এই ব্রহ্মা-কে ধ্বংস করার ‘অস্ত্র’ এই প্রথম খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা

  21-12-2016 11:07AM


পিএনএস ডেস্ক: গোটা বিশ্ব ব্রহ্মা-কে এক লহমায় ধ্বংস করে দিতে পারে এমন মারাত্মক শক্তিশালী একটি ‘বোমা’র খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রথম। এই ‘বোমা’র নাম- অ্যান্টি ম্যাটার। এটি যদি কোনো পদার্থ বা ম্যাটারের সংস্পর্শে আসে তাহলে অনিবার্য হয়ে ওঠে ধ্বংস বা অ্যানিহিলেশন। এক লহমায়। প্রথম যে অ্যান্টি ম্যাটারটির সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা, সেটি আসলে অ্যান্টি হাইড্রোজেন পরমাণু। ২০ বছর ধরে নিরলস তন্নতন্ন তল্লাশের পর শেষ পর্যন্ত হদিস মিলল এই ব্রহ্মান্ডে প্রথম কোনো অ্যান্টি ম্যাটারের। সুইজারল্যান্ডে জেনিভার অদূরে সার্ন-এর ভূগর্ভস্থ ‘আলফা’ গবেষণাগারে।

বিজ্ঞানীরা এই প্রথম দেখতে পেলেন কোনো অ্যান্টি ম্যাটার পরমাণু (অ্যান্টি হাইড্রোজেন) দৃশ্যমান আলোর বর্ণালীতে (অপটিক্যাল স্পেকট্রাম)। বিজ্ঞানীরা সেই আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ও কম্পাঙ্ক মাপতে পারলেন এই প্রথম। আনন্দবাজার

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘নেচার’-এ প্রকাশিত হয়েছে এই আবিষ্কারের খবর। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আগামী দিনে মহাকাশ গবেষণা ও আমাদের বাসযোগ্য গ্রহের প্রযুক্তি প্রকৌশল উন্নততর করার লক্ষ্যে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিল।

কলকাতার ইন্ডিয়ান অ্যাসোশিয়েশন ফর কাল্টিভশন অব সায়েন্সের অ্যাকাডেমিক ডিন বিশিষ্ট কণা পদার্থ বিজ্ঞানী সৌমিত্র সেনগুপ্ত বলছেন, ‘পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে এটা একটা যুগান্তকারী ঘটনা। আমাদের এতদিনের ধারণা ছিল ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি ছাড়া এই ব্রহ্মা-ে আর যা কিছু আছে তার সবটাই পদার্থ বা ম্যাটার। পদার্থ বা ম্যাটারের প্রতি বরাবরই একটা পক্ষপাত আছে এই ব্রহ্মা-ে। অ্যান্টি ম্যাটারের অস্তিত্ব যেন মানতেই চায় না এই ব্রহ্মা-। কিন্তু এবার এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রমাণ হল ম্যাটারের প্রতি পক্ষপাত থাকলেও এই ব্রহ্মা-ে অ্যান্টি ম্যাটারেরও অস্তিত্ব আছে। তার মানে এই ব্রহ্মা-কে এক লহমায় ধ্বংস করে দিতে পারে এমন ‘অস্ত্র’ ব্রহ্মা-ের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। তবে এখনও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি কেন অ্যান্টি ম্যাটারের চেয়ে পদার্থ বা ম্যাটারের প্রতি ব্রহ্মা-ের এত বেশি পক্ষপাত।’

পেনসিলভানিয়া থেকে আমেরিকার ফের্মি ল্যাবে কর্মরত বিশিষ্ট কণা পদার্থ বিজ্ঞানী সুনন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বোঝালেন, ‘যে কোনো পদার্থের পরমাণুর ঠিক কেন্দ্রে থাকে একটি নিউক্লিয়াস। যার মধ্যে থাকে দু’টি কণা। প্রোটন ও নিউট্রন। নিউট্রনের কোনো আধান বা চার্জ নেই। আর প্রোটনের আধান ধনাত্মক। সই নিউক্লিয়াসকে পাক মেরে পরমাণুর ভিতরে বিভিন্ন কক্ষপথে ঘোরে ইলেকট্রন কণা। যে ভাবে বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে পাক মারে গ্রহগুলো।

প্রোটন ও ইলেকট্রন কণার আধান একেবারে সমান হয় বলে কোনো পরমাণুতে তা সমান সংখ্যায় থাকলে সেই পরমাণুটি নিরপেক্ষ বা নিউট্রাল হয়। তার কোনো আধান বা চার্জ থাকে না। সেটি ‘আয়ন’ হয় না। কিন্তু কোনো পরমাণুর ওপরে বাড়তি তাপ, চাপ বা চৌম্বক ক্ষেত্র প্রয়োগ করে তাকে শক্তিশালী করে তুললে ইলেকট্রনগুলো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ইলেকট্রনগুলো তখন পরমাণুর ভিতরের কক্ষপথ থেকে চলে যায় বাইরের কক্ষপথে বাড়তি শক্তি শুষে নিয়ে।

আর সেই উত্তেজিত ইলেকট্রনগুলোকে যদি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয় তখন শুষে নেওয়া বাড়তি শক্তিটুকু ছেড়ে দিয়ে ইলেকট্রনগুলো আবার বাইরের কক্ষপথ থেকে আবার ভিতরের কক্ষপথে ফিরে আসে। আর তারা যে বাড়তি শক্তিটুকু ছেড়ে দিল সেটাই আলো হয়ে বেরিয়ে আসে। সেই আলোরই বর্ণালী পরীক্ষা করে এবার অ্যান্টি ম্যাটারের হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।’

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন