ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনস

  10-01-2023 10:27AM



পিএনএস ডেস্ক: নানা সংকটের কারণে বাংলাদেশ থেকে দিন দিন ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো। গত এক বছরে ফ্লাইটের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। টিকিট বিক্রির অর্থ বাবদ ৩০০ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। জ্বালানি তেল জেট ফুয়েল কেনার জন্য অর্থ আনতে হচ্ছে নিজ নিজ দেশ থেকে। এসব কারণে ফ্লাইট কমিয়েছে এসব এয়ারলাইনস। আর এসব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পর্যটনশিল্প, বিদেশগামী যাত্রী, পরিবহন ব্যয় ও ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসায়।

বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী অধিকাংশ বিদেশি এয়ারলাইনস টিকিট বিক্রির অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় স্থানীয় ব্যাংকে জমা রেখেছে। গত বছর মার্চ থেকে তারা নিজ দেশে অর্থ পাঠাতে পারছে না। ১০ মাসে এসব এয়ারলাইনসের প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে। এ ছাড়া এসব কোম্পানির এয়ারক্রাফটের জন্য ইনওয়ার্ড রেমিট্যান্সের মাধ্যমে নিজ দেশ থেকে ডলার এনে বাংলাদেশ থেকে কেনা জেট ফুয়েলের মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। এসব কারণে কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী, ওমরাহ, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য যাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকলেও বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ক্রমান্বয়ে তাদের ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। টার্কিশ এয়ারলাইনস সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট চালালেও ১০ মাস ধরে পাঁচটি ফ্লাইট চালাচ্ছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস ১০টি থেকে ফ্লাইট সাতে নামিয়েছে। ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনস পাঁচটির পরিবর্তে সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালাচ্ছে। ক্ষতি এড়াতে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে এনেছে। এ ছাড়া জাজিরা, মালিন্দো, কুয়েত এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট কমিয়ে এনেছে। এরই মধ্যে বিদেশি এয়ারলাইনগুলোর ফ্লাইট ৫০ ভাগ কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এক বছরের মধ্যে এ সংখ্যা আরও ১০ ভাগ কমে ৬০ ভাগে পৌঁছাতে পারে।

ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে বিদেশি এয়ারলাইনগুলো কস্ট অব ফান্ড সমন্বয়ের জন্য টিকিটের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এতে অনেকেই বিদেশ থেকে টিকিট কিনছেন। কারণ বাংলাদেশ থেকে কোনো টিকিট ১ লাখ টাকা হলে বিদেশ থেকে সেটি ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় কেনা যাচ্ছে। দাম কম হওয়ার কারণে বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে টিকিট কিনতে দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাঠানো হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর টিকিট বিক্রির পরিমাণ ৫০ ভাগ কমে গেছে। ফলে এই শিল্পে কর্মরত ২ লাখ মানুষ কর্মহীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩০টি এয়ারলাইনসের এয়ারক্রাফট প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রী পরিবহন করছে। এসব ফ্লাইটে প্রতিদিন ১০ হাজার যাত্রী বাংলাদেশে আসেন এবং ১০ হাজার যাত্রী বিশ্বের বিভিন্ন গন্তব্যে যান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কভিড মহামারির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো শুরুর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী মন্দায় ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি হয়। এতে টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতি সবকিছু মিলিয়ে বিমান পরিবহন খাতে সংকট চলছে।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন