জবির ইমামকে অব্যাহতি, যা জানালেন মসজিদে ঘুমানো সেই ছাত্রী

  28-05-2024 11:05PM

পিএনএস ডেস্ক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) মসজিদে ছাত্রী অবস্থানকে কেন্দ্র করে ইমামের সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ঐ ইমামকে চাকরিচ্যুত করেছে জবি প্রশাসন। ঐ ইমামকে ইদের আগেই পরিবারসহ সরকারি বাসস্থান ছেড়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এবার মুখ খুললেন সেই ছাত্রী।

ঘটনার সূত্রপাত, গত ১৮ মে রাতে। শারিরীক অসুস্থতা থাকায় ভুলবশত এশার নামায আদায় শেষে একজন ছাত্রী জবির কেন্দ্রীয় মসজিদের মেয়েদের রুমে ঘুমিয়ে পড়ে। এমতবস্থায় রাতে মসজিদের পাহারাদার তালা লাগাতে গেলে ঐ মেয়েকে দেখতে পান। পরে মসজিদের ঐ পাহারাদারের স্ত্রী ভিতরে তাকে ঐ রুম থেকে বের করে নিয়ে আসেন। তবে ইমাম বা পাহারাদার কেউই ভিতরে প্রবেশ করেননি।

এ বিষয়ে ইমামের সঙ্গে মেয়েটিকে জড়িয়ে অনেক ধরণের কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ তোলা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ইমামকে ইমামতি করতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

তবে ইমামের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগই মিথ্যা বলে স্বীকার করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি ছিল ১৮ মে রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে। আমি ঐ দিন মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পরবর্তীতে আমাকে মসজিদের দায়িত্বে থাকা একজন দেখতে পেলে তিনি তার সঙ্গে একজন মহিলা (হয়ত ওনার স্ত্রী হবে) আমাকে ঐ রুম থেকে বের করে আনেন। ইমাম সাহেব তখন ভিতরেই প্রবেশ করেননি। পরে বাইরে আসলে সেখানে থাকা অবস্থায় ইমাম সাহেব প্রক্টর স্যারকে কল দেন। সেখানে প্রক্টর স্যারের সঙ্গে মোবাইলে আমার কথা হয়। প্রক্টর স্যার আমাকে বলেন, তুমি তোমার হলের হাউজ টিউটরকে কল দাও। পরবর্তীতে আমি আমার হাউজ টিউটরকে কল দিলে উনি বলেন, আচ্ছা তুমি হলে চলে আস।

বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি নিজেও গতরাতে নিউজ দেখেছি। একটা সিম্পল ইস্যুকে অনেক বড় করে ফেলা হয়েছে। ঐখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। ইমাম সাহেবের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা।

এর আগে জবির প্রক্টর অভিযোগ করেন, তিনি ঘটনাটি জানার পরে নাকি সেখানে একজন সহকারী প্রক্টর পাঠিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে মেয়েটি বলেন, আমাকে এমন কোনো বিষয়ে নিশ্চিত করা হয়নি যে সেখানে সহকারী প্রক্টর আসছেন। আমি সরাসরি হলে চলে গেছি। এছাড়া প্রক্টর অফিস থেকে অভিযোগ তোলা হয় যে, ইমাম সাহেবকে নাকি ঐ ঘটনা জানার পরে প্রক্টর নিজেই কল দিয়েছিলেন এবং ইমাম নাকি মেয়েটাকে ফোনের ঐ পাশ থেকে কথা শিখিয়ে দিচ্ছিল। এ বিষয়ে মেয়েটি বলেন, ইমাম সাহেব নিজেই প্রক্টরকে কল দিলে আমি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। আর ইমামের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তোলা হচ্ছে সব মিথ্যা বলে জানিয়েছেন ঐ শিক্ষার্থী।

ঐ শিক্ষার্থী আরো বলেন, আমি আসলে গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। মসজিদে পায়ে ব্যাথা করছিল আমার। হটাৎ আমি নিজেও বুঝতে পারিনি যে আমি মসজিদে ঘুমিয়ে পড়েছি।

এছাড়াও, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছাত্রীদের নামাজ পড়ার স্থানে ছাত্রী ঘুমিয়ে থাকা ও সংশ্লিষ্টদের কারণ বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর খালিদ সাইফুল্লাহকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভীন আক্তার জেমী, আইসিটি সেলের পরিচালক ড. আমিনুল ইসলাম ও একাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এএনএম আসাদুজ্জামান ফকিরকে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক আইনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বে নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কমিটি দ্রুত বিস্তারিত বিষয়টি তুলে আনবে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি তদন্তের জন্য দাফতরিক চিঠি পেয়েছি। এখন আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদন তৈরি করব। তবে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়নি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ভেতরে অনুষ্ঠিত এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে জবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম পুরুষদের নামাযের অংশে অন্যধর্মালম্বী শিক্ষকদের নিয়ে পুরুষদের সামনে বক্তৃতা পেশ করেন। বক্তব্য দেওয়ার আগে উপাচার্যকে মসজিদে ভেতরে এভাবে বক্তব্য না দিতে অনুরোধ জানান সেই ইমাম। আর এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অনেকেই এই ঘটনায় ইমামের ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন