কাশ্মীরে হাতে অস্ত্র তুলে নিচ্ছে স্থানীয়রাই

  05-08-2021 01:19PM

পিএনএস ডেস্ক : ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ভারতশাসিত কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা বিলোপ করে রাজ্যটিকে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করার পর দুই বছর কেটে গেছে। বিজেপি থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তি দেখিয়েছিলেন- বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করতে এটার প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দুই বছর পরেও নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত স্থানীয়দের এবং বেসামরিক মানুষকে এখনো সন্দেহভাজন জঙ্গিরা লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে।

দিল্লিতে কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘তারা এদের বলছে পুলিশের চর বা পুলিশের সহযোগী। স্থানীয় এই ব্যক্তিরা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাই তাদের টার্গেট। তারা সবসময়ই ঝুঁকিতে এবং এর ফলে প্রথম টার্গেট তারাই।’

কাশ্মীরে এ বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৫ জন নিরাপত্তা কর্মী এবং ১৯ জন বেসামরিক মানুষ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, কাশ্মীরে ১৯৯০ এর দশকে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার ৫৪ জন বেসামরিক মানুষ এবং ৫ হাজার ২৯৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয় এর থেকে অনেক বেশি।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরে ১৯৮৯ সাল থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দিল্লির বিরুদ্ধে তাদের সহিংস আন্দোলন শুরু করে।

পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের এবং এই ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে দুটি দেশের মধ্যে তিনবার যুদ্ধও হয়েছে।

ভারত কাশ্মীরে অশান্তি উস্কে দেওয়ার জন্য বরাবরই পাকিস্তানকে দায়ী করলেও পাকিস্তান এই অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করেছে।

কাশ্মীরের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলছে, কাশ্মীর উপত্যকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জঙ্গি পাঠানোর যে অভিযোগ ছিল, সীমান্ত সংঘাত বন্ধে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর থেকে সেটা কমে গেছে, কিন্তু সহিংসতা থামেনি।

জুন মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে কাশ্মীর পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ভিজয় কুমার বলেন, ‘গত কয়েক দিনে টার্গেট করা হয়েছে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষ ও পুলিশদের, যারা ছুটিতে রয়েছেন। মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় তাদের টার্গেট করা হচ্ছে।’

সরকার কাশ্মীর এলাকার আংশিক-স্বায়ত্তশাসনের সাংবিধানিক অধিকার বিলোপ করার পর স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাকামীদের মৃত্যুর হার খুব বেশি বেড়ে গেছে বলে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে।

গত কয়েক মাসে সশস্ত্র বাহিনী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা খুবই বেড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে এ ধরনের লড়াইয়ে এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

এদের মধ্যে ৮২ জনই স্থানীয় জঙ্গি এবং এদের মধ্যে এমনকি ১৪ বছর বয়সীরাও আছে।

জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে কেউ কেউ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছিল মৃত্যুর মাত্র তিন দিন আগে।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালে জম্মু ও কাশ্মীরে ২০৩ জন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৬৬ জনই স্থানীয়। ২০১৯ সালে হত্যা করা হয় ১৫২ জঙ্গিকে, যাদের মধ্যে ১২০ জনই ছিল স্থানীয় কাশ্মীরি।

ঊর্ধ্বতন একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, কাশ্মীরে এই মুহূর্তে সক্রিয় জঙ্গির সংখ্যা ২০০ এর বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ৮০ জন বিদেশি এবং ১২০ জনের বেশি স্থানীয় কাশ্মীরি।

নাম না প্রকাশ করে তিনি বলেন, কাশ্মীরে সক্রিয় জঙ্গিদের তালিকায় এ বছর বিদেশি কোনো জঙ্গির যোগদানের নজির নেই। যেসব বিদেশি জঙ্গি সেখানে সক্রিয় রয়েছে, তারা আগে থেকেই সেখানে তৎপর বলে ধারণা করা হচ্ছে। বরং এখন প্রতিদিন স্থানীয়রা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীতে যোগ দিচ্ছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৭৬ জন কাশ্মীরি হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। এই সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলো আগের বছরগুলোর তথ্য উপাত্তের সঙ্গে তুলনা করে বলছে, কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতা কমেছে। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু মনে করছেন, কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপে স্থানীয়দের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

দিল্লি-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অজয় সাহনি মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির বিরোধিতাই বেশি সংখ্যায় স্থানীয় কাশ্মীরিদের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দলে যোগদানের কারণ হতে পারে।

পিএনএস/এসআইআর

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন