বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেলের দাম কমলেও চড়া দেশের বাজারে

  22-04-2024 10:11AM



পিএনএস ডেস্ক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ববাজারে অস্থির হয়ে উঠেছিল সূর্যমুখী তেল (সানফ্লাওয়ার অয়েল)সহ সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম। এর ফলে দাম বাড়ে দেশের বাজারেও। কিন্তু বতর্মানে বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী তেলের দাম অনেকটা কমে এলেও চড়া মূল্য দেশের বাজারে। এর জন্য আমদানিকারকদের দুষছেন স্থানীয় বিক্রেতারা।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের বেশি দাম ও জাহাজভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে কমছে না এ তেলের দাম। করোনার পর থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতায় উচ্চবিত্তদের পাশাপাশি মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকেই বিকল্প হিসেবে সূর্যমুখী তেল, কুড়ার তেল ও জলপাই তেলে ঝুঁকেছে। ফলে দেশের বাজারে এই তেলের চাহিদা বাড়ায় আমদানিও বেড়েছে। শৌখিন ভোজ্য তেল হিসেবে পরিচিত সূর্যমুখী তেলের বাজার প্রায় পুরোটা আমদানিনির্ভর।

কয়েক বছর আগেও এসব তেল শুধু উচ্চ শ্রেণির লোকদের রান্নার তালিকায় ছিল। স্বাস্থ্যকর হওয়ায় এখন সাধারণ ভোক্তাদের অনেকেই সূর্যমুখী তেলে ঝুঁকেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দরে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পাম অয়েল বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা বাড়লেও এটির দাম নির্ধারণে সরকারের নজর নেই।

ফলে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও এর সুফল ভোক্তারা পাচ্ছে না। তাই সয়াবিন ও পাম অয়েলের মতো সূর্যমুখী তেলের দামও সরকার কর্তৃক বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

ট্রেডিং ইকোনমিকস থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গত এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী প্রতি টন তেলের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে। গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) বিশ্ববাজারে সূর্যমুখী প্রতি টন তেল ৮৬৭ ডলারে বিক্রি হয়েছে। ২০২৩ সালে মার্চ ও এপ্রিল মাসে ৯৭৫ থেকে এক হাজার ২০ ডলারে বিক্রি হয়।

২০২২ সালের মে মাসে রেকর্ড দাম বেড়ে সূর্যমুখী প্রতি টন তেলের দর দুই হাজার ১০০ ডলারে উঠেছিল। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও সুপারশপ ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন অলিটালিয়া, কিংস, গোল্ডেন, রাঁধুনী, ভিটাসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাওয়া যাচ্ছে। এতে প্রথম দিকে আছে অলিটালিয়া ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল। জনপ্রিয় কিংস ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল দেশের বাজারে বাজারজাত করে থাকে বাংলাদেশ অ্যাডিবল অয়েল। কম্পানিটি এই তেল নিয়ে আসে ইউক্রেনের একটি কম্পানি থেকে। দেশে সূর্যমুখী তেলের কারখানা গড়ে তুলেছে গ্লোব অ্যাডিবল অয়েল। তাদের কারখানায় বিদেশ থেকে আমদানি করা সূর্যমুখীর বীজ থেকে তেল উৎপাদন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করা হয়।

বাজারে এখন পাঁচ লিটারের এক বোতল সূর্যমুখী তেল কিনতে দুই হাজার টাকা লাগছে। যদিও ২০২২ সালে বিভিন্ন ব্র্যান্ডভেদে পাঁচ লিটারের এক বোতল সূর্যমুখী তেল পাওয়া যেত এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮৭৫ টাকায়। তারও দু-এক বছর আগে দেশের বাজারে এক হাজার ২৫০ টাকার মধ্যে পাঁচ লিটারের এক বোতল সূর্যমুখী তেল পাওয়া যেত।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সূর্যমুখী তেলের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। দাম বাড়ার পরও গত দুই-তিন বছরে এই তেলের চাহিদা বেড়েছে। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে যখন সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়, তখন সূর্যমুখী তেলের দামও বেড়েছিল। পরবর্তী সময়ে দেশের বাজারে সয়াবিন তেল যে হারে কমেছিল, সূর্যমূখী তেলের দাম সেই হারে কমেনি।

এ বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও আমাদের দেশে সূর্যমুখী তেলের দামের মধ্যে অনেক তফাত। তাদের দেশের ব্যবসায়ীরাও আমদানি করে এনে বিক্রি করছেন। তার পরও দুই দেশের দামের মধ্যে অনেক পার্থক্য। এখন যেহেতু বিশ্ববাজারে দাম অনেক কমে এসেছে, তাই জাহাজ ভাড়া ও ডলারের বাড়তি দামের অজুহাত না দিয়ে ব্যবসায়ীদের দেশের বাজারে দাম কমানো উচিত।’ তিনি বলেন, ‘যে বিবেচনায় সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, একই বিবেচনায় সূর্যমুখী তেলের দামও খুব দ্রুত নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। তাহলে ভোক্তারা কম দামে স্বাস্থ্যসম্মত ভোজ্য তেল খেতে পারবে।’

সূর্যমুখী তেলের দাম :

কিংস ব্র্যান্ডের দুই লিটারের বোতলজাত সূর্যমুখী তেল ৮৫০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার দুই হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোল্ডেন ড্রপ সূর্যমুখী তেল পাঁচ লিটার দুই হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভিটা কেয়ার ব্র্যান্ডের সূর্যমুখী তেল পাঁচ লিটার বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০ টাকায়। অলিটালিয়া ব্র্যান্ডের এক লিটার সূর্যমুখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪২৫ টাকায়, দুই লিটার ৮৫০ টাকায় ও তিন লিটার এক হাজার ২৬০ টাকায় এবং পাঁচ লিটার সূর্যমুখী তেল এক হাজার ৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাঁধুনী ব্র্যান্ডের এক লিটার সূর্যমূখী তেল বিক্রি হচ্ছে ৪৩০ টাকায় এবং পাঁচ লিটারের বোতলজাত সূর্যমুখী তেল দুই হাজার ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, দেশে সূর্যমুখী তেল আমদানি ও বাজারজাত করে বাংলাদেশ অ্যাডিবল অয়েল, ফেয়ার ফুড অ্যান্ড লাইফস্টাইল, এসিআই অ্যাডিবল অয়েলস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।

দেশের বাজারে সূর্যমুখী তেল সরবরাহকারী এক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম কমেছে, সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। তবে ডলারের উচ্চমূল্য, বাড়তি শুল্ক ও জাহাজ ভাড়া অত্যধিক বৃদ্ধির কারণে আমাদের আমদানি ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। যার কারণে দেশের বাজারে কমানো যাচ্ছে না।’

স্কয়ারের রাঁধুনী ব্র্যান্ডের সূর্যমূখী তেল চলতি বছর বাজারে এসেছে। এ বিষয়ে স্কয়ারের ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান ইমতিয়াজ ফিরোজ বলেন, ‘মানুষ এখন খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনছে। যার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী তেলের বাজার বড় হচ্ছে। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাঁধুনীও সূর্যমুখী তেল বাজারে সরবরাহ শুরু করেছে।’

ভারতে আমদানি ৫১ শতাংশ বেড়েছে :

ভারত বিশ্বের শীর্ষ সূর্যমুখী তেল আমদানিকারক। দেশটি গত মার্চে সূর্যমুখী তেল আমদানি আগের মাসের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেড়েছে।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন