কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত

  23-02-2023 12:09PM



পিএনএস ডেস্ক: কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নোভা স্কসিয়া (বিডিক্যান্স)-এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সেখানকার কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের উপস্থিতিতে দিবসটি পালিত হয়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পৃথিবীর ইতিহাসে সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য একটি গৌরবময় দিন, যা এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিল- ভাষা আন্দোলনের আলোকচিত্র প্রদর্শনী, অস্থায়ী শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি, শিশু ও বড়দের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ভাষা মেলা আয়োজিত হয়। বিভিন্ন ভাষাভাষীদের স্টল ঘুরে উপস্থিত সবাই বিভিন্ন ভাষার সাথে পরিচিত হয়। তাদের ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানে। তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত হয়। সবচেয়ে গৌরবময় ছিল বাংলা ভাষার স্টল। এখানে বিভিন্ন দেশের মানুষ উপস্থিত ছিল। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য সম্পর্কে জেনে অনেক বিদেশি হতবাক হয়ে যান।

পৃথিবীর সকল জাতি ও মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন স্বরূপ মিকম্যাক অধিবাসীদের আবাস-স্বীকৃতি দেওয়া হয় বিডিক্যান্স এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে। এরপর বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য শহীদ মিনারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। উপস্থিত সকলেই বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এই অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে বিডিক্যান্সকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি অভিনন্দনপত্র পাঠান। নোভা স্কসিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর্থার জে লেব্লাঙ্ক, ওএনএস, কেসি (নোভা স্কোসিয়ার সর্বোচ্চ র্যাং কিং কর্মকর্তা) এবং মিসেস প্যাটসি লেব্ল্যাঙ্ক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর্থার জে লেব্লাঙ্ক ও হ্যলিফ্যাক্সের এমপি অ্যান্ডি ফ্যিল্মোর অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে তাদের বক্তব্য রাখেন। নোভা স্কসিয়ার প্রিমিয়ার টম হিউস্টনের পক্ষ থেকে মন্ত্রী বারবারা অ্যাডামস এবং মেয়র মাইক স্যাভেজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।


অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ।

নোভা স্কসিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর আর্থার জে লেব্লাঙ্ক ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

অনুষ্ঠানে মাহবুবুল আলমের লেখা কবিতা “আমি বিচার চাইতে এসেছি” আবৃতি করেন মাহবুবুর রহমান। আবৃতির সময় উপস্থিত সবাই ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ উপলদ্ধি করে। অনুষ্ঠানে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র “কোন এক মাকে” কবিতা আবৃতি করেন আবজাল হোসাইন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের পরিবেশনায় সকলেই অভিভূত হন। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন দীপন্বীতা দে, সৈকত ও নবনীতা, জুলেখা নুসরাত এবং আরিয়ান।

বিডিক্যান্স এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র ‘স্পিকিং হোম’ দেখানো হয় অনুষ্ঠানে।

একুশ কেবল শোক নয়। শক্তি এবং অর্জনেরও একটি দিন। একুশের অন্যতম মৌলিক বিষয় ছিল একটি অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য। শতশত বাংলাদেশির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বয়ে আনে এক প্রাণচঞ্চল পরিবেশ।

ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আত্মিক ও প্রীতিময় হতে পারে তাও বুঝিয়ে দিল হালিফাক্স এর প্রবাসী বাংলাদেশিরা। মানুষের সম্প্রীতি আর ভালোবাসার বাঁধনকে আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যয় নিয়ে, পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন জাতিসত্তার মাতৃভাষা নিয়ে নতুন সম্ভাবনার উৎস হয়ে উঠতে পারে এই দিবসটি, এই প্রত্যাশায় শেষ হয় ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা।



পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন