প্রতিবন্ধী আয়ুব আলীর রাসায়নিক ও কিটনাশকমুক্ত শাক বিক্রি

  22-10-2016 11:56AM


পিএনএস, পাইকগাছা (খুলনা): আজ হতে প্রায় ২৫ বছর আগের কথা ফুটফুটে চঞ্চল শিশু আয়ুব আলী। তরতর করে বেড়ে উঠছে আয়ুব, আগামীর ভবিষ্যৎ হয়ে। হঠাৎ এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিলো সুস্থ-স্বাভিক ভাবে বেড়ে উঠার স্বপ্ন। শিশু আয়ুব যখন অন্য শিশুদের ন্যায় দলবেধে খেলাধুলা, স্কুলে যাওয়ার কথা সে সময় সে বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতর। এ ভাবে কেটেছে আর ১০ বছর হত দরিদ্র পরিবারের শিশু আয়ুব আলীর।

আয়ুব খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের বান্দিকাটী গ্রামের মৃত জলিল জোয়াদ্দারের ছেলে। ৪ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে সে সকলের ছোট। বয়স যখন ১০ বছর ঘরের মাচার (বাঁশের তৈরী শয়ন বা বসার স্থান) উপর থেকে পড়ে গিয়ে তার মেরুদন্ড ভেঙ্গে যায়। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় সু-চিকিৎসার কোনো সুযোগ হয়নি তার। ফলে কয়েক বছর তাকে শয্যাশাহী থাকতে হয় বসতবাড়ীতে। তবে মনোবল শয্যাশাহী হয়নি। সেই শিশু আয়ুব কিশোরে পা দিতেই মনোবল আরো দৃঢ় হয় উঠে। ধীরে ধীরে সে হাঁটার সক্ষমতা অর্জন করে। মনোবল দৃঢ় হলেও শারিরীক ভাবে কঠিন কোনো কাজ করতে অক্ষম থেকে যায় আয়ুব। শুরু হয় বেঁচে থাকার জন্য জীবন সংগ্রাম। বেছে নেয় স্বল্প পরিশ্রমে আয়ের আয়ের উৎস। শুর করে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপাদিত শাকসবজি বিক্রি। রাসায়নিক ও কিটনাশক মুক্ত শাক বিক্রেতে আসে সফলতা। এবার কিশোর থেকে যুবক আয়ুব বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুর করে। বর্তমানে আয়ুব দম্পত্তি ১ ছেলে ও ১ মেয়ের পিতা-মাতা। আয়ুবের বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। কিন্তু দীঘ ২৫ বছর সংগ্রামী জীবনে জোটেনি সরকারি কোনো সহায়াতা। সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠে অনেকটা দুর্বিষহ। হোক না সে প্রতিবন্ধী, জীবন তো আর থেমে থাকে না। অনেকটাই নিরুপাই হয়ে শুরু করেন ফেরি করে শাক বিক্রির কাজ। পাশ্ববর্তী উপজেলা আশাশুনি, তালা ও কয়রা সহ বিভিন্ন স্থানের প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করে কলমি, তেলাকচু, শাপলা, থানকুনি, বিরগুনী, পেপলসহ পুষ্টিকর দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির শাক। যা প্রতিদিন সকালে উপজেলা সদরে ফেরি করে বিক্রি করে। ৫ থেকে ১০ টাকা আটি দরে বিক্রি করে প্রতিদিন তার দেড়’শ থেকে দুই’শ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে সে পরিবারের ভরন-পোষণ সহ স্কুল পড়–য়া ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগায়। প্রায় ১৫ বছর এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে আয়ুব। তার সংগৃহীত শাকসবজি রাসায়নিক ও কিটনাশক মুক্ত হওয়ায় এলাকায় প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। রাসায়নিক ও কীটনাশক মুক্ত হওয়ায় আয়ুব আলীর শাকের জন্য প্রতিদিন বাসার সামনে অপেক্ষায় থাকেন অনেকে।

আয়ুব আলী যে শাক সংগ্রহ করে বিক্রি করে এ ধরণের শাকে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও ঔষধী গুনাগুণ রয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান। কৃষি বিভাগের যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে সেখানে আয়ুব আলীকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ-উল-মোস্তাক জানান, কোনো প্রতিবন্ধীই এখন আর সমাজের বোঝা নয়। তারাও দেশের সম্পদ যার প্রমাণ আয়ুব আলী। প্রতিবন্ধী হয়ে আয়ুব আলী যে কাজটি করছে সেটা অনেক সক্ষম ব্যক্তিও করেন না। সরকার প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আবেদন পেলে আয়ুব আলীকে বসতঘরসহ সরকারি সব ধরণের সহায়তা প্রদান করা হবে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন