নারায়ণগঞ্জের কুতুবপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ব্যবসায়ী আহত

  25-08-2023 08:02PM

পিএনএস ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার জেলার ফতুল্লা থানাধীন কুতুবপুরের দৌলতপুর কলসি বাড়ি এলাকায় মুজাহিদ ও তার বাহিনীর হামলায় ইব্রাহীম (৩৮) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

গত ২১ আগস্ট রাত প্রায় সোয়া ৮টায় কুতুবপুরের ৫নং ওয়ার্ডের কলসি বাড়ি মোড়স্থ দৌলতপুরে এই ঘটনা ঘটে। ঐ ঘটনায় ভুক্তভোগী ইব্রাহিম (৩৮) এর বোন নুর জাহান(৩৯) বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায় হামলার শিকার ইব্রাহিম (৩৮) ইট বালুর ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ছয়টায় স্থানীয় শিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধলে এ সময় ইব্রাহিম নামের ঐ যুবক তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তথা মারামারিতে বাঁধা দিলে তারা ইব্রাহিমকে হুমকি ধামকি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরে ঐ সময়ের প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে ইব্রাহিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হামলা চালায়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, কিশোর গ্যাং বাহিনীর সবাই বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে উদ্দেশ্য মূলক ভাবেই এই হামলা চালায়। এসময় তাদের কাছে রামদা, চাপাতি, ছোড়া, চাকুসহ ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র ছিলো।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুজাহিদ (২৬), আল আমিন (২৭), জাহাঙ্গীর(৪৫), তানজিদ(২০), লিটন(২৬), আদর(২৬), মোস্তফা(৫২) সহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জন এই হামলায় অংশ নিয়ে ইব্রাহীম নামক ঐ যুবকের মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে প্রায় চারটি জায়গায় মারাত্মক কাটা জখম করে হামলাকারীরা।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, এছাড়াও রড ও পাইপের আঘাতে ঐ যুবকের ডান হাতে কবজির উপরের অংশে হাড় ভেঙে যায়। এছাড়া তার পিঠে ও মুখেও ধারালো অস্ত্রের একাধিক কাটা জখম করে কিশোর গ্যাং গ্রুপের ঐ সন্ত্রাসীরা। সেসময় ইব্রাহিমের প্রতিবেশী ও বন্ধুরা যাথাক্রমে রাজু (৩৬), মিরাজ(৩৫), বাবু(৩৬), সুমন(৩৫) ছুটে এসে হামলাকারীদের কাছ থেকে ভুক্তভোগিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে তারাও নীলা ফুলা জখমের মত আঘাতপ্রাপ্ত হন। এরপর এলাকায় হৈচৈ পরে গেলে হামলাকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুজাহিদ সরকার দলের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত একজন অস্ত্রধারী ক্যাডার। নেশা সামগ্রী কেনা-বেচা, ছিনতাই, মারপিট, ইভটিজিংসহ প্রকাশ্যে দিবালোকে ইমরান নামক এক যুবকের পায়ে গুলি করে গুরুতর আহত করার মতন ঘটানাও ঘটিয়েছে মুজাহিদ।

জানা যায়, পরিবার ও প্রভাবশালী মহলের সেল্টারে থাকায় এযাবৎ বহুবার মুজাহিদ ও তার বাহিনী স্থানীয় পত্র পত্রিকায় খবরের শিরোনামে উঠে আসলেও কিছুই হয়নি তার। এতে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে সেসবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে তার অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড। আদৃশ্য কারও সুদৃষ্টি থাকায় বরাবরই মুজাহিদ থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্থানিয় একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, 'কুতুবপুরের শহীদ নগর, তুষারধারা, গিরিধারার ত্রাস হিসেবে পরিচিত গাজী মুজাহিদের বিরুদ্ধেও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ রয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ হলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ভুক্তভোগীরা এখন মুজাহিদকে ম্যানেজ করেই চলে। তাই মুজাহিদ বাহিনীর কাছে কয়েক হাজার মানুষ জিম্মি। মুজাহিদদের সাথে সরকার দলীয় একাধিক নেতা এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সাথেও সখ্যতা রয়েছে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ সাহস করে মুখ খুলে না।'

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শহিদ নগর নিবাসী গাজী মোল্লার ছেলে মুজাহিদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানা ও ফতুল্লা থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী মুজাহিদ নামক ঐ কিশোর গ্যাং লিডারের কাছে প্রায় জিম্মি হয়ে আছে বলেই কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে চায় না।

হামলার শিকার ইব্রাহিম জানায়, সে বিএনপির সেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় মুজাহিদ ও তার দলের অন্যরা তাকে বহুবার হুমকি ধামকি দিয়েছে ইট বালুর ব্যবসা করতে দিবে না বলে। একাধিক সাইটে কাজ করা বা নির্মান সামগ্রী দেওয়া নিয়েও পূর্ব শত্রুতা ছিলো তাদের মধ্যে। ঘটানার দিনে প্রথম দফায় কিশোর গ্যাংয়ের দুপক্ষের মারামারি বন্ধ করতে যাওয়ার মত সেদিনের তুচ্ছ ঘটানা কেবল একটা ইস্যু বলেও মনে করেন ইব্রাহিম নামের ভুক্তভোগী ঐ যুবক।

সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন ইব্রাহিম আরও বলেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও তার ও তার পরিবারের জীবন থাকবে নিরাপত্তাহীনতায়। এ বিষয়ে তিনি আইনের সাহায্য চেয়েও প্রার্থনা করেন।

এবিষয়ে মুজাহিদদের সঙ্গে কথা বলতে তার মুঠোফোনে ফোন করলে মুজাহিদ জানায়, সে এই ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত নয় বরং সে মারামারি থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এখন ভিকটিম তাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে অভিযুক্ত করছে বলেও পাল্টা অভিযোগ মুজাহিদদের।

২১ তারিখ রাতের এই ঘটনায় ২২ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ হলেও এপর্যন্ত দৃশ্যমান কোন আইনি পদক্ষেপ না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ইব্রাহিম ও তার পরিবার।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরে আযম মিয়া। তিনি জানিয়েছেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন ইব্রাহীম নামে যুবককে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। এই ঘটনায় আহত যুবকের বোন বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলে সেটি আমলে নিয়ে মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক আছে। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।

পিএনএস/ এসএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন