঘুনে ধরা সমাজে সর্বত্র যেভাবে ক্ষয়ের লয় শুরু হয়েছে তাতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি-বিশ্বাসের রজ্জু আর কতকাল মজবুঁত থাকছে-সেটাই প্রশ্ন ।

রাইশাদের অকালে হারিয়ে যাওয়া এবং স্বজনদের আহাজারিতে আজ বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে । এবার মুক্তি চাই, অপরাধীর কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি নিশ্চিত হোক । আর কোন রাইশার জীবন প্রদীপ যেন অকালে নিভে না যায়, তার নিশ্চয়তা সমাজের প্রতিটি মানুষের যেমন নিশ্চিত করতে হবে তেমনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এবং বিচার বিভাগকে হতে হবে আরও কার্যকরী । অপরাধ নির্মূলে সংশোধনমুলকের চেয়ে এখন প্রতিরোধাত্মক ব্যবস্থা গ্রহন করা বেশি জরুরী । কেননা সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে অপরাধ ও অপরাধীরা অবাধ চলা এমনভাবে বিস্তার ঘটেছে যাতে দীর্ঘকালের পরিকল্পনায় শুধু সংশোধনের চিন্তা করলে সাধারণ ও নিরীহ মানুষের ক্ষতির পরিমানটা আরও দীর্ঘ হবে । নারী-পুরুষের সম্পর্ক-বিশ্বাসে ফাটল ধরবে । অপরাধ দমনে প্রতিরোধাত্মক ব্যবস্থােেক প্রধাণ্য দিয়ে সাথে সাথে সংশোধনমুলক ব্যবস্থাকেও কার্যকরী করে তুলতে পারলে অপরাধীদের দৌরাত্ম কমে আসবে । বোন-জ্ঞানে মাইশারা নিরাপদ থাকে যেন আমাদের সমাজে । হায়েনার বিস্তারকে যে কোন মূল্যে প্রতিহত করতেই হবে । এ সমাজকে মানুষের জন্য জঞ্জাল সরিয়ে পরিস্কার রাখার দায়িত্ব আমাদের কাঁধে । রাইশাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে আমরা কি ওদের ভাই-জ্ঞাতী হিসেবে এ প্রতিশ্রুতিটুকু দিতে পারি না ?

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
fb.com/rajucolumnist/

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন