অন্ধ মা’কে ফেলে বাবা নতুন বিয়ে করেছে, আমি থাকি রাস্তায়

  22-10-2017 04:32PM

পিএনএস, বগুড়া প্রতিনিধি : প্রতিটি রাস্তার পাশেই দেখা মেলে পথশিশুদের। অবর্ণনীয় কষ্টে আছে তারা। পথের শিশু বলেই হয়ত তাদের দেখার কেউ নেই। সমাজে তাদের পরিচয় ‘টোকাই’। এদের অধিকাংশই পরিবার থেকেত বিচ্ছিন্ন। বাবা-মা থাকা সত্ত্বেও অনেকে জানে না তাদের বাবা-মা কে ? তাদের কেউ কেউ বাবা অথবা মাকে চেনে। তবে বেশিরভাগই বস্তিতে, রাস্তার পাশে, মার্কেটের অলি-গলি, যাত্রী ছাউনি, বাস-ট্রাক টার্মিনাল কিংবা রেলওয়ে প্লাটফর্মে এদের রাত কাটে। কারও কারও মাথার ওপর ছাউনি থাকে না। খোলা আকাশের নিচে তাদের বসবাস। ঠিকানাহীন অনেক পথশিশুই নেশার ঘোরে মশগুল। নাগরিক জীবন থেকে ছিটকে পড়া এসব শিশু প্রতিনিয়ত নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে।

শনিবার বিকালে বগুড়া শহরের পৌরপার্কে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে ক্ষুধার্ত ক্লান্ত অবস্থায় শুয়েছিল শিশু জাহিদ। কিছুক্ষন পর উঠে চারপাশ দেখছিল সে। এরপর থেকেই হাত পেতে খাবার ভিক্ষা। পার্কে ঘুরতে আসা মানুষের কাছে হাত পেতে ২ টাকা ৫ টাকা বা কিছু খাবার ভিক্ষা করে কোনো মতে পেটের ক্ষুধার জ্বালা মেটাচ্ছে পথশিশু জাহিদ। বয়স আনুমানিক ৯ থেকে ১০ বছর হবে। বেশ কিছুদিন গোসল না করায় জাহিদের শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে। খাবে কোথায়, ঘুমাবে কোথায়, নতুন জামা পাবে কোথায়। দেখারমত কেউই নেই এই পথশিশুর। অন্ধ মা’কে ফেলে বাবা আরেকটা বিয়ে করে দেশান্তরী হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে শিশু জাহিদের ভবিষ্যৎ। বগুড়া সদর উপজেলার বাঘো পাড়ায় জাহিদের বাড়ি।

কয়েকজন সংবাদকর্মীর সাথে কিছুক্ষন সময় দিয়েছে পথহারা শিশু জাহিদ হাসান। কথায় কথায় আবেগ আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিল না।

জাহিদ জানায়, আমার মা অন্ধ বলে, আব্বা আরেক বিয়ে করেছে, তারা কোথায় আমি জানিনা। আমরা চার ভাই, আমি সবার ছোট। বড় তিনভাই অন্ধ মাকে টুকটাক দেখাশোনা করলেও আমাকে কেও ঠিকমত খাবার দেয়না। পেটে অনেক ক্ষুধা নিয়ে থাকতে হয়। আমার খোজখবরও কেউ নেয়না। কোথায় খাব, কোথায় ঘুমাব, পড়নের জামা নেই। এক পোষাকে থাকি’ তাই গোসল করা হয়না। রোগ হলেই বা কি করব, পেট বাঁচলেই হলো।

পৌর পার্কে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে, কেউ ট্যাকা দেয়, কেউ খাবার দেয়, আবার কেউ কেউ তারিয়ে দেয়। খাবারের জন্য পিছেপিছে ঘুরি, এজন্য মাঝেমধ্যে কানের নিচে থাপ্পর খেতেও হয়। পথশিশু জাহিদ আরও জানায়, বিভিন্ন হোটেল ও চা দোকানে কাজ নেয়ার জন্যও ঘুরেছি। টোকাই বলে সবাই তারিয়ে দিছে। পরিচিত কেউ থাকলে হয়তো কাজ পেতাম। প্রতিদিন ভিক্ষা করে খাবার খাই, রাত হলে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্মে ঘুমাতে যাই। বগুড়া শহরে এই পথশিশু জাহিদের মত অনেক শিশুই চোখে পড়ে। বিভিন্ন হোটেল-চা স্টলে গিয়েও দেখা মেলে শিশুশ্রম। দুই বেলা খাবার বা অল্প-স্বল্প মজুরি দিয়ে কঠিন কাজও করানো হচ্ছে শিশুদের দিয়ে। এইসব পথশিশুদের যৎসামান্য অর্থের লোভ দেখিয়ে নানা অপরাধে লাগাচ্ছে প্রভাবশালীরা।

পথশিশুদের নিয়ে বহু সংগঠন কাজ করলেও তেমন কোন চিন্তাও নেই কোন উর্ধতন মহল, মানবাধিকার সংগঠন কিংবা সরকারী-বেসরকারী এনজিও প্রতিষ্ঠানের। বলা যেতেই পারে, পথশিশুদের জীবনে বাবা থেকেও যেমন বাবা নেই, মা থেকেও যেমন মা নেই, তেমনি রাষ্ট্র থেকেও তাদের জন্য নেই রাষ্ট্র্র ! তাদের জীবন কি এভাবেই চলবে ? তাদের মুখে কি ফুটবে না সুখের হাসি ? পথশিশু বলেই কি পেতে পারে না কারও সহানুভূতি কিংবা রাষ্ট্রীয় সাহায্য।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন