ক্যান্টিনের তালা ভেঙে অবৈধভাবে নিজের লোক বসালেন জাবির ছাত্রলীগ নেতা

  27-02-2024 11:03AM



পিএনএস ডেস্ক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে ধর্ষণ ও স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে বিগত ১৫ ফেব্রুয়ারি আমরণ অনশনে বসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম। দুদিন পর ১৮ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের আশ্বাসে আমরন অনশন ভাঙেন তিনি।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অনশন ভাঙার পর পরই হল প্রশাসনের তোয়াক্কা না করে হল ক্যান্টিনের তালা ভেঙে নিজস্ব লোককে ক্যান্টিন চালানোর দায়িত্বে বসিয়ে দিয়েছেন এনাম। তার সঙ্গে হলের ছাত্রলীগ নেতা চিন্ময় সরকার এবং আনোয়ার হোসেন রকি ছিলেন বলে অভিযোগ করেন হল প্রভোস্ট। এমনকি পূর্ববর্তী ক্যান্টিন পরিচালককে ক্যান্টিন ছাড়তে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, আগে আল-বেরুনী হলের ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন মো. রেহান। তবে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন ও নানা অজুহাতে তার ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। তবে ক্যান্টিন মালিকের অভিযোগ, তিনি সম্প্রতি আল বেরুনী হলের ক্যান্টিন ছেড়ে চলে যান। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাকির পরিমাণ অত্যাধিক বেশি হওয়ায় ক্যান্টিন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পরবর্তীতে বটতলার রাধুনী হোটেলের স্টাফ ইয়াসিনকে ২০ তারিখে তালা ভেঙে ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্বে বসায় হল ছাত্রলীগ। কিন্তু এ বিষয়ে অবগত ছিল না হল প্রশাসন। তালা ভেঙে ফেলার প্রেক্ষিতে ২২ তারিখে ক্যান্টিন পরিচালনার আহ্বান দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে হল প্রশাসন। ফলে এককভাবে হল শাখা ছাত্রলীগ ক্যান্টিন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বর্তমান ক্যান্টিন পরিচালক ইয়াসিন বলেন, ‘আমি রাধুনী হোটেলে কাজ করতাম ওইখানে যেয়ে আমাকে আল বেরুনী হলের কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী বলছে আল-বেরুনী ক্যান্টিন চালাতে। তারপর আমি ২০ তারিখ এসে ক্যান্টিনের দরজা খোলা পাই এবং পরিষ্কার করে ২১ তারিখ থেকে ক্যান্টিন চালু করি।’

তবে একাধিক বার জিজ্ঞাসা করা হলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নাম পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ইয়াসিন। হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই সাধারণ শিক্ষার্থীরাই প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে, আমি কিছু জানি না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আল-বেরুনী হলের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আগের ক্যান্টিনের খাবারের মান খুবই বাজে ছিল, সেখানে বাহিরের মানুষজন কিছু খেত। কিন্তু হলের ছাত্ররা খুব কমই খেত। ম্যাক্সিমাম স্টুডেন্ট বট কিংবা সালাম বরকতের সামনে খাওয়া দাওয়া করতো। নতুন ক্যান্টিন কারা দিয়েছে এই বিষয়ে আসলে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই।’

তালা ভাঙার ব্যাপারে জানার জন্য এনামুল হক এনাম এবং চিন্ময় সরকারকে মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি। তবে আনোয়ার হোসেন রকি নামে আল-বেরুনী হলের এক ছাত্রলীগ নেতা চ্যানেল 24 অনলাইনকে জানান, আল বেরুনী হলের ক্যান্টিন দুমাসের মতো বন্ধ ছিল। সেময় সমস্যা তো হয়েছেই, কিন্তু অ্যাডমিশন টাইমে এই ঝামেলা বেশি হতো।

এই কারণে শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙেছে এবং অন্য একজনকে ক্যান্টিনের দেয়া হয়েছে কয়দিনের জন্য। প্রভোস্ট এই ব্যাপারে উদাসীন ছিল যে ক্যান্টিন কেউ চালু করুক। তালা ভাঙার আগে হল প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আর যাকে হল প্রশাসন ক্যান্টিন দিবে তিনি থাকবে। আপাতত অ্যাডমিশন সময়ে নতুন একজনকে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আল বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, কিছুদিন আগে হলের ক্যান্টিনের পরিচালক হলের কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে গেছে। পরে যখন খবর নিয়ে জানলাম, সে আসলে ঋণে জর্জরিত হয়ে চলে গেছে। তারপরও উনাকে আমরা খবর দিয়েছি, যেহেতু তিনি চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। পরে ২০ ফেব্রুয়ারিতে ক্যান্টিন নতুন কাউকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য একটা কমিটি করি হলের কর্মকর্তাদের নিয়ে।

তারা সবকিছু বিবেচনা করা একজনকে চুক্তির আওতায় আনবেন। এর মাঝখানে হঠাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল শুনি যে, হলের কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ক্যান্টিনের তালা ভেঙে ইয়াসিন নামে একজনকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দিয়েছে। পরে আমরা খবর নিয়ে জানলাম তিনজন সাবেক ছাত্র যারা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে তাদের নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, যে তিনজনের নাম তালা ভাঙার ঘটনায় আসছে তারা হলেন এনাম, চিন্ময় সরকার এবং রকি। আমি এটি উপাচার্য, প্রক্টর এবং প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি সবাইকে বিষয়টি অবগত করেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছি। এর বাইরে তো আমার কিছু করার নাই, আমি পরিষ্কারভাবে সবকিছু প্রশাসনকে জানিয়েছি।

এরপরে ক্যান্টিন থেকে ইয়াসিনকেও চলে যেতে বলেছি, কিন্তু তিনি যাচ্ছে না। তালা ভাঙার পরেও আমরা ক্যান্টিন আটকে দিয়েছিলাম, তিনি আবারও খুলেছে। যেহেতু তালা ভেঙে তারা ঢুকছে, তারা তো এখানে অপরাধী। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে আশা করি।

তবে এর আগেও আল-বেরুনী হলের পেছনে খেলার মাঠকে ঘিরে প্রভোস্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে দু'পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। এর কিছুদিন পর হলে তিনটি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আবার ঝামেলা করেন তারা।

ছাত্রলীগের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ না দেয়ায় সাক্ষাৎকারের দিন প্রভোস্টের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করতে বাধ্য হয়।


পিএনএস/এমএইউ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন