প্রেমে রাজি না হলেই জীবন দিতে হবে ?

  19-09-2016 02:56PM

পিএনএস,ডেস্কঃ এভাবে আর কত ? মাদারীপুরের কালকিনিতে মানুষরূপী বর্বর পাষন্ড পশু কর্তৃক ছুড়িকাঘাতে প্রাণ হারালো আরেক কিশোরী ছাত্রী নিতু মন্ডল । মাত্র ১৪ বছরের বালিকাটি বইয়ের ব্যাগ কাঁধে করে ইস্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলো । পথিমধ্যে ছুড়িকাঘাত এবং একটি সফল মৃত্যু !

মেয়েটির অপরাধ ছিলো সে বখাটের প্রস্তাবিত প্রেম গ্রহন করেনি । ফলাফলে, আরেকটি সম্ভাবনা মুকুলে জড়ে গেল । আরেকটি তারার অনাকাঙ্খিত পতনের স্বাক্ষী হলো মানুষের বিবেক । সমাজ বোধহয় এখন আর এসব শুনে কম্পিত হয়না, এতটুকুন লজ্জাও পায়না ।

সমাজের পরিচালকরা যখন নির্লজ্জ তখন সমাজের লজ্জা পেয়ে লাভ কি ? প্রেমে রাজি না হওয়ায় যে কথিত প্রেমিক প্রাণ নিতে পারে সেই প্রেমিকের আশ্রয়দাতা-লালনকর্তা-পালনকর্তা-রক্ষাকর্তা এই সমাজের মানুষগুলো ।

আক্রান্তের নয় বরং আক্রমনকারীর মাথার ওপর ছায়া ফেলেই এরা তৃপ্ত হয় । শুধু একজন নিতু মন্ডল নয় বরং আরও অসংখ্য নিতুদের ভাগ্য কেবল দুর্ভাগ্যের লাল রঙে লিখে যায় কখনো ছুড়ি, কখনো এসিড আবার কখনো ঠান্ডা মাথার খুন-ধর্ষণে । এইতো নিতুদের নিয়তি । জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং হুট করে চলে যাওয়া ।
পৃথিবীর নামক গ্রহের ভূপৃষ্ঠে অসংখ্য নিতু শ্রেণীর নক্ষত্রের মধ্যে দু’পাঁচটি নিতুর প্রস্থানে কার কি আসে যায় ? কে ভাবে কিংবা মনে রাখে হতভাগ্য নিতুদের ?



মেয়েটির অপরাধ সে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়নি । অপরাধ বটে ! গুরুতর অপরাধ ! কিন্তু বখাটের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হলেই কি নিতু রক্ষা পেত ? অন্য নিতুরা রক্ষা পায় ? পত্রিকার যে পৃষ্ঠায় নিতুর হত্যার খবরটি পড়লাম তার ঠিক পাশেই আরেকটি খবরে চোখ আটকে থাকলো বহুক্ষণ । হৃদের স্পন্দন থেমে ছিলো ক্ষণকাল । নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার সী-বীচ এলাকায় ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ।

ধর্ষণ এদেশের স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হতে যাচ্ছে কেননা ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য ও প্রভাব রোধে এদেশের আইনের প্রয়োগ সন্তোষজনক ও যথাযথ নয় । যে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কালকিনির নিতুকে খুন হতে হলে সেরকম অপরাধ কোম্পানীগঞ্জের হতভাগ্য মেয়েটি করেনি !
সে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি ছিলো । মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসত ছেলেটিকে । কিন্তু নিতুর মত জীবন না হারালেও মৃত্যুর খুব কাছে বাস করছে মেয়েটি । হাসপাতালে বিছানায় যন্ত্রনায় কোঁকড়াচ্ছে শুধু । যে ছেলেটিকে সবচেয় বেশি বিশ্বাস করেছিলো তার বিশ্বাসঘাতকতায় মেয়েটি হয়ত আর কোনদিন কোন পুরুষকে বিশ্বাস করবে না, শ্রদ্ধার চোখে তাকাবে না ।

বন্ধুদের নিয়ে যে প্রেমিক প্রেমিকাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করতে পারে সে প্রেমিকের জাত যে বিশ্বাস রক্ষা করবে তার ভরসা আর কে নতুন করে দিতে পারবে ?


এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার । শুধু সংশোধনমূলক নয় বরং প্রতিশোধাত্মক ও প্রতিরোধাত্মক শাস্তিটাও এখন বড়বেশি জরুরী । কালকিনির নিতু কিংবা কোম্পানীগঞ্জের হতভাগা মেয়েটির জন্য না হোক অন্তত আমাদের বোন, কন্যাদের নিরাপত্তার জন্য সকলকে একবার জাগতেই হবে ।

জাগা উচিত । আজও যদি চুপ থাকা হয় তবে সেদিন বোধহয় খুব বেশি দূরে হবে না যেদিন আমার/আমাদের আত্মীয়াদের খুন ও ধর্ষণের খবর দেশবাসী জানবে ।

ধর্ষক ও খুনী মুক্ত একটি সমাজ গঠনের চিন্তা কি আমরা করতে পারি না ? পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তদীয় দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করে তবে আমাদের চাওয়াটা অসম্ভবের চাদরবৃত্ত থাকবে না । নারী-পুরুষ যেন বিশ্বাস এবং ভরসার পয়গাম নিয়ে পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে তার বিহীত বিধান হওয়া জরুরী ।

এজন্য সবার সহযোগীতা, কঠোরতা ও দায়িত্ববোধ একান্ত কাম্য । যে পরিবার ধর্ষক লালন করে, খুনী পালন করে তাদের সাবধান হওয়া দরকার ।

কুকুরের প্রভূ জ্ঞান আছে বটে কিন্তু মানুষরূপী কুকুরগুলো বড়বেশি খতরনাক । এদেরকে সময় থাকতে শোধরাতে না পারলে আপন-পরের কেউ এদের দংশন থেকে রক্ষা পাবে না, পায়নি কোনদিন ।


রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

fb.com/rajucolumnist/

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন