পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর মুগদা থানার মানিকনগর এলাকার মুদি দোকানি সুমন মিয়া। প্রতিদিনের মতো গত মঙ্গলবারও দোকান খুলে বসেছিলেন তিনি। ঠিক তখনই দোকানে আসেন তিনজন হিজড়া। দাবি করেন চাঁদা। ৫০ টাকা দেওয়া হলেও তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তারা। তবে সুমন মিয়া এর বেশি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর হামলা চালান হিজড়ারা। দোকান থেকে টেনেহিঁচড়ে বেধড়ক মারধর করা হয় তাকে। জাতীয় দৈনিকের কাছে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মারধরের সেই দৃশ্য।
ভিডিও দেখার পর এই প্রতিবেদক যান ঘটনাস্থলে এবং কথা বলেন ভুক্তভোগী মুদি দোকানি সুমন মিয়ার সঙ্গে। আলাপচারিতায় সুমন মিয়া বলেন, প্রতি সপ্তাহেই তারা চাঁদা নিতে আসে এবং ২০ টাকা করে নেয়। তবে এবার এসে ৪০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। যা দেওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য। আমি প্রথমে ২০ টাকা এবং পরে ৫০ টাকা দেই। কিন্তু এতে তারা ক্ষিপ্ত হয় এবং একপর্যায়ে আমার ওপর হামলা করে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে হিজড়াদের এ ধরনের চাঁদাবাজির ঘটনা। রেহাই পাচ্ছেন না দোকানমালিক থেকে পথচারী, কেউ-ই। বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোয় তাদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও উৎপাতে অতিষ্ঠ দোকান মালিকসহ সাধারণ মানুষ। বিষয়টি নিয়ে কালবেলা টিম মাঠে নামলে বের হয়ে আসে হিজড়াদের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি।
পথচারী ও দোকান মালিকদের অভিযোগ— প্রতি সপ্তাহে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা দিতে না পারলে অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ বিবস্ত্র হয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, এমনকি মারধরের মতো ঘটনাও ঘটান হিজড়ারা।
আতঙ্কের নাম হিজড়া, চাঁদা না পেলে করেন অশ্লীলতা-মারধর
তারা আরও বলেন, শুধু দোকান থেকেই চাঁদা নিয়ে ক্ষান্ত হন না তারা। কোনো বাড়িতে বাচ্চা জন্ম নিলে সেখানে গিয়েও দাবি করেন টাকা; না দিলে ঘটান হুলস্থুল কাহিনি।
ফারুক আহমেদ নামে মুগদা এলাকার একজন বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, বাচ্চা হওয়ার খবর পেয়ে আমার বাসায় আসে একদল হিজড়া, দাবি করেন টাকা। তবে চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেয়ে হামলা চালান আমার বৃদ্ধা মায়ের ওপর।
এদিকে টিম মুগদার মানিকনগর এলাকাতে উপস্থিত থাকার সময়েই হিজড়াদের একটি দল দোকান থেকে চাঁদা নিতে আসে। কিন্তু মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে সরে যান তারা।
পরে বিষয়টি নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ওই এলাকার হিজড়াদের গুরু আবুল সর্দারের সঙ্গে। তিনি দোকানি সুমন মিয়ার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তাদের আমি বিষয়টি নিয়ে গালমন্দ করেছি। সবাই তো আসলে এক না, তাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। যারা আমাদের চাঁদা দেয় তাদের ওপর হাত তোলাটা একদম নিকৃষ্ট কাজ। তারা দিলে দেবে, না দিলে না দেবে। কিন্তু তাদের ওপর জুলুম-অত্যাচার করা যাবে না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুর রহমান সৌরভও এমন ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটছে, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব এটি সমাধানের চেষ্টা করব।
এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ আছে কিনা, সেই সাথে আইনগত কী সমাধান রয়েছে, তা জানতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন মুগদা থানায়। সেখানকার ওসি (তদন্ত) মো. কামরুল হোসাইন বলেন, ‘হিজড়া নিয়ে কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। তবে অভিযোগ পেলে সে যে-ই হোক আমরা তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’কালবেলা
পিএনএস/এমএইউ
আতঙ্কের নাম হিজড়া, চাঁদা না পেলে করেন অশ্লীলতা-মারধর
24-02-2024 01:12PM