পানি উন্নয়ন বোর্ডের খামখেয়ালীপনা (পর্ব-১) : কথিত সমীক্ষার বেড়াজালে হাওর অঞ্চলের মানুষ দুর্বিপাকে-

  04-09-2022 08:37PM

পিএনএস ( মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার ) : হাওর অঞ্চলের নদীগুলো অবিলম্বে খনন না করা হলে হাওর অঞ্চল এবং সংশ্লিট জেলাসমূহ নিয়মিত বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। চলতি বছর আগাম বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা ব্যাপক প্লাবিত হয়েছিল। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, সিলেট ও মৌলভীবাজারের বন্যা পরিস্থিতির কারণে সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। বৃহত্তর সিলেটের পাশাপাশি নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় বিদ্যমান ৩৭৩ টি হাওর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছিল। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাওর অঞ্চলের পওর ডিভিশনগুলোর ব্যাপক পরিশ্রম এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক মনিটরিং এর কারণে ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছিল। তবে পাউবো’র সমীক্ষা- সমীক্ষা খেলাধুলার কারণে বছরের পর বছর হাওর অঞ্চলের নদীগুলোর খনন কার্যক্রমের সূচনাই করা যায়নি। অথচ এই অঞ্চলের নদীগুলোর খননের কোন বিকল্পই নেই। অনেকেই বৃহত্তর সিলেট এবং পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাঁধ নির্মাণের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বাস্তবে এই এলাকায় বাঁধ নির্মাণের চেয়ে সংশ্লিট নদীগুলো খননের কোন বিকল্প নেই। ফ্ল্যাশ-ফ্লাডের সময় ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথ না হলে কোন ক্রমেই অতিরিক্ত পানি বের হতে পারবে না বিধায় নিয়মিতভাবে হাওর অঞ্চলে বন্যা হবেই। পর্যালোচনায় দেখা যায়, হাওর অঞ্চলে প্রায়ই আগাম বন্যা হয়। নিকট অতীতে ২০১৭, ২০১৬, ২০১০, ২০০৪, ২০০০, ১৯৯৪ এবং ১৯৯০ সালে আগাম বন্যায় হাওর অঞ্চলের জেলাগুলোতে শুধু ফসলের ক্ষতিই হয়নি বরং মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের বন্যা ছিল বিলম্বিত বন্যা। সেহেতু, ১৯৮৮ সালের বন্যায় হাওর অঞ্চলের ফসলের ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নই উঠেনি। প্রতিবার বন্যার পর হাওর অঞ্চলের নদী খননের গালগল্প শোনা গেলেও স্টাডি বা সমীক্ষার বেড়াজাল অতিক্রম করা যায়নি। অথচ ডেল্টা প্ল্যানের আওতায় ৬৪ জেলার ছোট নদী ও খাল খননের এক যুগান্তকারী প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। পাউবোর দক্ষ হাতের স্পর্শে মৃতপ্রায় অনেক ছোট নদী ও খালই নতুন করে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে পারছে ভূ-প্রকৃতি।

স্টাডি বা সমীক্ষার লুকোচুরির কারণে হাওর অঞ্চলের নদী খননের প্রকল্প আলোর মুখ দেখছে না। অথচ জরুরী ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা দরকার। আগাম বন্যার ফাঁদে পড়ে ইতিমধ্যেই বিনা দোষে কোরবানী হয়েছে পাউবোর বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী। ২০১৭ সালে বিদ্যমান পিআইসি বাধেঁর চেয়ে উচু মাত্রার আগাম বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সৃষ্টি হলে কোরবানী দেওয়া হয় সংশ্লিট ডিভিশনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে। বিনা দোষে দোষী হয়ে, চাকুরী হারিয়ে সংশ্লিট কর্মকর্তারা পথে পথে ঘুরছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহত্তর সিলেটের কমবেশী ৫০ টি নদী খনন করে দিলেই হাওরের পানি বের হয়ে মেঘনা হয়ে সাগরে যেতে পারবে। এই জেলাগুলোতে অনেক নদীর নাম শোনা গেলেও একই নদীর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। আবার অনেকগুলোই কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে বিদ্যমান। সিলেট জেলার সুরমা নদী, কুশিয়ারা, বায়া, বড়রাখা, বেটুয়া, গোয়াইন, ডাকসা, কাপনা, পুরকচি, সারী, পিয়াইন, সোনাই, জুরী, বড়গাং, ধামাই, খেপানদী, কাটানদী, বড় দারোগা নদী, ধলাই নদী, বাজাসিং নদী, হাটখোলা, ব্রাহ্মণা, মাকুন্দ নদী এবং কুড়া নদী খননের কোন বিকল্প নেই। এই নদীগুলোর সমীক্ষার জন্য কোন ভাড়াটে সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনও নেই। পাউবো’র প্ল্যানিং এবং ডিজাইন শাখাকে একটু কাজে লাগালেই সমীক্ষার বেড়াজাল অতিক্রম করা সম্ভব। আর নিতান্তই যদি সমীক্ষার প্রয়োজনই হয় তাহলে তা জরুরী ভিত্তিতে করা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্ন অনেকের।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিলেটের পাশাপাশি মৌলভৗবাজারের কামারখালী, গোপলানদী, ধলাইনদী, ফানাইনদী, কন্ঠনালা নদী খনন করা আবশ্যক। মৌলভীবাজারের অন্যতম বড় নদী মনু নদীতে একটি খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। হাকালুকি হাওরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত জুড়ি ও সোনাই নদীতে ড্রেজিংয়ের একটি প্রকল্প ইতিমধ্যে মাঠে মারা গেছে। হাওর অঞ্চলের নাম বললেই সবার আগে সুনামগঞ্জ জেলার নাম সামনে চলে আসে। এই জেলার রক্তি, যাদুকাটা, বৌলাই এবং পুরাতন সুরমা নদীতে পাউবো এবং বিআইডব্লিউটিএ প্রতিযোগীতা করে একাধিক প্রকল্প করলেও তা কোন কাজে আসেনি। এখানে শুধু অর্থের শ্রাদ্ব হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় পরিদর্শন করলেই এই কথার সত্যতা মিলবে। এই জেলায় কমবেশী ২০টি নদী খনন করা অত্যাবশ্যক। অপরদিকে, হবিগঞ্জ জেলায় কমবেশী ২৫টি নদী থাকলেও অনেকগুলোই মৃতপ্রায়। এই নদীগুলোও খননের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বৃহত্তর সিলেটের পাশাপাশি নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নদীগুলোও খনন করতে হবে। তা না হলে হাওর অঞ্চলের বন্যা মোকাবেলা কষ্টসাধ্য হতে পারে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন