বেনাপোল সীমান্তে ভাষার টানে দুই বাংলা

  21-02-2017 07:45PM

পিএনএস: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার টানে দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল বেনাপোল চেকপোস্ট নো ম্যান্স ল্যান্ড (শূন্যরেখা) এলাকায়। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করেই দলে দলে মানুষ যোগ দেয় একুশের মিলনমেলায়।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে মিলিত হন পশ্চিমবঙ্গের লোকজন। সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার সাধারণ মানুষ, রাজনীতিক, সমাজকর্মী, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সরকারি কর্মকর্তারা। দুই দেশের বেনাপোল ও বনগাঁও পৌরসভা যৌথভাবে এ মিলনমেলার আয়োজন করেন। এই প্রথম দুই দেশের ভাষাপ্রেমীরা পূর্ব বাংলার মানুষের রক্ত পশ্চিম বাংলার মানুষের জন্য এবং পশ্চিম বাংলার মানুষের রক্ত পূর্ব বাংলার জন্য দান করেন।

নো ম্যান্স ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল সাড়ে ৮টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য ও প্রযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সংসদ সদস্য মমতা ঠাকুর, বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস, বিধায়ক সুরজিত কুমার বিশ্বাস, বনগাঁও পৌরসভার চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য, কবি-সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, বিজিবির অধিনায়ক কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান।

মিলনমেলার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।

স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী খুরশীদ আলম ও রথীন্দ্রনাথ রায় এবং উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। কবিতা আবৃত্তি করেন আসাদ চৌধুরী।

শিল্পীরা একই মঞ্চে গাইলেন ভাষাশহীদদের স্মরণে বাংলার জয়গান। নেতারা শ্রদ্ধা জানাতে হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষাকে। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট নো ম্যান্স ল্যান্ডে এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার ‘বাংলা ভাষাভাষী’ মানুষ। একই আকাশ-একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যৌথভাবে দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালন করল দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের সীমান্ত এলাকাসহ নানা রঙের ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয় নো ম্যান্স ল্যান্ড এলাকা।

দুই দেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে ভাষাপ্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিষ্টি বিতরণ করে উভয়কে বরণ করে নেওয়া।
দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ।
বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের।

ভাষা দিবসের মিলনমেলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বিজিবি। এরপর দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে।

পুরো অনুষ্ঠানে নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। কড়াকড়ি আরোপ করা হয় দুই সীমান্তে। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য ডগ স্কোয়াড নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে দুই সীমান্তে।


পিএনএস/বাকিবিল্লাহ্

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন