ঠেঙ্গার চরে না যেতে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি তৎপরতা

  22-02-2017 08:58PM

পিএনএস,উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি : সরকার রোহিঙ্গাদের হাতিয়ার ঠেঙ্গার চরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থান করা সশস্ত্র জঙ্গি সদস্যরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চরে না যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে উস্কানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরকানে স্বাধীনতা পুণরুদ্ধার, নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার অজুহাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন তৎপর রয়েছে। মধ্য প্রাচ্যের কুয়েত, কাতার, দুবাই, সৌদি আরব, তুরস্ক সহ অন্যান্য রাষ্ট্র হতে তারা আর্থিক সহায়তা লাভ করে থাকে। লিবিয়া, আফগান, পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার লেবু ছড়ী, দোছড়ী, জারাইল্যা ছড়ি, এলাকায় একাধিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তোলে রোহিঙ্গাদেরকে জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।

রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সামরিক বাহিনীর প্রধান হাফেজ ছালাউল ইসলামের অর্থায়নে ও সহযাগিতায় কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা তৎপর হয়ে উঠেছে। এদের সহযোগিতার নামে কোটি কোটি টাকা লুপাট হচ্ছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। উখিয়া-টেকনাফের বহিরাগত ও রেজিষ্ট্রার রোহিঙ্গা শিবিরে হাজারের অধিক সশস্ত্র ট্রেনিং প্রাপ্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি কৌশলে অবস্থান করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করছে।

জানা গেছে, স্থানীয় উগ্রবাদী লোকজনের সহায়তায় নতুন করে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ভিত্তিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে জঙ্গিরা। নতুন করে তৎপর হয়ে উঠা ওই সব রোহিঙ্গা জঙ্গিদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন কক্সবাজারের ইসলামি সেন্টারের নামে প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সামরিক বাহিনীর প্রধান হাফেজ ছালাউল ইসলাম, আর.এসও নেতা দিল মোহাম্মদ, ডাক্তার মোঃ ইউনুছ, ডাঃ কিংমং রাখাইন, ডাঃ বাচুয়াং, নামজুল আলম চৌধুরী, মেরাজু, কেম্রাও, কেমাজু, বুদাপ্র , রাবেতা-আল-আলানীয়া আল ইসলামীয় বাংলাদেশ, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, হিউম্যান রাইটস ফ্রন্ট, ইন্টিগেটেড হিউমানিটারিয়া এপ্রোচ চট্টগ্রাম, হাজী ওসমান চট্টগ্রাম, ছালে আহমদ চট্টগ্রাম, নুর কামাল, মীর আহমদ কোম্পানী, নুরুর ইসলাম টেকনাফ, ছৈয়দ আলম চৌধুরী টেকনাফ, মোঃ কাছিম শাহপূরীর দ্বীপ, মোঃ ইসমাইল, আবদুল গফফার শাহপূরীর দ্বীপ, কুতুপালংয়ের হাফেজ সাইফুল ইসলাম, মৌঃ জালাল, মৌৎ ইলিয়াছ, মোঃ ছলিম, আতা উল্লাহ, আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গনাইজেশন এআরএনও, আরকান রোহিঙ্গা ইসলামীক ফ্রন্ট, এআরআইএফ।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতে এসব জঙ্গি নেতারা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছে। উখিয়া-টেকনাফ নাইক্ষ্যংছড়িসহ সীমান্ত এলাকায় শতাধিক লোকজন এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোষ্টগার্ড সদস্যদের ব্যাপক কড়াকড়ির পরও গোপনে অসংখ্য রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করতে সক্ষম হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় ৫টি জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা অব্যাহত ছিল।

রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান মুভমেন্ট, আরকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), হরকাতুল জিহাদ নামের জঙ্গি নামের জঙ্গি সংগঠন গুলো বিভিক্ত হয়ে কাজ করলেও ২০১১ সালের জুন থেকে তারা একজোট ভুক্ত হয়ে কাজ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন (এআরইউ) নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এসব জঙ্গি জোটভুক্ত হয়ে তৎপরতা শুরু করে। প্রথমে অবৈধ ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং এনজিও সংস্থার নামে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের সখ্যতা তৈরী করে এরা সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মিশনে নেমেছে। এ মিশনের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সীমান্তে সেনা বাহিনীর চরম নির্যাতন নিপীড়নের কথা বলে অর্ধ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে এ দেশে নিয়ে আসেন। এ পরিকল্পনা সফল হওয়ার পর আর্ন্তজাতিক একটি চক্র এ বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জোর প্রচেষ্টা শুরু করে।

জানা যায়, জঙ্গিদের এ তৎপরতার সাথে মুসলিম এইড, ইসলামী রিলিফ, করুণা, ইমাম মুসলিম, দারুল আনসার, এমএসএফ হল্যান্ড, সমন্বিত মানবিক উদ্যোগ নামের কয়েকটি এনজিও’র সরাসরি সহায়তা রয়েছে। এখনো সরকারী বিধি বিধান অমান্য করে বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা নতুন এ দেশে চলে আসতে উৎসাহিত হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অস্ত্র পাচার, মিয়ানমার-বাংলাদেশ কেন্দ্রীক ইয়াবা ও হেরোইন পাচার, মালয়েশিয়া কেন্দ্রীক আদম পাচার ও হুন্ডি ব্যবসাসহ নানা খাত থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকা এবং এনজিওর নামে বিভিন্ন দেশ থেকে ৩৫ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করে এ কাজ চালানো হয়। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় কিছু মাদ্রাসা, ধর্মী প্রতিষ্ঠানে বসে গ্রহণ নানা পরিকল্পনা। বর্তমানে জঙ্গি নুরুল ইসলাম, মাওলানা জুবাইর আহমদ, কমান্ডর মাওলানা ছব্বির আহমদ, মাওলানা ফরিদ উদ্দিন, মাওলানা আবদুর রহিম, হাফেজ মোহাম্মদ আইয়ুব, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, জামাল হোছন, মোঃ জাবের, মৌলভী আইয়ুব নদভীর অধীনে টেকনাফ-উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে শতাধিক ব্যক্তি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহায়তা প্রদান করছে বলে সরকারী একটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিশ্চিত করেছেন।

এ ব্যাপারে হাফেজ ছালাউল ইসলামের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শামশুদ্দোহা বলেন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে জঙ্গিদের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ক্যাম্পের আইন শৃংখলা রক্ষা করতে পুলিশকে সবসময় তৎপর রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) ছালাউ মার্মা সাংবাদিকদের জানান, কোথাও রোহিঙ্গারা জঙ্গি তৎপরতা করার খবর পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন