চলনবিলে তলিয়ে যাচ্ছে পাকা ধান!

  25-04-2017 08:49PM

পিএনএস ডেস্ক : দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জলাভূমি হাওরে অকালবন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর এবার উত্তরাঞ্চলের জলাভূমি চলনবিলে অকালবন্যা দেখা দিয়েছে। এতে উঠতি বোরো ধানের খেত তলিয়ে যাচ্ছে। কাঁচা-আধা পাকা ধান কাটতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।

আর এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে চলনবিলের চাষিদের জরুরি ভিত্তিতে খেতের পাকা ধান ঘরে তোলার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করছে নাটোরের সিংড়া উপজেলা প্রশাসন। ফসল রক্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে শ্রমিক-সংকটের কারণে প্রয়োজনমতো ধান কাটতে না পেরে দুশ্চিন্তায় সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলনবিলে সাধারণত জ্যেষ্ঠ মাসের শেষ দিকে বন্যার পানি ঢোকে। কৃষক তাঁদের ফসল ঘরে ওঠাতে পারেন। কিন্তু এবার উত্তরের ঢলগড়া পানি আত্রাই নদ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এর শাখা নদী হয়ে আগাম পানি ঢুকে পড়েছে। এ কারণে চলনবিলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত মরা-আত্রাই, বেশানী, কাটা নদীর ১৭টি নালা পানিতে টইটম্বুর অবস্থায় হয়েছে। এসব নালা পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নালা উপচে খেতে ঢুকে পড়ায় নালা তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকার ধানখেত তলিয়ে গেছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত চলনবিল এলাকার নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের বিলশার বেশানী নদীর উত্তর মাঠের বিলটেবিগাড়ি, দিয়ারভিটা, ছারুখালি, বোগানালীছাড়া, সিংড়া উপজেলার কাউয়াটিকিরি, সরিষাবাড়ি, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি, ইটালি, ভেটুয়া ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কুন্দইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নালা তীরবর্তী এলাকার উঠতি পাকা ধানখেতে পানি ঢুকে পড়েছে।

নিংগইন এলাকার কৃষক আশকান আলী বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি চলনবিলের জোড়মল্লিকা অংশে ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। ধান পাকতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে নদীর পানি বিলে ঢুকতে শুরু করেছে। প্রশাসন মাইকিং করে ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু একবারে এত শ্রমিক কোথায় পাব? দুশ্চিন্তায় ছটফট করছি।’

খুবজীপুর ইউপির চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানালেন, চলনবিলের এসব এলাকার মানুষ মূলত এক ফসলি (বোরো) আবাদের ওপর নির্ভরশীল। বেশির ভাগ কৃষকই মহাজন, বিভিন্ন আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। আকস্মিক বন্যায় কৃষকের এমন ক্ষতি হওয়ায় ঋণ শোধের ফাঁদে পড়বেন তাঁরা।


পানি ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পরপরই সোমবার সকালে জোড় মল্লিকা, নিংগইন ও পাটকোল এলাকায় জরুরিভাবে মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার চালানো হয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর চলনবিলের বন্যাকবলিত তিনটি উপজেলায় ৬৪ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ৩৭ হাজার ২০০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৪ হাজার হেক্টর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ২২ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তবে কী পরিমাণ বোরো খেত তলিয়ে গেছে, তা নিরূপণ করতে পারেনি এসব কৃষি বিভাগ।

সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, প্রাথমিকভাবে তাঁর উপজেলায় ১০০ হেক্টর বোরো খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। তবে আত্রাই নদের পানি প্রবেশ বন্ধে উপজেলার সিঙ্গুরে একটি বাঁধ দেওয়ায় চলনবিলের ফসল রক্ষা সম্ভব হয়েছে। তারপরও মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা (বিএস) কাজ করছেন। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দ্রুত পানি নেমে গেলে কৃষিতে তেমন ক্ষতি হবে না।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, তাঁর উপজেলায় ২০ হেক্টর জমির ধান নিমজ্জিত হয়েছে। গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। এসব কৃষি কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগী কৃষকেরা জানান, চলনবিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালাগুলো খনন করা গেলে অকালবন্যার হাত থেকে চলনবিলের ধান রক্ষা করা যাবে। পাশাপাশি শুকনো মৌসুমে নালায় পানি রিজার্ভ রেখে সেচসংকট দূর করাও সম্ভব হবে।


পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন