ক্যালগারি প্রবাসীদের নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশ সেন্টার

  12-11-2022 10:28AM


পিএনএস ডেস্ক: একদিকে রেকর্ড সংখ্যক অভিবাসন আর অন্যদিকে বিশ্বের সেরা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকারী কানাডা আয়তনের দিক থেকে ৯ হাজার ৯ শ' ৮৫ মিলিয়ন কিলোমিটার হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৩৮ মিলিয়ন। যার রয়েছে ১০টি প্রভিন্স এবং ৩টি টেরিটোরিজ। ১৯৭১ সালে কানাডাই বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ঘোষণা দেয় মাল্টিকালচারিজমের, যার মূলমন্ত্র হলো সকল নাগরিকের থাকবে সমান অধিকার ও দায়িত্ব।

যার ফলস্বরূপ দেশটির জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ১৮ মিলিয়নের বেশি লোক অভিবাসী হয়ে দেশটিতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। কানাডা শান্তি রক্ষায় সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কানাডাবাসী ভদ্র জাতি হিসেবে পরিচিত। কানাডার ইমিগ্রেশন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় তিন লাখেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী পাড়ি দেয় কানাডায়।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কানাডার বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রক্রিয়া, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবনের নিরাপত্তা, স্থিতিশীল অর্থনীতি, শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থা কারণে একটি ব্যতিক্রমধর্মী দেশ হিসেবে বিশ্বের সকলের কাছে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাঙালিরা এদেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। যার মধ্যে অন্যতম আলবার্টার ক্যালগেরি শহর।

বরফাচ্ছন্ন কানাডার বেশিরভাগ সময়ই আলবার্টার ক্যালগারি শহর বরফে আচ্ছাদিত থাকে। বৈরী আবহাওয়া আর প্রকৃতির প্রতিকূলতার মাঝেও শহরের প্রবাসী জ্ঞানী, গুণী সংস্কৃতিমনা আর স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে পারস্পরিক সহযোগিতা আর সহমর্মিতার বন্ধনে শহরটি সারা বছরই থাকে সরব। অন্যদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর বাসের উপযোগী শহরগুলির মধ্যে ক্যালগারি সারাবিশ্বের বিভিন্ন শহরের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে।

সম্প্রতি ক্যালগারি শহরে প্রবাসী বাঙালিদের প্রাণের সংগঠন বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যালগেরির নির্বাচন সম্পন্ন হলো। প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়া কে উপেক্ষা করে প্রবাসীরা সারাদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পছন্দের প্যানেল কে বেছে নেন। নতুন কমিটির কাছে সাধারণ ভোটারদের যেমন রয়েছে প্রত্যাশা তেমনি রয়েছে বাস্তবায়নের অপেক্ষার পালা। আগামী ৩ ডিসেম্বর নতুন কমিটি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

বাংলার হেমন্ত যেন ঋতু বৈচিত্রের এক অপার বিস্ময়। বাংলার ঘাটে প্রান্তে এই ঋতুরানী এখন তার আপন মহিমায় ভাসমান। ঝরে যাওয়া গাছের পাতা, নীল আকাশ, শুভ্র মেঘের সারি আর শিউলি শেফালী ভোরের শিশিরে স্নাত হয়ে ঘাসের ওপর বিছিয়ে থাকা ফুলের যেন বিনম্র অঞ্জলী। দূর প্রবাসে বসে এসব স্মৃতি মনে হতেই চোখে ভেসে ওঠে বাংলায় এখন হেমন্ত।

ঋতু বৈচিত্রের হেমন্তে শাপলা শালুকের ফুটে ওঠা, কাশফুল, সাথে মেঘ আর রোদের লুকোচুরির মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রকৃতি যখন উন্মাতাল, তখন কানাডার চিত্র পুরোই ভিন্ন।

বছরের প্রায় আট মাসই বরফাচ্ছাদিত থাকলেও লোকজ ভাবনা, বাংলার প্রকৃতির ঐতিহ্য ও আনুষ্ঠানিকতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে যে সংগঠনটি হৃদয় মনকে ভরে তুলে প্রবাসী জীবনের আনন্দ জয়গানে সেটিই "বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগারি"।

সংগঠনটি নতুন প্রজন্মের কাছে বছরের শুরু থেকেই নানা মাত্রিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে আবহমান বাংলার কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতীয় সত্ত্বাকে তুলে ধরে। এরমধ্যে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলি যথাযোগ্য মর্যাদা ও গুরুত্বের সাথে পালিত হয়।

উল্লেখ্য, গত চার দশক আগে কিছু বাঙালির উদ্যোগে গঠিত হয় বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগারি। তৎকালীন প্রবাসীরা উপলব্ধি করেছিলেন যে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়, সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং কমিউনিটির উন্নয়নে কমিটির কোন বিকল্প নেই। সেই থেকে শুরু হয়ে আজ অবধি সংগঠনটি প্রবাসীদের উন্নয়নে একের পর এক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর তারই ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ কানাডা অ্যাসোসিয়েশন নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি করেছে নিজস্ব ভবন 'বাংলাদেশ সেন্টার' যা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইতিহাসে একটি অন্যতম দৃষ্টান্ত।

বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগারি'র সভাপতি কয়েস চৌধুরী জানান, আমাদের উদ্দেশ্য সবাই কে নিয়ে একসাথে কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করা, যা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। শুধু তাই নয়, প্রবাসের মাটিতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অফ ক্যালগারি'র সাধারণ সম্পাদক শুভ্র দাস শুভ্র জানান, বিদেশ বিভূঁইয়ে এখানে আমরা সবাই ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে একে অপরের ভাই, আত্মার আত্মীয়। আমরা বিদেশের মাটিতে নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের জাতীয় সত্তাকে তুলে ধরার মাধ্যমে নিজের দেশকে তুলে ধরতে চাই। দেশ আর পতাকার মান সমুন্নত রাখতে চাই।

সহ-সভাপতি কাজী জুনায়েদ হোসেন জানান, আমরা প্রবাসীরা গর্বিত যে, পূর্বের মতো এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের বাংলাদেশের কৃষ্টি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চর্চা অব্যাহত রাখবো।

সহ-সভাপতি ইকবাল রহমান জানান, সংগঠনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা অভিবাসীদের চাকরি পেতে সহযোগিতা করা এবং নতুন পড়তে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসাও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।

কলামিস্ট মোঃ মাহমুদ হাসান জানান, প্রবীণের অভিজ্ঞতা আর নবীনের তারুণ্য ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগারি কমিউনিটির উন্নয়নে সহনশীলতা ও সহমর্মিতা নিয়ে কাজ করবেন, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

ভাদ্র আশ্বিনের পাকা তাল আর তালের সাথে আমন ধানের পিঠা পায়েস। গাঁয়ের বধূর কাঁচা ঘরে ঘোমটা দিয়ে মাটির লেপন আর হেমন্তের আবাহনে বাংলাদেশের উৎসব আয়োজনের যে আমেজ, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন তাদের পিঠা উৎসব-আয়োজন আর বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মানচিত্র আর পতাকার সম্মান সমুন্নত রাখবে নতুন কমিটির কাছে এমনটাই প্রত্যাশা ক্যালগারিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন